বত্রিশের রক্তমাখা সিঁড়ি
পঁচাত্তরের পর-একদিন
আমি একা একা গিয়েছিলাম
বত্রিশের রক্তমাখা সিঁড়ির কাছে
দেখলাম-পিতার বুকের রক্ত
আধো আলো আধো ছায়াঘেরা সিঁড়ির
শরীরে ছোপ ছোপ পড়ে আছে...
হত্যাকারীদের নির্মম বুলেটের আঘাতে
যে রক্ত ঝরেছিল পিতার পবিত্র শরীর থেকে
যে রক্ত পিতার পাঞ্জাবিকে করেছিল লাল
বাতাসে শুকিয়ে সেই রক্ত ছড়িয়ে পড়েছে
বান্দারবান থেকে বাংলাবান্ধা...
আমার যৌবনের চোখে
তখন ঝরেছিল কী কান্নার জল?
আমি কী এরপর বত্রিশের
সবুজ ঘাসের গালিচায় খুঁজেছিলাম
আমারই সমবয়সী দুরন্ত দারুণ কিশোর
প্রিয় শেখ রাসেলকে?
আমি তাঁকে পায়নি খোঁজে! কেন পায়নি?
আমি ইতিহাসের পাতায় চোখ ফেলি
দেখি ’৬১ থেকে ’৭৫-পনেরো বছর
বত্রিশের ৬৭৭ বাড়িটির বাতায়নজুড়ে
মুখর বাতাস, আনন্দ-কথারা উড়েছিল
আন্দোলনের জোয়ারে ভেসেছিল আর
রেনুর হাতে কারাগারের প্রকোষ্ঠ থেকে
এসেছিল গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
বাংলার অবিসংবাদিত নেতা মুজিবের চিঠি
আমি আর কিছু ভাবি না-শুধু দেখি
বৃক্ষঘেরা এই স্মৃতিময় বাড়িটির
উদ্বেলিত রোদ এখন মরে গেছে!
নিভে গেছে সন্ধ্যার উদ্ভাসিত বারান্দা
শেষ হয়ে গেছে বাগানের নির্জন ঘাসে
বিকেলের আছড়ে পড়া ঢেউরোদ
আমি বত্রিশের রক্তমাখা সিঁড়ি
বুকে নিয়ে ফিরে যাই আমার প্রিয় নদ
ব্রহ্মপুত্রের অথৈ জলের কাছে
যে নদের তীরে পঁচাত্তরের আগে
মুজিবের হাতের স্পর্শ পেয়েছিল
আমার কিশোর কোমল হাত...
হে প্রিয় নদ-তুমি বলে দাও
আমি আর কতদিন কতকাল
বয়ে বেড়াবো বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিঘেরা
বত্রিশের রক্তমাখা সিঁড়ি বুকে নিয়ে...
নদী মেখলার কবি
হে নদী মেখলার কবি
জানি, তোমার হৃদয়ের গভীরে ছিল
লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদ্দীন, জীবনানন্দ
জানি, তোমার বটবৃক্ষের মতো বুকে ছিল
বিশাল বঙ্গোপসাগর, ভৌগলিক ব-দ্বীপ প্রিয় বাংলাদেশ
জানি, তোমার তুখোড় মননে ছিল
বাহান্ন, প্রিয় মাতৃভাষা, একাত্তর, রক্তসিঁড়ি, স্বাধীন পতাকা
জানি, তোমার চেতনায় ছিল
বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার
হে নদী মেখলার কবি
নদী বাইগারের তর তর কলস্রোত
এখনো শোনা যায়- তোমার শৈশবের মধুময় হাসি
হে স্বাধীনতার কবি
বত্রিশের স্মৃতিময় রৌদ্রমাখা বাতায়ন জুড়ে
এখনো তোমার ভারী কণ্ঠ-কথারা সৌরভ ছড়ায়
হে স্বাধীনতার কবি
রেসকোর্সের বৃষ্টিভেজা ঘাসগুলা, সবুজ বৃক্ষগুলো
এখনো বয়ে বেড়ায় ৭ মার্চ আর
তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতি
হে নদী মেখলার কবি
তোমার রক্ত দিয়ে যারা ঘন করেছে সিঁড়ির ছায়াতল
সেই ঘৃণিত বর্বর নির্মম নরপশুদের আমরা ঘৃণা করি
হে স্বাধীনতার কবি
তুমি চির নিদ্রায় শায়িত আছো
বাবা লুৎফর আর মা সায়েরার বুকের পাশে
শায়িত আছো-প্রিয় জন্মভিটায় আর
নদী মধুমতির স্রোতের পাশে
হে রাজনীতির মহান কবি
তোমার বাংলাকে বুকে ধারণ করে
আমরা এখনও কণ্ঠে তুলি ‘জয়বাংলা’
বলি-‘জীবিত মুজিবের চেয়ে-মৃত মুজিব অনেক শক্তিশালী’