কবি : রাজন্য রুহানি
❑খাদ্য আর খাদকের হাটে
বৃত্তের উঠোন জুড়ে পেট ধরে রাখে দা ও কুমড়ার নীতি।
খাদ্য আর খাদকের হাটে
জন্মান্ধ স্তুতিপাঠক, সেও জানে—
তেলের এতটা গুণ, মর্দনের সাথে সাথে নুয়ে যায় শির।
বন্দনা মূলত ওই তেলবাজির নমুনাবিন্দু
যাকে কেন্দ্র করে বাড়ে
বৃত্তের পরিধি
স্বার্থের আকাশে তুমি-আমি চিল, ছুঁ মারার বিদ্যা।
মূল্যমান এক
তবু টসের মুদ্রায় 'কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ'।
❑ বাতাস তাড়িত শোক
চলে যাও বীর্যের পুরুষ, নিজের ছায়াটা কুটে মাছভাজা খাও, পথে যেতে যেতে এমন ভাবের গান গাও যেন তুমি আলাভোলা লোক, আলুর মতন।
সুনসান নীরবতা মেখে ঘুমদেশে যাও বুদ্ধিবেশ্যাজীবী, গোপন লেজটা দিয়ে কোমর বেঁধেছ এই জেনে, প্রদীপ্ত রক্তবিনাশী চণ্ডালের কেনা ফলটিই তুমি পাবে।
ছাগলের তৃতীয় ছানার মতো লাফালাফি করা নপুংসক, যাদের ঘৃণাও নেই হৃদয়ের খাপে, বাতাস তাড়িত শোকে যারা শ্লেটে মুছে চিলকাল, পথান্ধ কূটনীতির তারাই আগাছা!
সাতকলা বাদুড়ের পেটে যেতে যেতে ষোলকলা শেষ হয় মিনারের।
❑হেমন্ত ও বর্ণচোর খিদে
হেমন্তের ধান উড়ে, ঝাঁকের শালিক
কৃষাণির পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করে
খোঁটে ঋতুর কবিতা, পেটের চিন্তায়
গরিবেরা ঢাকা যায়, পিছনে দালাল।
হাইহিলের সবিতা গড়ে তোলে পুঁজি।
যে পরিবার পিছলে গেছে ঢালুপথে
হাওড়ের জোঁকেরা খায় সম্ভ্রম তাদের।
যত সাধ নিয়ে ওড়ে সংখ্যালঘু জামা,
লুটেরার হাতে ঘোরে সর্বনাশা দড়ি।
ভূগোলে জন্মের দায়ে ক্ষুধাতুরা ঝুলে।
হেমন্তের ধানক্ষেতে প্রচুর ইঁদুর,
পালানের ছাগলেরা সুযোগেই থাকে।
পাখির কনসার্টেও হাঁটে বর্গাচাষী
চঞ্চুর ঠোকরে শোনে সুখের বিবাদ।
ঘোড়দৌড়ে ভরে ওঠে মোড়লসিন্দুক।
❑প্রেমের অম্বর
তোমার নামের ঘরে চাতকের পীড়া।
বহুপথ হেঁটে এসে ক্লান্ত মুসাফির
জলনাচা নদে আঁকে ডাহুকের ক্রীড়া,
যে-মন স্মৃতির ফাঁদে একান্ত সুধীর
তার কাছে জমা আছে ভাঙা এক নীড়।
জপতপে মশগুল পাগলের শিরা
লোহিত কণিকা যার চলনে অস্থির,
পড়শি দেখার সাধে অমন সুফিরা।
ঘরহীন ঘর এক সুগন্ধী বাগান
তোমার ভেতর তার নামের আকর।
লৌকিক বাসনা ছেড়ে যে আত্মসন্ধান,
আসলে সে তুমিময়, নারী কিংবা নর।
পাখিদের বুলি শোনে যারা ভাবে গান,
