শিহাব শাহরিয়ার একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, ছোটকাগজ সম্পাদক ও উপস্থাপক। গল্প দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু। এরপর কবিতা, প্রবন্ধ। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ- ‘হাওয়ায় রাত ভাসে ভাসে নিদ্রা’, ‘ফড়িঙের পাখা পোড়ে’, ‘নদীর তলপেট ফোঁড়ে উড়ে যায় রোদ’, ‘আমি দেখি অন্য আকাশ : নির্বাচিত কবিতা’, ‘যখন ভাঙে নক্ষত্র’, ‘মাতাল মেঘের ওড়াউড়ি’। গল্পগ্রন্থ- ‘ঘাটে নদী নেই’। প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ ‘নরম রোদের আলোয়’। এছাড়া রয়েছে চারটি গবেষণাগ্রন্থ। এগুলো হলো– ‘বাংলাদেশের পুতুলনাচ’, ‘বাংলাদেশের হাজং জনগোষ্ঠী’, ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শেরপুর’ সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘বৈঠা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা ড. শিহাব শাহরিয়ার বর্তমানে জাদুঘরে কর্মরত রয়েছেন।
নেশাঘর
জোয়ারের জিহ্বায় ডিগবাজি খাওয়া বালির মতো
তুমিও ডিগবাজি খেতে খেতে দ্বন্দ্ব-সূত্রে লিপ্ত হয়েছিলে
তোমার মতো নিঃসঙ্গ কাকড়ারা-অন্ধরাতে পার হয়েছে
কালিনদী; আমি একদিন সমুদ্রঘেরা এই নদীকে বলেছিলাম
তুমিও অনেকের মতো দুঃখ ভুলে মগ্ন হও সাকুরার সন্ধ্যা-গ্লাসে
নেশাঘর প্রতিদিন খালি করে বাহিত নদী ও প্রাণিত নারীর বুক
ট্রেন
বাসন্তীপুর এক্সপ্রেস-সেই ঘুম ঘুম শন্ শন্ ট্রেনযাত্রা
সেই আঁধার রাত-কার যেন হাত মিশে যায় অচেনা কাঁধে
মনে পড়ে-মজাপুকুর, মই-দড়ি-গোল্লাছুট, পাতাবাহারের
পাঁচমিশালি, রামধনু-বিকেল, হলুদ ফড়িঙগুলো মরে আছে
সুইয়ের ছিদ্র দিয়ে দেখা যায়-ঝিকঝিক ট্রেন-শব্দ, আহ্লাদ
পিঁপড়ার চোখের ভিতর ফুটে থাকে কাশফুল, বালুচর, ভেলুয়া
নদী; নদীর ঢেউ-রং, লাল-ঘোমটার ভিতর কিশোরী নাকফুল
সেই অচেনা-লাঙল-বাহিত মাটিজীবন। বাসন্তীপুরকে চিনবার
কথা নয় তোমার; ওখানে দড়ি-মই, মজাপুকুর, নাকফুল, নদী
সব বিষণ্ন সন্ধ্যার মতো মিশে যায় নাসিকার ঘুম-ছিদ্রের ভিতর
এক্সপ্রেস ট্রেন চলে যায় প্রতি ধূলি-সন্ধ্যায়, নীল ওড়না উড়িয়ে
পা তা দে র পি ঠ থে কে
এই উড্ডীন পতাকা আমরা রক্ত দিয়ে কিনেছি
আমাদের তিরিশ লাখ রক্ত বহন করেছে
বুড়িগঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র আর মেঘনার মোহনা
হায়েনাদের বুলেটের ভয়াবহতা দেখেছে
রাজারবাগ, রায়েরবাজার, পিলখানা, পঞ্চগড়
হায়েনারা শস্যভূমিকে বিরাণভূমি, বধ্যভূমি করেছিল বলে
বালুচরের বাতাসেরা থুতু ছুঁড়েছিল জলপাই রঙের জিপে
শকুন ছাড়া সেদিন বাংলার সব পাখিরা উড়ে উড়ে
এক এক করে নিরুদ্দেশ হয়েছিল পাতাদের পিঠ থেকে
আমাদের করোটির মাঠে সেদিন খেলা করেছে
ভয়ের দাবানল- ভূমির আঁচলজুড়ে জ্বলেছে আগুন
আমরা জন্মগ্রাম ছেড়ে সীমান্তের চোখে রেখেছি হাত
যাদের পিতৃত্বের অধিকার দিয়েছিলেন শেখ মুজিব
সেসব শ্যামলা মায়ের শরীরে বসেছিল নরপশুরা
ডিসেম্বর, ব্রহ্মপুত্র থেকে রক্ত নেমে গেল মেঘনার মোহনায়
যমুনায় এলো নতুন জল, পদ্মায় জেগে উঠল রূপালি ইলিশ
নয় মাস, মানুষকে যারা কুকুর ও শকুনের খাদ্য বানিয়েছে
নয় কোটি বছর, আসুন আমরা ঘৃণার পুকুরে তাদের ডুবিয়ে মারি,