সুন্দরীবনে করাত হাসে
কে যেন হলুদ বুনে যায় মাছরাঙাচোখে
তারাদের কাচারিঘরে বিষণœ সন্ধ্যা
লীন হয়ে আসে পাখিদের দরবারে
করাতের দাঁতে পৌষ নেমে এলে
তোমার সোনালী পায়ে ভাসেনা আর রোদের ঝলমল
শুধু পাতাঝরা খেলা হেমন্তের ঝাপসা চোখে
মৌরাণীর শাসন ভুলে আমরা কেবল ধোঁয়া ছড়াই-
চিমনিমুখে; আকাশের দীর্ঘ ভুলে
আগুন জ্বলে শুকনো পাতার কেওড়াবনে
অবারিত বন নেই হরিণের পায়ে, পাতা নেই
রাজার ডেরাকাটা শরীর ঘুমিয়ে, নিশ্চল
সার্বভৌম অন্ধকারে!
এমন রাতেও তাবুর নীচে মুখ ঢাকা বুলবুল
অবনত সুন্দরীপায়ে, মানুষের গ্রামে সকাল নাচে
দীপাবলী রাতে
এইখানে বহুঘর জলের নীচে অন্ধকার
পবিত্র মোমের কাছে তোমরা বসে থাকো-
আলো জ্বেলে,
নিজেকে পোড়াও অগনিত রাত
আর শত বছর বহু যুগ ধরে
অচেতন জলের নীচ থেকে
বিম্বের মতো জেগে ওঠে প্রেম...
তন্দ্রার ভেতর প্রদীপ জ্বেলে লাভ কী বলো?
দেখ, বরফেও সত্য খোঁজে হাজারো পেঙ্গুইন...
এক ভোর ভরসা নিয়ে আমিও বসে থাকি-
দীপাবলী রাতে; ভাবি-
জ্বলেই শেষ হবে বিদ্বেষী কোলাহল তোমার-আমার
সঙ্গীত ছড়াবে প্রবাহিত ঝরণায়, হৃদয়ের টিক-টিকে...
পরিত্যক্ত সময়ের কাছে
একটি মার্বেল
ঘুরছে
থেমে যাচ্ছে প'ড়ো হাওয়ায়
মুঠোর আঙ্গুলগুলো
বেসামাল গল্প বুনছে
পরিত্যক্ত সময়ের...
বয়সী পৃথিবীর ভাঁজে দেখ
তুমি আর আমি কতো অসহায়!
এখন থেমেছে পৃথিবীর সব ধুক ধুক
মুছে গেছে এক পেয়ে পথের সংলাপ
তোমার যাওয়া
আমার পেছনে হাঁটা
সেও পড়ন্ত ছায়ার মতো দূরের বিলীন...
চলেইতো যাচ্ছে সমূহদিন
কথারা হয়েছে অতীত
পিঁপড়ের ঢিবির মতো হারিয়ে যাচ্ছে সময়
সময়ের না'য়ে
শুধু ফিরবে না ঐ পথ, গিয়েছে যেদিক
ঘুম
নক্ষত্ররা আসে আর চারিদিকে ছুঁড়ে দেয়-
রাত্রির জাল
ফুলদানি গড়িয়ে অন্ধকার নেমে এলে
ঘুমের কাছে ঋণী থাকো
মলিন সূর্যকে ছেড়ে দাও দৃষ্টির ওপার
কী হবে বেহালায় ভ্রান্তির সুর তুলে?
বরং একাকার হও ঘুমভাঙা বৃষ্টির গানে....
ঘুম তোমাকে মৃত্যুচেনাবে
জাগাবে
সভ্যতার পাথর ভেঙে তুমি বাজি ধরবে নির্ভারতার
থমকে দাঁড়ানো মায়াঘোর ভেঙে
কতদূর যেতে চাও তুমি
একা
অশ্রæ মাড়িয়ে শিল্পকলার পথে?
এসো মানুষের নরক ভেঙে খানিকটা ঘুমাই
ঘুমেই সমর্পন করি তোমাকে, আমাকে....
