কবি: সানাউল্লাহ সাগর
স্বাক্ষর
রিকশাটা বেচে দিবো—সন্ধ্যার মতোই। খোঁপা থেকে চেয়ে থাকা সাপমুখে চুমু খেয়ে জানতে চাইবো, ওগো নিমফুল তোমার ঠোঁটে, নাকে অথবা কপালে শেষ কবে লিখেছিলে ভুল!
আবার ভুল লিখো। অন্ধ সুইয়ের সব-সুতো ছেড়ে দিবো। তুমি আকাশমুখি উড়বে—
মতান্তর
মা গাছটির মুখ ওই দিকে কেবল ঘুরছে;
দাঁড়িয়েছো কতোটুকু বিস্ময়ে
কোমল হয়ে ভিজে যাচ্ছো বিস্তর—
এখনো থামেনি তেমন বোকা বকের রথ
ফালুদার গানে গানে ভিজেছো তবুও
দক্ষিণ থেকে মাত্রার অন্ধরে...
ধরে নাও; আমিও বেহাত ঘুড়ির লেজে
আসতে পারি, সন্ধ্যা নিতে—
রোদ্দুরমুখো ভাত থেকে মিথ্যাগুলো খুলে নিতে
টুকরো হয়ে বিছিয়ে যেতে পারি আউষে-আমণে।
মা হয়ে ওঠার বীজতলায়...
শীতজ্বর; প্রসঙ্গ তিলোত্তমা ও রূপকথার রাত্রি বিভ্রম
প্রশ্নটা তোমার ছিলো—মাছদের শীত নিয়ে হাঁসের এতো কৌতুহল কেনো! আমি বাবুই-জ্বরে নিমগ্ন তখন;
পুকুরে বিস্তর জলখেলা।
স্বাদে তুলনা তোমার—জুঁইয়ের কাছাকাছি। শহরের রঙ জ্বেলে ভেসেছো বেশ; কেনো খোঁজো ঘুম। প্রশ্নটা তবু তোমার বাহুতে থেমে আছে ভূক! তিলোত্তমা—আমি কালোসুখে শোক পুষি; আন্ধরে বিছানা কাঁদেনা আর...
কবিতা নিভে না মোমের অসুখে;
তোমার জংশনে লিখেছিলাম—সে কুয়াশা-গাড়ী।
রিমুভ রোডে রিকশা তোমার এলোমেলো খুব; সেই তো শহর—আমাকে চেনে বেহুশ ব্রা’র শরম।
—জানে না বহুরাত আমিও
ঘুম বেচে শিশিরোগ ছানি...
রূপের শহর কাছে-দূরে থাকে; পিঁপড়া-শিশু কাউকেই ভাঙিনা আর—বিনাবাক্যে একটা বালিশ খুঁজি
যার নরম পালিশে জড়িয়ে থাকবে তিলোত্তমার হাত—রূপকথার ছবি!
ঘাতক
চারদিকে শুধু শাদা হওয়ার প্রতিযোগীতা—
কালোরা যেন লুকাতেই জন্মেছে ! সাপের ফনার
মতো সন্ধ্যারা আসে—পরিপাটি করে নাগরিক
হেঁসেল। গলির শোকছবি থেকে চোখ উঁচু করে
বাইরে তাকাই; তোমার কালোটা খুঁজে নিতে। আর
প্রকৃত পায়ের কাছে নুয়ে যাই, লজ্জা নেই কোনো
অহম ছুঁড়ে দিতে ঘামে। আদমের সুরতে ফিরে
জংলি জারুল হাতে হাত ধরে মিইয়ে যায় ঠোঁটে।
ইচ্ছের মতো পঠিত হতে থাকে শাদা লজ্জারা—
প্রবাহিত অর্থের লাজে গঠিত থেকে যায় ক্ষুধা।
আর চুলায় ঝিমায় বাঁধ ভেঙে আনা শূন্য হাড়ি,
থামেনা তবু ক্লিশে; রঙহীন হয়ে যায় হাতুড়ি।
গুহামুখে আর্তিরা বেঁচে ওঠে ফের কান্নার রঙে
শাদা হরফে মৃত্যুর ঘর-বাড়ি ছুটে যায় গ্রামে।
শীতার্তের কোরাস
একবার আমার হাত বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলাম,
জনে জনে ঘুরে বললাম, আমি এই হাত দুটো
বিক্রি করতে চাই। যে হাত দিয়ে আমি ধান কাটি,
রোদে পোড়া কৃষাণীর স্নিগ্ধ মাখনে মই চালাই।
সবাই এমন বিস্ময়ে তাকালো যেন, বিকালের
জমিনে লাঙল পরেনি কোনোদিন। শুধু হাত—
কেউ আমার খালি হাত কিনতে রাজি হলো না;
আমাকে নিজ শরীরের কাছে ফিরে আসতে হলো।
আমি শরীরকে বললাম, এবার তোমাকে বিক্রি
করবো। আমি আবার রাস্তায় বের হলাম। অলি-
গলি, ফুটপাতে, বস্তির নেংটা চোখের কাছে, উঁচু
দরজার কাছে গেলাম। কেউ জেগে নেই তখন!
চিৎকার করে ডাকলাম। ধীর গতির বর্ষার
মতোন নিয়ম করে জানালাম, আমি এসে গেছি।
তোমরা এবার কুঠার হাতে তৈরি হও। ‘আমি
বিক্রি হতে চাই।’ কোনো শহর আমাকে কিনলো না।
আমি ফিরে এলাম বাঙলার কাছে। নীতি-বৃত্তের
কাছে। রোজ বিক্রি হওয়া লাল মানুষের শরীরে !