কবি রাজেশচন্দ্র দেবনাথ।
জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ ধর্মনগর,ত্রিপুরা।
ত্রিপুরা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১)ছদ্মরঙ (কাব্যগ্রন্থ)
২)আলুথালু রৌদ্রবালিশ (কাব্যগ্রন্থ)
৩)চিতাভস্ম পুরুষ (কাব্যগ্রন্থ)
৪)ফুলদানিতে পুরুষের শ্বাস (কাব্যগ্রন্থ)
৫)চিত্রগুপ্তের গোয়ালঘর (কাব্যগ্রন্থ)
৬)মাকড়সার পাড়া (কাব্যগ্রন্থ)
৭)পুরোনো উল্কার গন্ধ (কাব্যগ্রন্থ)
৮)টাইমিং এক্সপ্রেস (কাব্যগ্রন্থ)
৯)সোনালি ধুলো
( ভারত ও বাংলাদেশের তরুণ কবিদের নির্বাচিত কবিতা সংকলন )
সম্পাদনা- রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ ও নাজমুল হাসান
১০)সুন্দরপুর (ছোটদের গল্প)
১১)অরুণিমা (ছোটদের গল্প)
১২)জীবন যেখানে যেমন (গল্প)
আনারস পাতা
ছুঁয়ে দেখি ভূগোল
ফেরারী আলো বুদবুদ পশ্চিম সুড়ঙ্গে
ভেকধারী মেঘ মৃদু শব্দে
খুঁজে নেয় গল্পের আয়না
নিষেধ শুধু দুঃখ নয়
আনারস পাতায় রোদ মেখে
পাচারে যাবতীয় আনন্দ
প্রশ্রয়
আলোকবর্ষ জুড়ে কর্পোরেট উপাদান
রোজ প্রস্তুতিহীন হাওয়ায়
নেমে আসে চশমা বানরের উৎপাত ।
আনন্দ শেষে শূন্যস্থানে লোক হাসানো প্রশ্রয়
ক্রমশ গোমতীর প্রতি ঢেউয়ে
সরে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনের জট ।
পশ্চিম বেলায় শ্যাওলার জীবাশ্ম
কুলীন শিশির অন্তমিল ভেঙ্গে
হাত বুলায় গদ্যের শিরা উপশিরায়
জীবাশ্ম
স্বপ্নের গতিবেগ কমে এলে
বয়ঃসন্ধি সংসারে পিঁপড়েরা
খুঁটে নেয় আলোর বিবরণ ।
মেঘেদের পাহাড়ে পাল্টে যায় দৃশ্যপট
স্বল্প দৈঘ্যের প্রেম বুনে
শালিক দুটোর জলকেলি সাবান হাওয়ায় ।
জলবিছুটি বুঝি চোখে চোখে
কাটাতারের দুপাশে গাছেদের এজেন্সি
খুঁজে বেড়ায় রামধনুর জীবাশ্ম
পুদিনা স্বর্গ
১
নির্মিত আলোয় গুটিকতক ব্যর্থতা
অব্যাহতি নেই স্বাভাবিক প্রয়োজনে
ফৌত বিদ্যেগুলো লিখে রাখি
কুটিল মেঘে ।
২
ফ্যাচফ্যাচ বেলায় ভূষণ্ডি মনে
সেটে আছে অলৌকিক কলঙ্ক ।
মুখচোরা বৃক্ষটি সাজতে থাকে
ওপাড়ের মাধ্যাকর্ষণ মেখে ।
৩
গ্রাহ্য হয় না সাতসমুদ্র ঘাম
মানবিক বৈঠা টেনে
ঝকঝকে হাতের তালুতে বিজোড় বিজ্ঞপ্তি
সমস্ত দেনা জমতে থাকে চোখে চোখে ।
৪
বিচ্ছেদ শুধু বয়সের ইন্দ্রজাল
ব্রাত্য পাখিরা ব্যালকনিতে
পেতে রাখে মৃত্যু ।
৫
নালায়ক বায়নায় মরচে পড়ছে
পিন্ডারি আদিম স্মৃতি/
ইদানিং গোলাকার পিরিচে/
সারি সারি প্রতারকের উল্লাস ।
৬
প্রতিটি দরজায় আভিনয়
শিরঃপীড়া কয়েক রাতের,
মেয়াদি নয় পুদিনা স্বর্গ ।
হারপিস
১