গাছের মমি
গাছেদের মমি নিভৃতিকামী
শত বছরের কুলছোঁয়া প্রার্থনার রূপ
যারা রাতের জোনাক দেখে আর
ঝাঁক ঝাঁক চোখে সাজিয়ে রাখেÑ
নক্ষত্রের রাত
ঘুম শেষে
মমিগুলো জীবন পেয়ে
চড়ুইয়ের মতো নাচে
হাওয়ার গন্ধম খেয়ে
অগনিত হাত জল ছোঁয়, গন্ধমটানে
পরবর্তীকালের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখে
ডাইনিং এর জলজীব
গাছেদের পাতাগুলো যেন টলটলে আয়না
তার ধার ঘেসে
পার হয়ে গেছে কতো বিহŸল চোখ
শুধু গাছের আয়নাই স্বাক্ষ্য রাখে
যুবা থেকে প্রৌঢ়ের হিসাব।
স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন নেই
ফুলে মোড়া কোলাহলে
আমার বাক্যালাপ তাকে ছোঁয় না আর
প্রতিটি লাইন শেষে সময়ের পূর্ণচ্ছেদ।
দুপুর পেরোনো ছায়ারা ফিরে গেলে
সারিন্দার বিষাদ জমা হয় বটের পাতায়
আর কাতান শাড়ির লাল পাড়ে
চোখের কোণায় ক্লান্তির ঘুমে
সুইসাইড প্যাড মুচকি হাসে আত্মহত্যার মহিমায়!
ঝরে যাওয়া পাতাগুলো কেন জ্যোতিষশাস্ত্রের পÐিতমশাই
কররেখাগুলো কেবল সবুজ থেকে হলুদ করে দেয়!
বোতলের ছিপ খুলে প্রিয় মদ ফোটাতে পারো
ছুঁড়তেও পারো কালো গোলাপ
এমন তিরস্কারে আমার অহংকার গণিতের সূত্র ভুলে গেছে
তুমি জানো না
নতুন আংটির পরিধিতে কোন নাম লেখা নেই
যা কিছু, সে তোমারই কীর্তি।
আমার কৃতজ্ঞতা শুধু আঁধার ছড়ানো পাখিদের কাছে
ওদের চোখেই আমার স্বপ্নখোয়ানো প্রতিটি চোখ
জলের আরাধনা
আগুন নেভানোর আগুন তো নেই! জলের আগুনে পুড়ে মরি সারাক্ষণ। জলেই মৃত্যু, জলই আরাধনা।
বেলা পড়ে এলে ফিরতে চাই। পাহাড় সে অনেক দূরের...। সমুদ্রও। পাহাড়ে পতনের ভয়। সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার। এই আমি উপত্যকায় বসে দেখি পাহাড়ের চাঁদমন্থন। কুলে বসে গুনে যাই সাগরের সূর্যসফেন। আমি সূর্য নই যে চাঁদে জোছনা বিলোই। বরং সমুদ্র সেচে বাষ্পায়িত হওয়ার নামতা ফেরি করি...
প্রত্যাখ্যানে আমার ভয় নেই। দূরের পাখি, বসে থাকি একপায়ে, একাকীত্বে। কোন তাড়া নেই ঘরে ফেরার। অথচ বারবার ফিরে আসি কোন নিঃশ্বাসের মোহে... জলের ধোঁয়া হতে...
ইন্দ্রপ্রস্থের পথে
তার চোখের পাশে শুইয়ে দিলে, দেখবে,
আমিও ফড়িং জীবনানন্দ চোখে, হেমন্তের ঘাসে।
বিস্ময়কর আঁধার নেমে এলে হাতে
মুকুট খুলে যাবে তার হৃদয়ের মন্দিরে।
আমি এখন তীর্থে যাবো
আমাকে থাকতে দাও হিমের নির্ভরতায়
ও পথে নবগঙ্গার পাড়ে কোন ঘাটে বসবো একাÑ
জলের প্রার্থনায়; খুঁজে নেব বৃক্ষজন্ম আবার,
শীতার্ত মাটির কোলে ফেনিল উষ্ণতায়
ফের আর্য ঘুম নামবে বাঁশির সুরমন্থনে...
সে যেন ইন্দ্রপ্রস্থ এক,
থামবে না প্রেম, আমাদের, মরমি সুরে।