কবি : সীমান্ত হেলাল
স্বপ্নবাজের অপমৃত্যু
জীবনের প্রনোদনাগুলো স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আধভাঙ্গা ঘুমের অতৃপ্ততা―ইন্টারভ্যালের বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনে।
হলদে আলোর দ্রবণে সোনালী রেশমের মতো উড়ু-উড়ু- মন। ডিমের খোসায় লেগে থাকা পাথুরে নিষ্ঠুরতা―গোপন অসুখগুলোকে দেয়ালের রঙচিত্রের মতোন জাগিয়ে তুলছে।
স্বপ্নের বাড়ি বেড়াবো বলে আজকাল যুক্তিবাদের আইন শিখছি। জানি―
এখন একচেটিয়া মিথ্যে বলার স্বাধীনতা চলছে! সত্যকে ব্ল্যাক আউট করে একটার পর একটা অঘটনের জন্ম দিচ্ছি! প্রতিদিন নাগরিক অধিকার কিংবা মানবিকতার মহানায়ক সেজে উন্নয়নের মহাসড়কে ব্যানার-ফেস্টুন হয়ে উড়তে থাকি!
বধিগ্রস্থ জড় পাথরের মতো উড়ালস্বপ্ন হয়ে―একদিন নিরুদ্দেশে চলে যাবো। কোনদিন খুঁজে না পেলে―ফাঁড়ি থানার দাখিলকৃত এ্যাফাইয়ারে খুঁজে পাবে―এক স্বপ্নবাজের অপমৃত্যুর উপাখ্যান।
ছাতিমের আক্ষেপ
আমাদের শহরে একটিও ছাতিম গাছ নেই। তবু প্রতিদিন সন্ধ্যার কুয়াশায় ছড়িয়ে পড়ে ছাতিমের মাদকতা!
ডুমুরের ফুল থেকে একটি একটি রেনু খুলে নিয়ে ক্রমোজমে সাজাই ইন্দ্রিয়ের সচল কারুকাজে....
যদিও কখনো ছাতিম চিনিনি বংশপরম্পরায়! পূর্বপুরুষের মতো অন্ধ বিশ্বাসে জেনে গেছি পরিশুদ্ধ আত্মার সুগন্ধিবিদ্যা। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বাতাসে মিশে থাকে অ্যালডিহাইডের নিঃসরণ...
তোতেনখামেনের মমি খুলে মানুষ আবিষ্কার করেছে পৃথিবীব্যাপী ঘুড়ে ফেরা শুদ্ধ আত্মার ঘ্রাণ!
প্রাচীন শিশিতে লুকোনো যে ছাতিম ছিলো-তা অতৃপ্তির আক্ষেপ ছড়ায়―সুগন্ধি কারিগরের পাঁজর জুড়ে!
এ্যাসেনশিয়াল ওয়েলে ফুসফুসের সবটুকু নির্যাস মিশিয়ে-দোকানের পসরায় আজো ছাতিম খুঁজি...
লবণদুঃখ
চোখের জলফোঁটা জিহবায় চেখে দেখি―কতটা লবণের চাকা জমেছে এই বুকে...
ঝালকাঠির লবণখানার নষ্টালজিক পরদে যতটা না খেয়েছে শ্রমিকের ঘাম―তার চেয়েও বেশি পরিশ্রান্ত আমার হৃদয়!
দুঃসময়ের হাতুরিতে থেঁতলানো আর দুঃখ শাণানো মন। কতটা ঝড় বয়ে গেছে; বিশখালী নদীর বাঁক্শাস্ত্রীয় কলায়―তার হিসেব নেই কারো কাছে।
সবুজ বন বনানী আর ভিটেমাটি ক্ষয়ে যাওয়া জীবন―নির্বাক স্থিরচিত্র ছাড়া আর কিবা দিতে পেরেছে উদ্বাস্তু জীবনে। অতীব গোপনে বুকের ভেতর চলতে থাকা যুদ্ধ―কারখানার মিশ্রণনকশার চেয়ে অধ্যবসায়ী। জীবন মজেছে মালিকের সোডিয়াম সালফেডের জালে। প্যাকেটের দামে শ্রমিকের গায়ের সব রস―খেয়ে নিয়েছে আয়োডিন শূন্য পৃথিবী।
মাসকাল পর সমুদ্রের সব আমিষ শুকিয়ে গেলে―বুকে এক লবণের চাকা জমাটবাধে। লবণখানাগুলো বিলুপ্তির এই সময়ে―বুকের পাহাড় ক্ষয়ে একেক ফোঁটা জলের মতো―একেকটি দুঃখ বেরিয়ে আসে...
জন্মগত জেলে
মাঝির ছেলেরা জেলে―আর জেলের ছেলেরা আজকাল মাঝি হচ্ছে। দ্বী-বাচক তত্ত্বের ভিত্তিতে বদলে যাচ্ছে আমাদের সামাজিক জ্যামিতি।
রেজার লাইটের তীক্ষ্ণ আলোয় উন্মোচিত হয়না বস্তুর পুরো অস্তিত্ব। শুধুমাত্র ব্যক্তির শরীর দেখে আবিষ্কার করা যায়না জীবনের চরিত্রগুলো।
দুঃখ-দুর্দশা―হতাশা, পাওয়া না পাওয়া―বঞ্চনার ক্রমপথে হাঁটতে হাঁটতে জীবন মজেছে আহ্নিক কৈতবে। নৌকার গলুইয়ে ফেলে এসেছি আমার ধীবর কৌশল। পূর্বপুরুষের জাত-ধর্ম ভুলে সময়ের তালে পাল তুলে পাড়ি দিতে চেয়েছি উজানে-ভরানদী। জেলে জাতের রক্ত আর সমুদ্রের জলে যে―একই পরিমান লবণ বহমান তা ভুলে গেছি―শহুরে ঝিলের মিঠা স্রোতে গা ভাসিয়ে।
শহরের অলিগলি হাঁটতে হাঁটতে যখন পথ শেষ হয়ে যায়―তখন ঘর্মক্ত শরীর-ডাকে―লবণাক্ত সমুদ্রের বন্ধনায়। মুখে লেগে থাকা ইলিশ ঘোটা ঝোলের স্বাদ―আর স্নায়ুতন্ত্রে লেগে থাকা লবণমাছের ঘ্রাণে মনে হয়; এ জীবন আমার নয়!
কোমড়ে বাঁধা ভারকাছি আর ধাতব জালের কাঠি মনে করিয়ে দেয়―আমি এক জন্মগত জেলে ছিলাম।
অক্সিটোসিন
হলদে বিকেলের একঘেয়ে বিষণ্নতা মানুষকে কতটা গিলে খেতে পারে তা―নীড়ের খোঁজে উড়াল বকের চেয়ে বেশী কেউ জানেনা! বকের ডানায় লেগে থাকা রোদের ঘ্রাণ মুছে গেলে―জীবনময় নেমে আসে এক অনাকাঙ্খিত অন্ধকার!
দুরবর্তী পাহাড়ের সবুজে দৃষ্টি হারানো যুবক―কুয়াশার দ্রবণ সম্পর্কে কি-বা জানে...! সে তো নায়াগ্রা জলপ্রপাতে―সবুজ খুঁজবে হিম হিম জলরেখায়...
হাতের তালুতে গোপন ভাগ্যরেখা খুঁজে কি লাভ বলো―
যে দেহে অক্সিটোসিন হরমোন নেই―সে জীবনই শেষ বিকেলের একরোখা জেদের কাছে হার মেনে যায়...
রোদ র্চচা
চলো; পৃথিবীব্যাপি আরো একবার রোদ চর্চা হয়ে যাক! পুড়ে খাক হয়ে যাক সভ্যতার চার দেয়াল! মানবিকতা চলে যাক যাদুঘরে! আমরা না হয় আমাদের সম্পর্কগুলো―ভালোবাসার ফিনাইলে ধুয়ে তরতাজা করে নেবো।
অর্কেস্ট্রার সিম্ফনি কিংবা বটের ছায়া মাড়াবো―জীবনের বাহুল্য পরিক্রমায়। মাইলের পর মাইল হেটে চঞ্চল করবো―ভারাক্রান্ত পদযুগলের সমিকরন। জ্যামিতিক রেখাগুলো টেনে নিয়ে যাবো―গতিময় যাপনের রুপকল্পে।
সায়ত্বশাসিত মন নাছোরবান্দা হয়ে ফিরবে উত্তরাধুনিক কোন কবিতায়। ছন্দের তুমুল দ্বন্দে হারাবো―পথিকের নির্বাক চাহনীর ক্লান্তি। বিকেলের শেষ রোদ চুষে নেবে―আমাদের সব আদবেলে পরিচর্যা।