আকাশের পিঠে রামধনুর হারপিস
মাসকাবারি দৃশ্যগুলো জমাট
খুচরো যৌনতায় ।
২
মাতলামো ধ্বনিতে যান্ত্রিক ত্রুটি
প্রবাসী রাতে মৈথুন কায়দায়
তাকিয়ে অভিমানী চাঁদ ।
সর্ণিমা ও আমার ছেঁড়া স্বপ্নের ছাই
ভালো হতে চাই না
মার চোখে আমি কীটনাশক
আর বাবার চোখে
শতাব্দীর অভিশাপ ।
মগজ আজ উদ্মাদ
বুকের নিলয়ে পরিয়ায়ী অগ্নিকুণ্ড ।
অকালপক্ক ভালবাসার ফুল
শরীর চেটে নিচ্ছে
বর্ষার অহংকার ।
জানো সর্ণিমা
তখন এম এ
ডান হাতে অফিসের ঝাড়ু
বাম হাতে রবীন্দ্র রচনাবলী
মনে প্রেমের বীজ
আর সারা দিনের উপোসি ঠোঁটে
বিট লবণের লিকার চা
আস্বাদ নেই
আমি তো জানি কপালে
ভগবানের রম্য হাসি
কোনো অভিযোগ নয়
আজ গাছের ডালে ডালে লেগে রয়েছে
আমার ছেঁড়া স্বপ্নের ছাই
সরনিমা তোমার শীত ঘুমে
আমার সহস্র কাঁপুনি চুমু
শরীর আর চেতনায়
ক্ষত আদিম বিষ দাঁতের
তখন আমি কবিতা,শব্দের ভরাট যুবক
একনায়কতন্ত্র সংসারে থু থু ছিটিয়েছি
অপবিত্র প্রতিটি সুখে ।
সরনিমা বিশ্ববিদ্যালয় করিডোরে
তখন তুমি এক টুকরো রোদ
সম্পর্কের অভিমানে আমি
বালিশের সহবাস
কেহ জানে না , কেহ জানবে না
আজো আমি পবিত্র অক্ষরে বুনি
সংবাদপত্রের ঘুশখুর মালিকের চোখ
আমি লেখক, আমি সম্পাদক, আমি ক্রোধ
ডিনারের শেষে রাত্রির
অসময়ের যন্ত্রণা
ওঁ শান্তি ! ওঁ শান্তি !
আজ রক্তে জাদুকরী মন্ত্র
নষ্ট গলির গল্প
আর গালে কিশোরীর নরম স্তন
সরনিমা তোমার শ্বাসাঘাত চুলে
জেগেছিল রাতের হাওয়া
নিশ্বাসে ছিল মুক্ত ছন্দ
ঝাঁপসা জ্যোৎস্নায় শ্মশানের চিতায়
ফাটছে আমার অস্থি
গলে পড়ছে দৃষ্টি
বিশ্বাস করো আমি বেঁচে আছি
হাঁ বেঁচে আছি
ছদ্মরঙ নিয়ে চাঁদ গলায়
ঝাপসা জলদাগ হয়ে বেঁচে আছি।
স্ক্রিনশট
কালনডেপার পাতায় ছুঁয়ে আছে রৌদ্রমেঘের স্ক্রিনশট
রাবার পাহাড়ে স্নায়ু বেয়ে
দীর্ঘ প্রতিঘাত আছড়ে পড়ছে
টুপটাপ প্রথায়।
ভোর হলেই
বোতাম টিপে প্রতিটি ইমেজ
তৈরি হচ্ছে প্রচ্ছদের আলপথে
১২ বছরের কালঘুম
মেঘের মুখ খুলে দাও আজ
নেমে আসুক অপমানের ঘাম
১২ বছরের কালঘুম ভাঙিয়ে
লিখে রাখি অসমাপ্ত বদনাম
প্রেমের নামাজে পাপ ছিলনা
ছিলনা রক্তে বর্বর চুম্বন
আদিম বানে কেঁদেছি সারারাত
ধোঁয়ায় উড়িয়ে বৈষ্ণবী মন
ছুঁয়েছি শ্মশান পাড়ায়
ক্ষত বিক্ষত অসতী ঠোঁট
যে আচল ছিলনা আমার
সেই কেড়ে নিল সমস্ত প্রতিশোধ
তুলসি তলায় মাটি ফুঁড়ে
ছিল যত ব্যথা
সযতেœ পুঁতে রেখো
এক জীবনের শেষ কথা
পোষা কবি
ধা র দেনা করে কিছু লাইক
আর কিছু পোষা কবি ফেইসবুকে
অহেতুক চেঁচাবে না আজ।
মদখোরের ভরাট পাতায় জেগে উঠবে না
