সায়েম অনিন্দ্য ।। পাঁচটি কবিতা
( ১ ) ২০২৩ সাল
টাকা,পদবী ও ভয়
এই নিয়ে ছড়িয়ে পরেছে ঈশ্বরের ফেরেশতারা ।
মিথ্যা,হিংস্রতা আর ক্ষমতার ওহি নিয়ে
সারা দেশ সয়লাভ তার বার্তাবাহক ।
রক্ষকের পোশাকে আবৃত
দাঁতালশোউরগুলো উপঢৌকন দিচ্ছে,
কামের লবন ভরা নারী,
কাঁচা পয়সা,কলের গাড়ি,
ঝলমলে পোঁদ আর পদ ।
কালের এই পিচ্ছিল পথ
বিভৎস নির্যাতন
জয় করো , পবিত্রচেগুয়েভারা ।
এখন প্রয়োজন মিছিলের,
কাবার পথের কাফেলার মতো
পবিত্র এখন মিছিল ।
এখন প্রয়োজন শ্লোগানের ।
আযানের ঐশ্বিরিক,সুমহান ধ্বনির মতো
পূণ্যময় এখন শ্লোগানের ধ্ব্নি ।
বায়োল্যাবে ময়নাতদন্ত করো মানুষ ফেসিস্ট ঈশ্বরের,
এদেশের স্তন্য পান না করা তার পূর্বপুরুষ ।
তাই তোমার আমার
লাল রক্ত পান করা তার
গোপন তাহাজ্জুদ ,
গণতন্ত্রের--
কলিজা চিবিয়া খাওয়া
তার জায়নামাজের এবাদত ।
এখন প্রয়োজন
ভয়ংকর বিক্ষোভের ,জিহাদের আল্লাহু আকবর তাকবীরের মতো পবিত্র এখন বিক্ষোভ।
এখন প্রয়োজন ইনতিফাদার ।
রক্তখোর ঈশ্বরের বিষাক্ত থাবা ভেদ করে
এখন প্রয়োজন মানুষের জেগে উঠার।
( ২ ) মধুলীনা;তুমি স্বৈরাচার
গাব গাছের কাঠের মত
শক্ত আমার মধুলীনার হৃদয়,
এগারো হাজার বার ইসমে আজম পড়ে-
কত নারী ও পুরুষ,শিশু এবং বৃদ্ধরাঃ
অবিরল প্রার্থনায় কাঁদছে
সবুজ বৃক্ষ ও অজর প্রজাতীর পাখিরা-
সেই পনেরোটি বছর ধরে বিলাপ করে বলছে :---
একটু সদয় হও , মধুলীনা
অনেক হয়েছে । এবার
থামাও তোমার প্রনয়ের লীলা।
কত আর খাবে?
খেতে খেতে সাত সমুদ্রের ওপার কিংবা
বনেদী বেগম পাড়ায়
হাতির কানের মত
দাঁড়িয়ে গেছে তোমার উদর;
আর এইদিকে;-
তোমার নবী ও রাসূলগণ যে যার মতো লিখে নিচ্ছে গণিমতের মাল ।
আরেক দিকে
বন্দুক ও বুলেট নিয়ে খুনের মহৎ উৎসবে মত্ত তোমার অনুগত ফেরেশতারা।
আহ ,মধুলীনা !তোমার বাপ তো চলে গেছে গয়নায় লুটিয়ে পড়ে অনন্তের দেশে ।
তুমি তাঁকে দিয়েছ কি প্রার্থনা ও সবুজ মোনাজাত?
নাকি বুঁদ হয়ে, হয়ে গেছো পাপাত্মা ফেড়াউন?
একটু তাকাও তুমি তোমার ফেলে আসা তীর্থভূমি রাজপথেঃ
স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত রক্ত ও ঘামে ভেজা ঢাকার মাটি।
হুলিয়া ও খড়গের-
তীব্র্ আঘাত সয়ে ধপ ধপ করে এগিয়ে আসছে
একদল পবিত্রযোদ্ধা,
আর রক্তলাল চোখ করে
তাদের দিকে ক্ষেপে যাচ্ছে তোমার তোমার রক্ষক-
দোযখের মালেক।
তুমি কবে আর ফিরিয়ে আনবে তোমার সেই মানুষের শরীর?
কবে !
খুলে ফেলে দিবে
বুকের ভিতর হতে দানবের পাপাত্মাহৃদয়?
