ভালোবাসলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে
ভালোবাসলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে
হাতের মুঠোয় পেতে ইচ্ছে করে চাঁদ।
তুমি একে কী বলবে সোনা?
বলবে কাম? বলবে প্রেম আঙুলে যায় না গোণা?
আমি তো বুঝি না অতোসব
মানবিক ঠোঁটে চাই অপার্থিব প্রেমের উৎসব
মুহুর্মুহু বজ্রপাত ঘটুক শরীরে
ভালোবাসলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে।
দেহঘরে স্মৃতির বজ্রপাত
ঘড়ির কাটায় থমকে আছে রাত
তক্ষক ডাকে দূর অতীতের বনে
বুকের মধ্যে মায়াবতী নদী
কুলুকুলু বয় সংগোপনে
তোমার চুলে নেমেছে কি শ্রাবণ
মুষলধারায় অঝোর বারিপাত?
দূরে থেকেও যাচ্ছি ভিজে ভীষণ
দেহঘরে স্মৃতির বজ্রপাত।
মায়া
মনাকাশে মেঘ জমেছে, ময়ূর নাচে কই?
মুহুর্মুহু বজ্রপাতে বাঘ ডাকছে অই।
বুকের ভেতর অচল পয়সা, লেবেঞ্চুশের ঘ্রাণ
নৌকো ডোবায় মাঝ-নদীতে। হয় কি স্মৃতি ম্লান?
কক্ষনো না, কক্ষনো না। স্মৃতি এমন মায়া
এক জীবনে সাত জীবনের ফেলে রাখে ছায়া
রাজকুমারীর জন্য পদ্য
তোমার অনুপস্থিতিতে কেমন এলোমেলো হয়ে যাই। রুক্ষ-সুক্ষ হয়ে যায় চুল, ধুলোমাখা দাড়িতে ঢাকা পড়ে চিবুকের দাগ। বিনোদন পাতা আর টয়লেট পেপারে কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না তেমন। রবীন্দ্রনাথ- অসীম সাহা গুলিয়ে ফেলি; ক্রমাগত ভুল হতে থাকে, ভুলে যাই ১ + ১ = ২। তুমি না থাকলে ঝরে যাওয়া হলুদ পাতায় শিশিরের বদলে কেবল কাদামাটি দেখি বিবর্ণ ঘাসে শুয়ে থাকি শুকনো, বিমর্ষ, ম্লান। ডাকপিয়ন আর আসে না নীলখাম নিয়ে। পাওনাদার হকার দরোজার কড়া নাড়তে নাড়তে ভেঙ্গে ফেলে প্রায়। কিছুক্ষণ পর পর ডেকে উঠে মন্টুদের বাঘা কুকুর। প্রজাপতির বদলে আমার চারপাশে কিলবিল করতে থাকে শুঁয়োপোকার দল। বুঝি না কেন তুমি না থাকলে স্নানের সময় পানি বন্ধ হয়ে যায়, হাতের কাছের জিনিস দৌড়ে পালায়; আধখানা চাঁদ দাঁত কেলিয়ে হাসে টিটকারি দেয়। বইয়ে জমে থাকা ধুলোর স্তুপ মুছতে মুছতে শার্ট নোংরা হয়ে যায়, সর্দি লাগে, হাঁচি দেই বারবার। ঘর থেকে বের হবার সময় সময় মনে হয় কী যেন ফেলে গেলাম, পকেটে কী যেন কী নাই। জীবনের সব রঙ মুছে যায় তুমি না থাকলে সত্যি সত্যি আমি কেমন সাদাকালো হয়ে যাই।
স্মৃতির ডায়েরি ০১
আজও স্বপ্নে আমাকে শৈশবের মায়াবতী নদী বুকের কাঁচলি খুলে ডাকে। বলে, চলে এসো আকাশের তারারা যখন বাংলা টেনে হবে চুর। এমন রাতে কবিতায় উঠে আসে বিথীদের বাড়ি। প্রেমে যা নজদ বন, তা-ই কাশীপুর।
এখনও পঞ্চবটী থেকে ট্রেনে ওঠে জুলিয়েট। মধ্যরাতে হুইসেল শুনে জানালায় চোখ রাখে লিজা ফেরদৌসী। এসবই বিশদে জানে বড়– চন্ডীদাস। কোনো এক ঘোরলাগা দুপুরে এ সুর বাজাবে তার কীর্তনের বাঁশী।
পূর্বাপর এইসব স্মৃতি আমি লিখে রাখি সমকালের খাতায়। মহাকাল যতটা না ইতিহাসে বাঁচে, তারচেয়ে বেশি বাঁচে তরুণীর চিবুকের নীলাভ ছায়ায়\
স্মৃতির ডায়েরি ০২
আজও আষাঢ় নামে মনের জমিনে। স্বাদু জলে ভরে ওঠে বিথীদের ভাঙাছাদ। আজ সেই কিশোরী নেই, লুকোচুরিও নেই, তবু প্যান্টের পকেট থেকে খুচরো পয়সার সাথে উঠে আসে প্রণয়ের চাঁদ।
তখন আমার ভাঙবার কাল। ভাঙতে ভাঙতে গড়ে উঠছে অবয়ব। স্তব্ধতা তাই মুখর বড়, তুমি ছিলে কলতানের উৎসব। আজ মুঠো ভর্তি বালক-সংশয় নেই। তুমি শূন্য সাজানো বাগানে ফুলে ফুলে ছড়িয়ে পড়ে বুনো বৃষ্টির ঘ্রাণ। সকালের করিডোর পায় না তোমাকে আর। আমাদের প্রেম শুধু শূন্যতা পুরাণ।
মেঘে মেঘে জমেছে অনেক কান্না। চিলতে অবসরে আকাশ কুসুমে লিখি তোমার মায়াবী ঋণ। ফেরে না সে জীবনানন্দীয় বিকেল, বিষাদ সন্ধ্যা। ঢেউয়ে ঢেউয়ে ফেরে মায়াবতী, হাতে নিয়ে স্মৃতিগন্ধা দিন।