কবি : সাফিয়া খন্দকার রেখা
ক্রীতদাস
পোড়া দেশ, রক্তাক্ত জমিন এসবের কিছুই তোমাকে স্পর্শ করতে পারবেনা,
আগুনের খেলায় পরিপক্ব তুমি
সাথে আছে টাকশাল, প্রতিবাদহীন জয়ধ্বনি,ঋতুবতী নারী।
চোখের নগ্নতায় পুলসিরাত পাড় হতে শিখে নিয়েছো কৌশলে,
বাকলহীন গাছের মতো মমতা ক্ষমতা সাপের ফনার মতো বেড়ে উঠলেই
তুমি আকাশ ছোঁয়ার মতো বড় হয়ে ওঠো।
ত্রিশূলে বিঁধিয়ে দিয়েছো তুমি তোমার মাতৃভূমির শরীর
সর্বোচ্চ শপথের দিন,
এখন তুমি স্বিকৃত অভিষিক্ত শিল্পীত সুন্দরের প্রতিনিধি,
তোমার গ্রন্থিল বাহু,গ্রীবা, চব্বিশ ঘণ্টা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে, কক্ষে সুরক্ষিত।
কে কোথায় লুটিয়ে পড়ে!
জীবনবৃত্তান্ত সমকালীন করে
হাজারো বিবর্ণ ইন্টারভিউর অপারগতায় কে আটকে থাকে!
কতজন মাস্টার্স উত্তীর্ণ আটকে থাকে জীবনের চোরা গলিতে!!
কত লক্ষ হাজার অসুখে চায়
সুখের অমরাবতী!!
এসব জানার জন্য তুমি প্রতিনিধি হওনি,
তুমি বেঁচে ওঠো বারবার কতিপয় তীক্ষ্ণ কিংবা চাটুকারি টক শো আর সম্পাদকীয় কলামে,
নষ্ট প্রজারা এক, দুই, তিন করে পাঁচ বছর গুনতে থাকে,
অন্ধকারে ফের আগুনের খেলায় মেতে ওঠে
অত:পর ফ্ল্যাশব্যাক
আহা এই দশকের চেয়ে সেই দশক ঢের ভালো ছিলো
যদিও সব দশকেই আমরা কেবল ক্ষুধার ক্রিতদাস।
ভায়োলিন
করোটিতে ভায়োলিন বেজে চলছে
এলেবেলে অভিমানী স্বত্তায় পাখিদের মিছিল,
সভ্যতার নামে
রক্তে মাংসে সবুজ সংশয়
ভারসাম্য হারানো হৃদয়
একনিষ্ঠ প্রার্থনায় ব্যাতিব্যস্ত।
ঘরের আসবাবগুলো বৃক্ষ হয়ে যায়
মাতাল পাখির শিস অনুচর শরীরের।
নিদ্রার বড়ি হাত থেকে খসে পড়ে
তিন সন্তানের চেহারা
ঊনিশ বছর বয়সের জননী নারীকে
জোৎস্নাকুমারীর মত অনাসক্ত করে তোলে।
ব্যক্তিগত অন্ধকারে কিসের উত্তেজনা
জাপটে ধরে
সময়গুলো অসময়ের প্রহর হয়ে
ক্রোধে ফুঁসতে থাকে
চৌদ্দ বছরের শিশুর গর্ভে শিশু!!
আত্মাহীন শরীর
ঊনিশে তিনটি ভ্রুণের আশ্রয়দাত্রী
অতঃপর জন্মদাতার প্রভিডেন্ট ফাণ্ড
গ্রাচ্যুয়িটির হিসাব ভুলিয়ে দেয়
চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা,
নিজস্ব ছায়ার করোটিতে ভায়োলিন বেজে চলে,
ঘরের খুঁটি শক্ত হয়,
শরীরের গ্রন্থিগুলি বিশ্রাম নেয় স্বপ্নাচ্ছন্নতায়
ঊনিশ বছরের যৌবন রাষ্ট্ররোষে দগ্ধ হতে থাকে----
মুদ্রিত পৃষ্ঠা
জোড়া শালিকের মতো একদিন ছিলাম আমারাও খুব কাছাকাছি হৃদয়ের গোপন বিশ্বাসের,
অক্ষরে অক্ষরে নির্ঘুম নিস্তব্ধ রাতের দীর্ঘশ্বাসে লেখা আছে সেই ইতিহাস নামা।
মুদ্রিত পৃষ্ঠায় তখন আলোকিত ভোর নামতো
রুপালী রোদ্দুরের আলিঙ্গন ভালোবেসে মেনে নিয়েছিলাম দূরত্ব।
কোন কোন দিন বিষাদ ছেয়ে রাখতো জোৎস্নারাতের ঝুল বারান্দার অপেক্ষা ,
দাউদাউ খড়ায় পুড়ে যেতো হাহাকার ভরা দীর্ঘশ্বাস।
তবুও তারপরেও
আমরা তৃষ্ণা নিয়ে অপেক্ষা করতাম পূর্ণতার,
পুরনো দিনের এসব গল্পরা ভালো থাকুক শুকনো বকুল কিংবা বইয়ের ভাজের গোলাপের পাপড়ি র মতো,
ভালো থাক নতুন মায়ার ছায়া..
