ছাব্বিশে মার্চের কালো রাত
স্তব্ধতার বুক বিদীর্ণ মানুষের ভয়ার্ত আর্তনাদ!
অলিতে গলিতে অগণিত লাশ
পিচঢালা কালো পথে রক্তেস্রোত
ধর্ষিতার কন্ঠছিড়ে আসা অসহায় চিৎকার
মা-বোনদের ক্ষত-বিক্ষত বিবস্ত্র শরীর
আর কঁচি শিশুর ব্যানেট বিদ্ধ নগ্ন বুক থেকে
তপ্ত রক্ত যখন ঝরছে
ঠিক তখনই সেই রক্ত ছুঁয়ে
মাতৃমৃত্তিকার পবিত্রতা রক্ষা আর
প্রিয় প্রত্যাশিত স্বাধীনতা আনবার জন্যে
সে দিন হিমাদ্রি কঠিন প্রতিজ্ঞা ছিল আমাদের।
সূর্যসেন, তিতোমীর, সালাম, রফিক,
বরকত আর জব্বারের রক্তের অস্থিত্ব
সে দিন আগ্নেয়গিরির অগ্নোৎপাতের মতই
জ্বলে জ্বলে উঠে ছিল বাঙালী সত্তায়।
আমাদের সর্বস্ব নিয়ে মত্ত-মাদল রোষে
শত্রু নিধনে পাগল ছিলাম আমরা কাল-বৈশাখী বেগে।
জাতি ধর্ম গোত্র নির্বিশেষে, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে
দু’লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হারানোর
করুণ কান্নায় বাংলার বাতাস ভারি করে
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে তেরশো নদী প্লাবিত করে
পেয়েছিলাম আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা;
আমরা পেয়েছিলাম রক্তমাখা প্রাণের প্রিয় পতাকা।
বিজয়ের উচ্ছ¡সিত আনন্দের উর্মিমালা
সে দিন বাঙ্গালীর অস্তিত্বে
উন্মাতাল হয়েছিল অসম্ভব বিস্ময়কর শক্তিতে।
বিধবা বধুদের চোখের জল
সে দিন স্বাধীনতার সূর্য-রশ্মিতে হীরের টুকরোর মত
জ্বল জ্বল করছিল; স্বাধীনতাকে পেয়ে যেন তারা কিছুই হারায়নি;
সন্তানহারা মায়ের চোখ
জলে ভরে গেলেও জ্যোৎস্নায় হরিণের চোখের মত
ঝিক্মিক করে ওঠেছিলো
স্বাধীনতার মহানন্দে সে দিন।