শামসেত তাবরেজী এর কবিতাগুচ্ছ
শামসেত তাবরেজী এর কবিতাগুচ্ছ

কবি :  শামসেত তাবরেজী


মহাতান

তারযন্ত্রেও বাজি, সেতারে বেতারে, তাও.
ললিত গড়িয়ে পড়বার আগে লম্বা শ্বাসটি নাও,
কূলে, উপকূলে বিগত শহিদ হাসছে- হাসতে দাও।
ব্যথা লাগল কি? জিব ছিলে গেল? কেঁপে গেল মূর্ধাও!

আমি বাজি নীল আকাশ শিরায়, খিল খোলা আয়নায়
ধাবিত পাখির ডানায় বেজেছি আল্লার দরগায়।
কড়াঙ্গুলিতে বিভূতি জাগাও আমারি মূর্ছনায়
খাদে নেমে এসে সপ্তমে তোলো পুনরায়, বেনু রায়!

বাজি তো পানির মুকুর-মহলে, সাপের ফণাতে বাজি
আমি নৌ-যান, তুমি সপ্ত-সমুদ্দরের মাঝি,
সা থেকে নি কিভাবে উঠব আমরা বুঝব আজি
এ মহাতানে হে বাংলাদেশ, তারপরও গররাজি?

নিদ্রাশত্রু

আমি জাগোয়ান নিদ্রাশত্রু
রাত্রির খুলি যত গেরো আছে।
আমি জমা করি লবণ অশ্রু
প্রতিদিন রাতে শোভাদির কাছে।

আমি কি চাই নি সমরাস্ত্র
জিততে চেয়েছি মিহি ঘাসে-ঘাসে।
জেগে কি হল? - ব্যর্থ শাস্ত্র
সেই একই রাজা যায় আর আসে।

শোভাদিও নাই, ঘর বিবস্ত্র
জরাথুস্ত্র গিয়েছেন নিভে,
দৈর্ঘও নাই, হারাল প্রস্থ
বস্তু উধাও- ঝগড়া চলছে

আদম আর ইভে

কেনা শেখা

দিন, দুটো টাকা দিন
কিছু কিনে খাই

আপনিও তো কেনেন, কেনেন না?

পরনারীর জন্যে সুবাসিত জাঙ্গিয়া
চর্বিহীন চাঁদের অমেয় সম্ভার

কালও দেখেছি স্বপ্নজঙ্গলের ভিতর একটা হরিণের খাল খুলছেন আপনি
একটা প্রাকৃতিক পোলকা-ডট জ্যাকেট যে তার চাইই চাই
যা থেকে মৃগনাভির খোশবু বেরোবে
জাগিয়ে দেবে আপনার ক্ষমতাধর লোহা

প্রাণপণে চেষ্টা করেছি আরো ঘুমাতে যেন আমার দৃশ্যপর্দার বাইরে
দিনটা কেটে যায় দ্রুত আর নামে রাত্রি আবার অকাল ঘুমের
কিন্তু ঘুমটা চটকে দিয়ে গেল ও
ও মানে! আমি ভুলে গেছি তাও
না খেতে খেতে।

এত গরিবের বাচ্চা আমি ক্ষুধার আগুন লকলকিয়ে ওঠে সূর্যটা উঠতেই

দিন, দুটো টাকা দিন
আপনিও তো কেনেন, কেনেন না?
কবুতরের বুক কেনেন আপনি পারী থেকে
আর খোদ মার্কিন দেশ থেকে কেনেন অধিক আলট্রাথিন কনডম

কালই তো দেখলাম, কাল না পরশু
আপনি একটা বউ কিনলেন প্রথিতযশা নাট্যকারের কাছ থেকে

আমি তো কিছু মনে করি নাই তাতে?

বিশ্ববিতানে থুতু ফেলা হোমোস্যাপিয়ান আমরা
কিছুই যদি না কিনি কেমন দেখায় না?

দিন, দুটো টাকা দিন
কিছু কিনে খাই
খেয়ে কিনি আপনার মতাদর্শটাই

ছায়াবতী

দুপুরবেলা যদি আমি তাহার হই
সন্ধ্যাবেলা আমি- তারই কি থাকব?
রাত তো মহানিশা- হা- নিভন্তই
জাড়ের জ্বরে তা'লে কাকে ডাকব?

মেজাজ খিঁচে রয় মার্চ-শুরুতে,
পাতার পর পাতা ছিঁড়ে ফেলে দেই,
দেখা তো হয় না- তার সঙ্গেই
যদিয়ো জোড় বাঁধি উতল ভুরুতে।

বিচরি’ আকাশে কি কি লিখে যায়
ভাবি, এই এল নতুন একটা কাল,
বরটা বর্বর- তারি বকা খায়
নিলাজ মেয়েটি, কাঁপে ভীরু গাল!

দুরের থেকে দেখি নিকট করে তাকে
মেয়েটি দিচ্ছে কি নিজেকে ফাঁকি,
ভাবছে সত্তা নিজের ছায়াটাকে
আমিও পিয়া পিয়া বলে তাকে ডাকি!

না না না না, সেটা কাজীর কলেমা,
কেন বাজছে আমার কলবে!
কি জানি কবে- আমি হলেম ওলামা
পুলিশ ধরে যদি বিশেষ তলবে!

সে-ভয়ে চোখ বুজে, লুকাই গৃহকোণে
ভাবি না কারো কথা- এমনকি তারো-
তবু সে এসে পড়ে হৃদয় স্পন্দনে
রক্ত যেখানে গাঢ় বেশি আরো!

দুপুরস্য দুঃস্বপ্ন

তখন দুপুর হয়-হয়, মানে, তখনো দুপুর হয় নাই
এমন সময় হল কি- লজ্জাটা গেল ভেঙে-
রাতের গোলাপ ফুটল- দ্বিপ্রহরের ফাটলে।
ঘড়িটা ভেঙে টুকরা- গড়িয়ে নামল প্রথম দিনের বর্ষা,
তখনো দুপুর হয় নাই- ফুপুর ভারী পাছাটা
উঠে সোজা ডানদিকে।

তখন আর এখন রাজনীত ছাড়া আর-কি?

কাস্মীর ডরে কাঁপে, পাপিয়া-প্রধান উপত্যকায় বোমারু বিমান গর্জায়।

তখনো দুপুর হয় নাই, আমি হিসু করি
আমারই আপন গর্তে,

টেলিভিশনের রঙিন চ্যানেল বলছে: ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
বিদ্বেষে প্রাণ দিবি না? উঠে আয় তবে, ভাঙা খাট থেকে লাফ দে
দ্বিপ্রহরের গোলাপ ডাকছে ভারী পাছাদের শর্তে?

লজ্জ্বা নাই রে বইমেলা হল শেষ
পাঠক-লেখক লুকোচুরি খেলে সুরাবর্দির দর্জায়

দুপুরের পর নামল- প্রচ্ছদহীন শাসকের-
কালিঝুলি মাখা রাত্রি

প্রাণেশো, ওহে প্রাণেশ!

কুরিল বিশ্বরোড

কুরিল বিশ্বরোড হয়ে আমি যদি নাক বরাবর যাই,

কোথায় পৌঁছাব? শুনেছি সকল পথ রোমে চলে গেছে

রোমকূপ ভেদি' আশ্চর্য শহরে! তবে কি এ-পথ

আষাঢ়স্য অহঙ্কারে ছুটতেই থাকবে গেট-লকড চিরকাল?

 

হেরি' বাসনার নিচুতলাময় সংঘর্ষ-মলিন চাঁদ,

তাকেও একলা পেয়ে কিছু একটা ক'রে ফেলে যদি

পলকা পুলিস? কোথাও তো রাখি নি গচ্ছিত মাল-

মাল্য যা ছিল কেড়ে পলায়েছে ষাটের দশক!

 

তাহলে কি ঢুকব কবরে রানাপ্লাজা-পাঁজরের তলে?

অন্য কারো থ্যাঁতলানো উরুর বগলে সঁ'পে দেব এ-প্রান ভ্রমরা!

 

ফুটেছে কৌমুদী গো মুদির বাক্সে, তার কথা শুনে-শুনে

মাঝে-মধ্যে হাই উঠলেও নিদ্রা নাহি আসে-

কলম লঙ্ঘিতে চায় আইনের উঁচা, স্বেদ-সংহিতার

মস্ত ছবি দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়ে ভাসে...


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান