সৈয়দ রুম্মানের গুচ্ছকবিতা
সৈয়দ রুম্মানের গুচ্ছকবিতা

কবি : সৈয়দ রুম্মান




কবিতার হাফ বেলা ছুটি

 

কবিতাকেও হাফ বেলা ছুটি দিতে হয়,

অথবা সপ্তাহে একবার, 

মাঝে মাঝে ছুটির অভাবে সে বিগড়ে যেতে পারে

 

গতরাতে সারারাত আমাদের উপোসি রা যায়

কবিতার ছলচাতুরিতে পোয়াতি তোমার মুখে

ভর্তসনার মহোৎসব ছিলো — অথচ

এমনি এক কবিতার আগুন লাগা রাতে তুমি পোয়াতি হয়েছো! 

 

আমার কবিতা একদিন তোমার ঠোঁটে কামার্ত ছিলো, 

তোমার কণ্ঠে তারা হয়েছিলো প্রেমের অন্তিম শীৎকার

নেমে এসেছিল নায়েগ্রাপ্রপাত

 

কবিতার উৎপ্রেক্ষা  মাত্রায় তুমি ছিলে তুখোড় রাঁধুনি

অথচ এখন তোমার লবণ  তেলে হয় তুমুল বিসম্বাদ

আমি তবু ছুটে যাই কবিতার দিকে ;

তুমি চাও কবিতার ছুটি !

 

কবিতার ছুটি হলে আমি আর বৃষ্টি হবো না,

কবিতার ছুটি হলে আমাদের আর দিগন্ত হবে না! 





ফিরিয়ে দাও মাতৃ জঠরে 


আমি দেখি সূর্যাস্ত হতে হতে তোমার বুকে আমার পা। নপুংসক আমি ও আমরা যারা তোমার কাছে আরাধ্য এখন, তুমি চাও সেজদায় নত হই; আর আমরা একেকটি ভেড়া নিয়ে করি নাজুক নৌকায় ধস্তাধস্তি। 

আমাদের ঠিকানা নেই, আমরা নতজানু নিজেদের অবিশ্বাসের বিশ্বাসে। মাটি বলে কিচ্ছু নেই—থেমে থাকার আস্তানা শুধু। তবু কোন ঘোড়া ও গাধার পিঠে এইসব দিবাঘুম। ঘামগুলো ঝরে পড়ে আমাদের আহারেই আর আমরা শুধু বলি—আহা আহা আহাহারে...!

কোন দিকে, কোন তীর্থে তীর মেরে জপ করো নাম; ভাঙা সাঁকো গড়ে দেখো জোড়া দেওয়া সাবমেরিন-গ্রাম। সেসবে ডাইভার্সন—তারও আরও অনেক চোরা গলি; আমরা ভড়ং নিয়ে এভাবেই উল্টো পথে চলি। 

আর তুমি এখন অসহায়, ভাবো বসে কই গেলো মাইকেল অথবা মিকাঈল; তোমার মিথ্যে ভয়ে ইস্রাফিল এখনো আছে নেশার তন্দ্রায়—এসব মিথের কথা, ভেজাল মিমিখ। বিপরীতে আমি আজো বিবিধ সঙ্গমে নিজেকে পারঙ্গম করি। তুমি থাকো মনোলগে তবুও আসিন। 

মানুষের কলকব্জা আমার অণ্ডকোষে কেনো এই তুলছে বলক! আমি তো পাখি-ভাষা, নদী ভাগ কিংবা বোররাক সওয়ার হয়েই কাটিয়েছি বিগত জন্মকাল—আমার বিবর্তনে আর কতো ফসফরাস খুঁজো? এবার ক্লান্তি ডাকো, ফিরিয়ে দাও মাতৃ জঠরে। 




দইমেয়ে


তার ডাকে সাড়া দিতে চলছে সাঁড়াশী,
কপোল দখল করে শিকাগো ও টেমস্...
ব্যবধানে মহাদেশ, তবু প্রেমে বাঁধা;
মেয়ে তুমি বঁধূ হলে না হলেও রাধা।

শুরুর দীঘল পথে গোপন বাখান...
চপল স্বপনে রাজ, বাহিরে স্বনন;
বসত মনের বাড়ি, মেঘের দ্রাঘিমা—
ঋতুর পরাগে খোঁড়া বেদনা বিবাগী!