মনস্তত্ত্ব
( নারী দিবসে সকল নারীদের জন্য)
তোমাকে তুমিই আঁকতে পারো
ইচ্ছে হলে মাধবী, লাবন্য, প্রিতীলতা, রোকেয়া, সুফিয়া,
মোনালিসা কিংবা স্বরসতী রাবেয়া নন্দিনী ।
চাইলে আকাশ অথবা নক্ষত্র,
তোমার মনস্তত্ত্ব কেবল তুমি ই বোঝ ।
প্রতিশ্রুতি, দেয়া নেয়া
পরীক্ষা -অপেক্ষা প্রতিক্ষা
যোগ-বিয়োগ, গুন -ভাগ
ফলাফল অগণিত শূন্য ।
অপলকে চেয়ে দেখো বারংবার
তুমি তোমার মৃত্যু
পন্য হও বার বার,
চেহারার সৌন্দর্য্য খুঁজতে জানতেই পারোনা মেধার সৌন্দর্যের মূল্য,
এখন ই সময়
চাঁদের আলোয় পোড়াও তোমার শরীরী সৌন্দর্যের
ইতিহাস নামা ।
সনাতনী রক্তের নির্যাসে আর কত
নিজের মৃত্যুর উৎকট গন্ধের লাশ
বয়ে নিয়ে যাবে কবরে!!
সঙ্গমে পরিপূর্ণ জঠর
বুকের বিনষ্ট স্রোতে কত ভাসাবে?
অনবদ্য আদি ইতিহাস ভেঙে
নিজেকে আঁকো
নিজেকে দেখো
নারী নয় মানুষ রুপে ।।
আয়না
মহাশূন্যের অলিক গল্পে
লাশখেকো শেয়ালেরা গিলে খায় কবিতার শ্লোক,
অন্তহীন পায়ের ছাপ পড়ে আছে আদিম নেশাখোর মানুষের।
ভরে আছে তৃষ্ণার পানপাত্র....
প্রেম শিরোনামে রচনা হয়ে চলছে
অজস্র রমণীয় সম্মোহন
প্রণয়ের মাধুর্য্য সুরায় ডুবে আছে রাতের দীর্ঘশ্বাস।
মেঘের আড়াল হোল চাঁদ
আয়নাটা ভাঙেনা শত আছাড়েও
অসহ্য যন্ত্রণাময় এক বিভৎস মুখ হয়ে
স্থির হয়ে আছে আয়নার ভেতর,
ঘৃণারা ভালোবাসার চেয়েও তীব্রতা নিয়ে ধেয়ে আসছে....
ঘ্রাণ
নির্বাসিত সময়
তবুও কি এক ঘ্রাণে মাতাল,
মৃত্যুর মত স্বাদ নিয়ে অনুভব করি
সেদিনের সেই পায়ের ছাপ চোখের ছোঁয়া
যেতে যেতে সেদিন সন্ধ্যায়
একটি কবর খুঁড়ে দিয়ে গেছো,
তাবত বিশ্বাস ক্ষত বিক্ষত করে
যে দৃশ্যপটের ঘ্রাণ আমার নাক স্পর্শ করে
সে এক অন্য তোমার ---গন্ধ।
নর্দমায় ফেলে দিয়েছি সেই স্মৃতি
তবুও কি এক ঘ্রাণ তোমার না থাকা সময়ে
থেকে গেছে পুরোটা সময় জুড়ে..
স্বজন
কতটা পুড়লে পোড়ে হৃদয়
কতটা পুড়লে হাড়
অতীত হয় আত্মীয় সংসার!!
আগুনের থাকে বুঝি ক্ষোভ
থাকে তার জিহবায় লোভ!!
শোকের ভেতরে থাকে শোক
একুশেই মরে কেন লোক!!
বাতাসে ভাসছে আহা শিৎকার
স্বজনের হাহাকার চিৎকার,
কতটুকু ছাই! কোন ছাইটুকু কার
প্রাণ বইতে পারে কতটা ভার!!
এই যে এইটুকু ছাই কি আমার?
তোমরা কি দেখছো আমার স্বজন?
ছিলো তারা সব আমার আপন,
হৃদয় জানে সে কতটা পুড়ছে
স্বজনের ছাইগুলো বাতাসে উড়ছে,
কতটা পুড়লে হাড় হৃদয় পোড়ে
জানলেনা ও স্বজন কেমন করে
না পুড়েও পুড়ে যাই তোমার তরে😰😰