রাজন্য রুহানি এর গুচ্ছকবিতা
রাজন্য রুহানি এর গুচ্ছকবিতা
❑ অসুখরতন
ইচ্ছে করেই অসুখ পুষি
বানে ভাসা ঘরের মতন।
নদীপাড়ের মানুষগুলো
আর্তি রেখে হাতের তেলোয়
যেমন শ্বাসে আকাশ আঁকে,
তেমন আমার অসুখেরা।
দীনভিখারির চ্যাপ্টাঝুলি
ভরে ওঠে জনের দয়ায়,
আমার বুকের শূন্যগৃহ
ভরিয়েছে অসুখরতন।
দেখতে আমায় নাইবা এলে,
অসুখেরাই দেখবে তোমায়।
❑ ভালোবাসার কাঙাল
খাদ্যের অভাবে হাত পাততে পারি নি।
অর্থকষ্টে ব্যাংক লুট করতে পারি নি।
ভালোবাসার অভাবে আমি বারবার ভিখিরি হয়েছি,
দুয়ারে দুয়ারে পেতেছি রোদনভরা হাত।
যাও যাও, ভিখ নেই, দূর হঠ্, শোনে
প্রচণ্ড আক্রোশে ভালোবাসা লুট করতে গিয়েও
শেষমেশ ভিখিরি হয়েছি।
আমি তো জেনেছি—
জোসনায় স্নান সেরে নিলেই থাকে না রোদের অসুখ;
প্রকৃত হত্যার পর আউলিয়া হয় নিজাম ডাকাত।
কোনো অভাবেই পথে নামতে পারি না।
কিন্তু ভালোবাসার অভাবে আমি কুকুরের মতো লেজ নাড়ি
পথে পথে— দুয়ারে দুয়ারে— প্রভুর সম্মুখে।
যা যা ভাগ্ শোনে তবুও সাষ্টাঙ্গ করি মনের মন্দিরে,
জিকিরে জিকিরে ফানা করি শারীরিক প্রেম।
কে না জানে, মনের ঘা সারলেই আসে বসন্ত শরীরে।

❑ চতুর্দিকে ইঁদুর কেবল
ইঁদুর ধরেছে চারপাশে। একেকটা গর্তে বিষবড়ি দিলে খুঁড়ছে অন্যত্র। খুঁড়ছে গো চামে, বামে কিংবা ডানে, পুবে ও পশ্চিমে। তীব্র এই খোঁড়াখুঁড়ি। যেগুলোকে পোষা বিড়াল ভেবেছি, আমারই মতিভ্রম, ওরাও ইঁদুর ছিল, অনেক আগে থেকেই!
ইঁদুর মারতে ফাটক কেনার যুক্তি দেয় বহুজাতিক ঈশ্বর। ফাটক কিনতে আর ইঁদুর মারার প্রশিক্ষণ দিতে ভিটে ছাড়া উন্নয়নের সবটুকুই গেলো। ঋণ করে করে তবু ঠাটের পোশাক রেখেছি শরীরে। যেসব রাখাল নিয়োগ দিয়েছি ফাটক পাতার কাজে, চোখ মেলে দেখি, তলে তলে তারাও ইঁদুর হয়ে গেছে।
ঘরের ইঁদুর, পথের ইঁদুর, মনের ইঁদুর, জ্ঞানের ইঁদুর, চোখের ইঁদুর, মুখের ইঁদুর... ইঁদুরে ইঁদুরে সয়লাব। মহামারি। খালি কাটে। ধন কাটে, মন কাটে, জন কাটে, মানসম্মান সবই কাটে। ওরা এখন ভিটেমাটির চারপাশে।
নেংটি খোয়ানোর আগে, হাতেপায়ে ধরি, দয়া করো প্রভু, মরে গিয়ে যেন বেঁচে যাই পুরোপুরি।

❑ উপকূলের ভুক্তভোগী
তোমাকে দেখার পর আর সমুদ্র দেখিনি
জোয়ার ও ভাটা, ঘূর্ণি আর নিম্নচাপ
উপকূলের বাসিন্দা হয়ে প্রত্যক্ষ করছি নিয়মিত
মাঝেমধ্যে সমুদ্রে জাহাজ ডোবে
নাবিকেরা দিকভ্রান্ত হয়
দক্ষ ডুবুরিরা তলদেশ থেকে তুলে আনে মুক্তো
কী এক সমুদ্র তুমি, জাহাজ নাবিক জলচর ও ডুবুরি
একসাথে বুকে ধরো!
ইঙ্গিতে ইঙ্গিতে রাখো সম্ভাবনা এবং অনিবার্য মৃত্যু;
এ রহস্য ঊর্মি হলে মুগ্ধ পর্যটক
জটিল সুন্দর ঘিরে জীবন খরচ করে যায়!
সমুদ্র দেখতে অবিকল তোমার মতন
আমি না-ডুবুরি, নাবিকও নই, না-জলচর, না-পর্যটক
কেবল উপকূলের ভুক্তভোগী হয়ে দেখছি সমস্ত লীলা...

❑ শেয়াল ও ছায়া
একটা ছায়াকে দীর্ঘ হতে দেখে ঠোকর মারল রাজহাঁস। গলায় বিঁধল যমকাঁটা।
যে বকটা ছুটে এলো, তার শর্ত মেনে নিলে জলাশয় বেদখল। সহচর পাখিদের মধ্যে মাছরাঙা ভেটো দিল। সে ছায়ার কাছে প্রার্থনা করলো মহাভোজে বক এবং ডাহুকরে বলি দিতে। রাজহাঁস প্যাঁকপ্যাঁক করতে থাকল কিন্তু যে শব্দ বের হয়ে এলো তা চিঁউচিঁউ।
ছায়াটা আগুন নিয়ে ফিরে এলো হাঁসকে রান্নার জন্য, তার আগেই শেয়াল উপস্থিত, সে-ই ছায়াকে টোপ হতে শিখিয়েছিল।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান