জ্যোৎস্নার টিপ
মৌন প্রহর ভেঙে উড়ে যায় মাছি
অনন্ত দীপিকা বিস্ময়ে চেয়ে রয় ।
এমন বাউল দ্বীপ কখনো দেখিনি আগে আর ।
একাকি রাতের পায়ে নিপুন ঝংকার নূপুরের
পল্লবের ঝিরিঝিরি ছন্দে নিমগ্ন যেনো প্রকৃতি ।
চোখের দীঘিতে সাঁতার কাটে ভাঙা স্বপ্ন ।
রাত্রি কৃষ্ণ হলে পানপাত্রও জীবন্ত হয়ে ওঠে
স্ফটিক গ্লাসের হেরেমে কাঁপে
বিন্দু বিন্দু রূপালী জলনটির শরীর !
জোছনা বিনুনি রাখে খোলা
বাতাসে উড়ায় তার দুধমাখা কেশ ,
নদীতে ফাগুন জাগে জোয়ারে আগুন
মাছির ডানায় হয় স্বপ্নও নিরুদ্দেশ ;
তবুও জীবনকে লিখে যাই
জ্যোৎস্নার কপালের রূপালী টিপের
সমস্ত ক্যানভাস জুড়ে ।
কান্নার খণ্ড খণ্ড চিরকুট
মাঝরাতে তুমি ঝড়ের গল্প শোনাও
আর আমি চোখের জলে শুদ্ধ হই ,
যখন চাঁদ জেগে ওঠে আঁধার ভাঙার শব্দে
হৃদয়কে খুলে চাঁদের আলোতে শুকাই
স্যাঁতসেঁতে হৃদয়ে কেবলই কষ্টের প্রজনন !
সৌরনদীতে ডুবে থাকে অসংখ্য সমুদ্রের ভ্রুন
সুখের ছোঁয়া পেলে নীলাকাশ
নেমে আসে হাতের তালুতে
দৃষ্টির স্রোতে ভেসে যায় অগণন গঙাফড়িংয়ের দল
পিরামিডের সুউচ্ছ গুম্বজ ভেঙে উড়ে চলে ফেরাউনে অট্টহাসি
শুধু পড়ে থাকে হাজার বছরের কান্নার খণ্ড খণ্ড চিরকুট
পেট্রার ধ্বংসস্তূপের মতো ইতিহাসের কলঙ্কিত কঙ্কাল ।
যদি শিরায় শিরায় আসে রক্তের প্লাবন
শত বছরের আলিঙ্গনে আমি মানুষ হয়েছিলাম
মনোহরি আশা নিয়ে ,মরিচার খোলস ভেঙে ভেঙে ,
যেমন বীচির শক্ত আচ্ছাদন ছেদিয়া দুহাত উদ্ধত করে
কঁচি বৃক্ষের চারা ,আমি মানুষ হয়েছিলাম
শত বছরের আলিঙ্গনে ;
তারপর পৃথিবীর সকল কষ্ট যখন চোখে এসে নোঙর করে
তখন শমন জারি হয় ঘুমের !
স্বচ্ছ জলে বিম্বিত আকাশ ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে আসে
স্বপ্নিল পৃথিবী ভেসে যায় নিছিদ্র অন্ধকারে
আমিও অনন্তকাল ঘুমিয়ে থাকি সময়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ,
আমার সাথে বিবেকও ভাতঘুমে আচ্ছন্ন আজ !
শিরায় শিরায় জেগেছে চর ,মরা-নদীর মতো ,
দেহের বালিয়াড়ীতে মুখ গুঁজে তীব্র আর্তনাদ করে জীবন ।
কালের প্রবাহমান স্রোতে ভেসে যাচ্ছে
স্বপ্ন ভর্তি জাহাজ এক
নাবিক মাল্লারা কেউ কেউ মিশে গেছে জাহাজের পাটাতনের খোড়লে ,অনন্তের অতলে কে জানে কখন
তবুও জাহাজ চলে নিজস্ব গতি নিয়ে
তার দিকচক্রবাল জুড়ে কেবলই স্বপ্ন ,
ইউফ্রেটিস হতে প্রশান্ত মহাসগরের সীমানা ছাড়িয়ে ,
আমি আশার নোঙর তুলে বসে আছি
যদি আবার শিরায় শিরায় আসে রক্তের প্লাবন
আমিও ভেসে যাবো সপ্তডিঙায় চড়ে স্বপ্নের দেশে
যেখানে এখনও মানুষ আছে মানুষের বেশে ।