দরজায় পড়ে ডাক, দূর-আলাপন;
অথচ দেরাজ জুড়ে দিনলিপি-ঢিবি,
বেহিশেবি সময়ে সে সেতু জাগানিয়া;
দিনের উদর জুড়ে পাহাড়িয়া ভর...

মোচড়ানো চাঁদ খুলি, সে নিজেই আধা,
দইমেয়ে বঁধূ হলে না হলেও রাধা।



দ্বৈভাগ


তার দিকে ছুড়ে দিলাম একটা জলের পেণ্ডুলাম। 
ধরার আগেই ধরাশায়ী হয়েগেলো প্রার্থনার পাখা; 
বিন্দুরা সংসর্গ নিয়ে পাতায় সংসার। 
কতো ধ্বনি উড়ে যায় ইথার ডানায়।

একই তাঁতে দিব্যলোকে সৈন্য ও মহারাজ—
পতঙ্গ প্রমোদ নৃত্যে ঢঙ্গি জাঁহাবাজ। 
মুখের ফ্যাশনচিত্রে লাগালাগি লগি, 
হারানো না-হারার মাঝে কতো তুঘলকি। 
তালুতে পঞ্জিকা দেখে আগুনের খেলা, 
সাঙ্গ জেনেও ঘুমে পান্থ একেলা। 
হোমোদের পরম্পরায় দুগ্ধবতী রাগ; 
পুষ্পপত্রে বিচরণে যতির পরাগ। 
বন্ধুর আকাশ পথে ভৈরবী বিরাগ, 
কেবল...
ধূলিরা চিহ্ন মেপে করে না দ্বৈভাগ। 





চিরনিঃসঙ্গতায়


আমি উড়তে উড়তে যখন ধপাস করে পড়লাম তখন দেখি, উপরে আর নিচে কেবলই আসমান, শুধুই আসমান, খালি আসমান। এতো এতো আসমানের মাঝে আমি ঘুরি এতিমর লাখান। আমার বলিষ্ঠ হাতে একটা কামড় বসাই—রক্তে আর কোনো ফস ফস নাই। পিঙ্গল চোখগুলো অদ্ভুত এক বেগে ঘুরতে থাকে— জ্বলজ্বলে লালাভ আঙটার মতো।
আমার দরাজ কণ্ঠের ডাক আমার সঙ্গেই করে হ্যালুসিনেশনের খেলা। আর আমার শ্রোতারা সব নিজেই নিজের ঘরে ব্যতিব্যস্ত  অঙ্গুলিযন্ত্রের ক্রীড়ায় আণ্ডা ফোটায়। নিস্তরঙ্গ আমি থাকি আসমানে আসমানে চিরনিঃসঙ্গতায়। 


শহর ছেড়ে যাই 


পাতাঝরানির ক্ষণে খুঁজে খুঁজে ঠাঁই—
শহর ছেড়ে যাচ্ছি এবার যাই 
আগের মতোন ভালো থেকো—গুডবাই

টুংটাং করা রিকশার খোলাহুড
চিনাবাদামের খোসা খুলে প্যারাশুট,
খুনসুটি করা কলেজের করিডোর
রাত্রি পেরিয়ে পাশাপাশি ছোটা ভোর।
পাতাঝরানির ক্ষণে খুঁজে খুঁজে ঠাঁই—
শহর ছেড়ে যাচ্ছি এবার যাই 
আগের মতোন ভালো থেকো—গুডবাই

বৃষ্টির ফোঁটা ভাঙা টেনশেড ঘরে
ট্রেনে বসা মুখ মুখোমুখি মনে পড়ে
রেসকোর্স রেসে রুমালে রৌদ্র শুঁকে 
লাল চুড়ি হাত—না-ছোঁয়ার ক্ষত বুকে;
পাতাঝরানির ক্ষণে খুঁজে খুঁজে ঠাঁই—
শহর ছেড়ে যাচ্ছি এবার যাই 
আগের মতোন ভালো থেকো—গুডবাই

দীর্ঘ সড়কে গল্পের কানামাছি
চোখ বুজলেই আজো থাকা কাছাকাছি
খোঁপায় জড়ানো বেলিফুলে জ্বলে তারা
পলকে সেলাই...ঘড়ি দেখে দিশেহারা!
পাতাঝরানির ক্ষণে খুঁজে খুঁজে ঠাঁই—
শহর ছেড়ে যাচ্ছি এবার যাই 
আগের মতোন ভালো থেকো—গুডবাই

সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান