শুন্যে আবির্ভূত কবি রাজীব আর্জুনির কবিতায়,শব্দরা অর্থ-নিরর্থের প্রতিভাসে এক ভিন্ন জগতের পরিভ্রমণ এনে দেয় যেনো, প্রকৃত স্বভাবে তাঁর কবিতা নিখুঁত প্রতিক স্বভাবী এক সঞ্চার, যেখানে পাঠককেও, যেন চান তিনি খুব সক্রিয় প্রজ্ঞায় শামিল থাকুক।পাশ্চাত্যের এজরা পাউন্ডের কাব্য দর্শনের মতোই যেন একইরুপ মানসিকতা পোষন করেন কবি রাজীব আর্জুনিও, এবং সেমতেই তিনিও চান তাঁর পাঠক নিছকই কোনো আয়েশী সত্তাটা না বরং কবির খুব সমমেধা ধারণ করে কবিতা উন্মোচনের পথে আসুক।
রাজীব আর্জুনির ইতোমধ্যে বেরুনো প্রত্যেকটা কাব্যেই অব্যাহত আছে এই প্রচেষ্টার ছাপ, জলের মৈনাক, থেকে শুরু করে সর্বশেষ টাকি মাছের কলিংবেল প্রভৃতি প্রত্যেকটা কাব্যেই তাঁর অভিনব ডিকশন, মেটাফোর, এবং সর্বোপরি বহুমাত্রিক এক নিরর্থকতার ক্যানভাসে চর্চাটি উত্তর প্রজন্মের বাংলা কবিতার ভান্ডারকেই যেনো আরও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে গেছে, এবং খুব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকেই উপজীব্য করেই যেন।
বিশেষ করে তাঁর কবিতা যেনো পূর্বসুরীদের সকল দেনা ও দায়ের বাইরে এক অতি নিজস্বতার বয়ান যেখানে প্রায়শই তিনি ননসেন্স সিমিলির ছলে বৃহৎ সেন্সের ফয়সালা করতে চান হামেশাই, এবং প্রায়শই কর্কশ ক্লীবতাকে প্রাণের নিরিখে সজীবে প্রতিস্থাপিত করতে চান সুন্দরে, খুব নিহিলিস্টের মতো করে প্রচলিত কাব্য জগতকে ভাঙা ও নির্মাণের তাগাদায়। এক্ষেত্রে রাজীব আর্জুনি যেন এক ভিন্ন নন্দনতত্ত্বরই পূজারী, প্রথাগত কাব্যগুণের ধ্বজা বিনাশী একটা স্বর ও প্রজ্ঞা হিসেবেই জারি আছেন কবিতায় |
-নীহার লিখন
বুন্টি লাল
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে থাকে অনেকেই ;
চুল আঁচড়ে অফিসে যায়,
গাড়ি চালিয়ে নাচায় শহর ; নাচেও
সুদক্ষ গাড়িচালক!
বন্দোবস্ত এক রকম হয়েই যায় ;
ফিশ ফ্রাইগুলো কাঁটা চামচে এমন
ভাবে লেপ্টে থাকে ঃ
আস্তো বুন্টি লাল !
আস্তো পাসওয়ার্ড!
রেড ড্রাগনের লাল পানি
বুন্টি লাল!
রঙ ও কৌতুক
লাল একটি গোপন রঙ ও কৌতুক!
রেলওয়ে স্টেশন, পেয়ারি লাল ও
কৌতুকের হাসি নিয়ে
মানুষকে পাঠিয়ে দেয় ইমোজি ;
ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করে মানুষ
তাই অনেকেই পাগল বলে ; পাগল
ছিল আমার বাড়ির
পুকুর পাড়ে হেলান
দেয়া দু'টি গাছ ;
বেল গাছ ও জারুল গাছ ;
এগুলোকে
আমি কৌতুক বলি ; কৌতুক
দেখবেন
যখন আপনি শুয়ে আচমকা উপরের
ফ্যানের দিকে তাকাবেন তখন ;
কৌতুক লাল রঙের অনেক আপন।
লাল রঙ
সবার আপন
আর ভীষণ গোপন।
বক ফুল
অনিবার্য বকফুল নিয়ে ভাবি।
বকফুল একটি বক ধার্মিক
যাঁকে ভালবাসি আমি।
ওর দিকে তাকালেই ছোপ ছোপ
রক্তের দাগ, হাতের ফোসকা
মানুষ ভর্তি শহর দেখি ;
দেখি কফি হাউজটি নীল আলোকের
মধ্যে জ্বলে ;
পোষা কুকুর আলসে প্রিয় টি শার্ট, চকলেট
ভর দুপুরের ছেলে গাইছে গান,সুন্দর
তাই না?
এখন আর নাম মনে থাকে না ;
গতকাল কাদের ভাই এসেই
অফিসে যেতে বলেছিলেন।
বক ফুল আলোহীন ;
শুভ্র চুল
ঘর জুড়ে সুগন্ধির ঢেউ ;
বক ফুল ভালবাসি আমি।
হেঁটে ফেরা
সকালের দিকে হেঁটে ফেরা ভাল।
সকালের বাতাস খুব ভাল ; উত্তম।
সকাল সকাল বাড়ি ফেরা ভাল,
আমি সকালেই বাড়ি ফিরি ;
সকালে রিক্সা কম পাওয়া যায় ;
রিক্সা কমে গেলে কম হয় আওয়াজ ;
আবার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা পুঁজি করে
দাম বাড়িয়ে আগেই আসল বাগিয়ে
নেয় খাজা ডট কম ;
নাইকির জুতা পড়ে
আবার
অনেকেই সকাল হাঁটে ;
হেঁটে ফেরাটাই আসল
বাকি সব উত্তম! উত্তম!
রাজা
প্রায়শই রিকশায় চড়ি আমি।
রিকশায় চড়লেই
অতি আশ্চর্য এক রাজা বনে যাই আমি ;
রিকশায় চড়লেই আমার মাথায়
শুরু হয় অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির ;
তখন অনেক কিছু হয়ে যায় উপেক্ষিত ;
জীবনানন্দ কে মনে হয় দেব শিশু!
লোরকা কে মনে হয় আন্দালুসিয়া থেকে এসেছেন আবার নতুন
কবিতার খোঁজে ;
ভাবি, লোরকা জীবনানন্দ
পাখির কিচিরমিচির এগুলো
যে প্রবাহিত হয় আমার ভেতর
রিকশায় চড়লেই ;
এগুলো আসলে আমার ভেতরে
প্রবাহিত হয়
নাকি সকল মানুষের মাঝে
এরকম প্রবাহিত হয়
পৃথিবীর চোখ ; পুষ্প সকল
চিরকাল ?