পেন্ডুলামের উলঙ্গ নিশ্বাস।
শয়তান- ভগবান-কবি তিনে মিলে
অস্তিত্ব ময়দানে খেলায় মদমত্ত
প্রত্যেকেই নিজেদের লেজটুকু পেঁচিয়ে
কুতুকুতুতে গা এলিয়ে প্রতিশব্দ শুনতে চায়।
আলস্য রাতে তিন নারীর আচল ভিজিয়ে ভদকা প্রেমী
কবিতা খাতায় শুকায় ছেড়া কন্ডোম
চুলা
দু একটি শ্মশান ঘাটে ঘুরে এলাম
নিজের জন্য উপযুক্ত চুলা খুঁজে পেলাম না আজো
দাউদাউ আগুনে কিছু শব্দের হাড় চিবিয়ে নেয়
সম্পাদিত জোৎস্নায়
ছাই মাখা মাংস আর কিছু গল্পের ভগ্নাংশ
সাংকেতিক ভাবনায় আয়োজন সেরে নেয় শেষ বেলায়
নীরবতা
সমস্ত রামধনু নিংড়ে
দলছুট মাছি ভুলে যায়
চওড়া ভয় ।
নদীতে আলোর কোলাজ
ঘ্রান বাঁধে প্রতিটি ছিপ ।
ঘুরে ঘুরে ফেরি করে নীরবতা
ছায়া ছুঁয়ে ঘুমিয়ে আছে মৌচুষকি ।
বিষুববেদনা যেন নিয়ম ভেঙ্গে যেন ভুতুরে ধোঁয়া
ঝাঁকড়া পাতাগুলো এক একটি ভিসুভিয়াস ।
শীতরেখা
সবটুকু লাল সন্মান নিয়ে
স্থীর বাঁশির ফৌত মেজাজ
রক্তক্ষরণের অনুবাদ শেষে
বাউন্ডুলে বালিকার সবকটি পাখি
নিমপাতায় গুটিয়ে রাখে শীতরেখা
শিকারির নক্সায় নেই বৈরাগ্য
উগ্র চাণক্য প্রেম বাঁধছে ধ্রুবতারায় ।
গন্ধপাঠ
ধীরে ধীরে জোড় কলায় ভুরু ঘষে
ফাগুয়া বাতাসে প্রকাশিত
ভৌত রাউন্ডের গন্ধপাঠ
মেঘের ঠোঁটে কামড়ে একরোখা চিল
জলপাহাড়ে বৈঠা টেনে
পুষছে মাছের ফ্যান-চাটা ধ্যান
ত্রিমুখী শূন্যতায় হুলস্থূল
প্রতিটি নিঃশ্বাসের ফালিতে চলছে বউকাঁটকি ।
ঢেউ
পাললিক সভ্যতায় সম্ভবনাময় অসুখগুলো জিইয়ে রেখে কেন্দ্রবিন্দু হই লোকজ স্বার্থে । প্রতিদিন মখমল জিহ্বায় খন্ড খন্ড জ্যোৎস্নায় পুড়ছে এক ঝাঁক কান্না । ভাঙ্গতে থাকে হাসির উৎফুল্ল ঢেউ । বারোয়ারি সংস্পর্শে হেঁটে চলি জং ধরা প্রলয়ে । বিছানা চুলকাতে গিয়ে ক্রিয়া – বিক্রিয়ায় ভাগাভাগি তিন চাকার মগজ । নিয়মিত তালুতে পতœক্ষত চেটে ঘুমিয়ে যাই
হিংস্রতা
নিবু নিবু শহরের গুপ্ত স্বভাব
হাড় ছিঁড়ে সরে যাচ্ছে
দৈর্ঘ্য – প্রস্থের গুচ্ছ গুচ্ছ হিংস্রতা ।
ভেষজ বাতাসে পেঁচিয়ে
বহুজাতিক সংশয়
মানবী জানালায় মেপে নেয় লৌকিক বসন্ত
স্বাচ্ছন্দ্যের বৈজ্ঞানিক প্রথায়
চুরি হচ্ছে সুখের ইমেজ ।
বোতাম
দূষিত মাস্তুলে পরিত্যক্ত আলপনায়
ভোরের ইভ খুঁজে নেয়
পাঁচমিশেলি ঢেউ
খসখসে চামড়ায় নগদ শিল্পে
মাসের প্রতিটি বোতাম ছিঁড়ে
লটকে আছি নিধুবনে ।
চিহ্ন
প্রদর্শনের স্টপেজ ছেড়ে
গিলে নিচ্ছে বুকের প্রপঞ্চ ।
বিদগ্ধ স্রোতে ছবির পরিনতি
যেন অনিবার্য ঘুড়ির চিহ্ন ।
নিজস্ব বিস্তৃতি সাঁকোর ওপাড়ে
বীজগণিতের ভুলে ক্লান্তিহীন সাঁই ।