তাদের নজরঘেরা প্রেমের অম্বর।
❑মৃত্যুর টঙ্কার
যদি মরে যাই
কোনো ঘাসফুলের বিকেলে
ফড়িংয়ের কাছে বলে দিও এইসব অন্ধকার
পাথরের নিচে চাপা দেয়া বুক এক টিকটিকির ভোজন
মরে যাই যদি
একদিন নক্ষত্রের আলো চোখগেলো পাখির ডানায়
দেখে নিও অন্ধত্বের দেশে রাখালিয়া বাঁশি
সংসারের মঞ্চে কেড়ে নেয়া এক হননের জাদু
বিন্দুবৃত্তে অখিলের পক্ষাঘাত
যাই যদি মরে
বুকের পাঁজর ছুঁয়ে ফুলপাখিদের মেলা বসবে না আর
তোমার উঠোনে কোনোদিন
যেখানে স্বর্গের দূত ওহী এনেছিল
পুলসিরাত পেরিয়ে যাবার অশেষ পথের ইশারা
প্রভুদানবের হৃদস্পন্দ মুছে নির্বিঘ্ন শান্তির
❑ মাতাল ডোমের হস্তশিল্প
বুকের বোতাম খোলে ছুঁয়ে দিও হার্টবিট।
হাতের পরশ বোঝে উড়ুক নাহয় জ্যামিতিক দূরত্ব।
এই যে করুণ বাঁশি
এই যে অকালে ঝরেপড়া ফুল
এই যে পা ভেঙে আসা দ্বিধার কবিতা
এই যে তুমুল প্লাবন—
পোস্টমর্টেমে রেখেছি এইসব বিষয়ের নোট।
স্বতঃস্নান করবার আগে একবার পড়ে নিও
বোঁটাঝরা টপটপ কষেরা কাফন,
'আট বছর আগের একদিন' ভেঙে যে পৃথিবী
মুছে যায় পঞ্চমীর চাঁদে—
থ্রিডি মুডে দেখো মাতাল ডোমের হস্তশিল্প।
শেষ করো তেরো নদী পেরুবার কাল,
আমার সমুদ্রডানা।
দূরে কোথাও গোরখোদক
রুজির অপেক্ষা নিয়ে কোদালের কাছে বসা।
পেট তার ঈশ্বর মানছেনা আর।
এই যে হাঁটছে নাটুকে লোবান
এই যে উড়ছে সিংহাসন মঞ্চ ভোগবাদী রাষ্ট্র
এই যে ঝাপসা হচ্ছে দৃষ্টিস্নিগ্ধ স্বাধীন নক্ষত্র...
ছুঁয়ে দাও বিদ্যুতিনী,
হার্টবিট থেমে যাওয়া জরুরি এখন—
কাছে এসে গেছে হাভাতে গোরখোদক।
রুজির অপেক্ষা।
❑ ঈশ্বর ও চেলাচামুণ্ডার নাচ
আমরা তো জানি ঠাকুরঘরের গল্প।
কে খেয়েছে কলা,
ভিড়ে পকেটে কে হাত দেয়?
পর্দার আড়ালে কুশীলব
রোলকল শোনে মঞ্চকে সেলাম করে
অবতীর্ণ হয় যার যার ভূমিকায়,
ক্ল্যাপ ও শিস দেয় যে, সেও বোঝে
দেবতাদের ভোগের পদ।
কুমারপাড়ায় আছে হাড়ির খবর;
কাদা ছেনে গড়ে ওঠা শিল্প।
সব মাথা জোড়া দিলে সমাবেশ।
সব মাথা জোড়া দিলে শয়তানি।
চোরের মায়ের বড় গলা নিয়ে
জ্বলে নীললাল বাতি,
মাসতুতো ভাই
ঘটা করে মিষ্টি আনলে আমরা বুঝি—
কোথায় গড়েছে জল ও কোথায় শুভঙ্কর!
অথচ পাটির চেয়ে হাড়িকাঠে আসক্ত চেতনা।
ঈশ্বর ঠিকই জানে—
লাভের মিঠাই যাবে পিপীলিকার বাসায়।