অপেক্ষায় জনম গেল।
আমি বয়সও পৌছে গ্যাছে শুভ্রদাঁড়িওয়ালা মানুষদের জামাতে ।
( ৩ ) আশেক
সেই কবে একপলক দেখেছি তোমাকে
তখন আমার উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিমে জড়িয়ে ছিল বেতমের গাছ।
তবুও সংন্যাস্ত করে হৃদপিণ্ডের তোড়া এবং নিজেকে
দিওয়ানা মোমিন করে বানিয়েছি প্রেমের হারমাদ ।
সেই কবে পঞ্চালে নির্বাসিত করে এই রুহু,
ধ্যানমগ্ন হয়ে আছি লক্ষীন্দরের ঘরে, আমি এক প্রেমান্ধ মাস্তানা-
সকল জীবন বিচ্যুৎ করে
করেছি যাবোজ্জ্বীবন শুরু,
এখন তিরাশি হাজার তিন শ' তিনিশের মালায়
তোমাকে জড়ায়ে হবো প্রেম আনালের গুরু ।
( ৪ ) কায়িক শ্রমিক
শপথ,সি ব্লক,১২/৩
শহীদ ফারুখ লেন,
তোমার ঘর,
বন
কিংবা জঙ্গল
সবত্রই আমি ছিলেম ।
ছিলেম-
বিশ্বাসের ধবধবে সাদা হৃদপিণ্ড নিয়ে।
শপথ গাবরঙ গাঙচিল রিসোর্টের,
তুমিও ছিলে !
এ এক পেখম তুলে নাচা বিশুদ্ধ কবুতর।
শপথ,সাদা সাদা নরোম দুই বালিশের !
সেকী এক স্বচ্ছ জলরং প্রবাল আবেগ !
ভালোবেসে আমাদের এক শিথানের!
আমি বাকবাকুম বাকবাকুম মগ্নতায় ডুবে ছিলাম
মোহন সুখের এক ঐশ্বরিক পেখম খুলে।
কুড়ায়ে ছিলাম--
অনন্ত পিপাসার অমরাবিলের জল ।
তোমার চোখে ছিলো আদি মা হাওয়ার কাজল ।
আমি কুঁড়ায়ে ছিলাম , কয়েক বিন্দু ঘাম
যেই ঘামে লেখা ছিলো-
পাগলপাড়া অন্ধ এক প্রেমিকের নাম ।
কসম যিবরাঈলের,
আমি সৃষ্টি করতে লাগলাম
ঈশ্বরের প্রশংসায় অনর্গল আয়াত ।
আর মধুপ্রগলভ তোমার নামের বানান ।
শপথ তোমার অই সিনার বাগানের দুই প্রস্ফুটিত গোলাপের-
আমি আঁকতে ছিলাম
তোমার শরীর ব্যাবচ্ছেদের
এক অষ্টমাশ্চর্য্য পট !
হঠাৎ একদিন
দেখি
তুমি ক্ষুধার্ত প্রানি!
তুমি প্রাণি খাও । গাছ খাও ।
আমার বিশ্বাসের ধবধবে সাদা হৃদপিণ্ড-
ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।
থেমে গেলো ঈশ্বর বন্দনা।
তুমি
প্রেমিকা থেকে হয়ে গেলে কায়িকশ্রমিক ।
( ৫ ) অভিশাপ
আমি তো নিলাম অভিশাপ
এই এক জীবনে
সুখ আমার নামমঞ্জুর
আকাঙ্খাংকারা ডান বাম অলিন্দ্যের
হাজতবাসের বেড়ী,-----
আমার বোহেমিনিয়াম নারী।
তোমার জীবন হোক ফুলশয্যার রাত।
তুমি পান করো প্রতিদিন
যমযম গলা জল,
দাপিয়া বেড়াও তুমি জ্যোস্নার জলরংগামোহন তুরগ ।
আর সাধের শরীর হোক
সৌরভ চুঁয়ে পরা গোলাপী গোলাপ।
আমিত নিলাম অভিশাপ ।
আমি ত নিলাম
আমার পাপের দেনার দোযখ-
এই ইহকাল আর ঐ অন্তহীন অনন্তজীবনে।
আমি ত খুলে দিলাম
আমার সত্য মিথ্যার মুখোশ।
শোক আমার খান্দানী ওয়ারিশ সনদ,
তুমি হেলায় নাচিয়ে যাও
তোমার রাজার রাজার মসনদ ।
তোমার জীবন হোক
রাজকোলে ফেঁটে পরা সুমিষ্ট আনারের দানা ,
তুমি গান করো প্রতিদিন
ওয়াইনের কামরংগা ধ্রুপদীরাগে
রাব্বানা রাব্বানা ।
আর সাগরে নৃত্য করুক,
দু'কুল প্লাবনে ভাসা আদিম ফেনা।