কবি: নূর-ঊন-নাহার মেরী
শ্রাবণের আকাশ চিরে
অঝোর ধারায় বৃষ্টি যখন ঝরে
মন আমার ছুযে যায়
আবাল্য স্মৃতিঘেরা ঐ হারগিলার চরে-
সে এক নিভৃত পল্লী গ্রাম,
যেই খানেতে বসত করতো
আমার পূর্ব পুরুষেরা,
যে মাটিরতৃণ ঘাসের বুকে
মুখ রেখে ঘুমিয়ে আছে
আমার পূর্বসুরিরা
যে মাটিতে পোতা আছে আমার নাড়ী
সেই মাটির অমোঘ আকর্ষণে
মন আমার বার বার ছুটে যায়
ঐ হারগিলা চরের পানে
আঁকা বাঁকা সরু মেঠো পথ,
বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তর
সোনালী ধান ক্ষেতের মাঠে
বাতাসের হিল্লোল।
যমুনার বুকে, পার উড়া নৌকায়
মাঝির ভাটিয়ালি সুরের মুর্ছণা
চিত্ত করে চঞ্চল, ব্যাকুল হয় অন্তর
ঐ হারগিলা চরের পানে
মন আমার ছুটে যায় বারেবারে,
চরের মেয়ে আমি, চরে করি বাস
এই পরিচয়ই আমার বড় অহঙ্কার,
হারগিলা চরের মাটি ও মানুষের সাথে আছে আমার এক আত্মিক অঙ্গিকার।
এর ধুলি বালু কণা আমার চেতনার সাথে
মিলে মিশে হয়ে আছে একাকার।
পৃথিবীময় ঘুরেছি আমি
দেখেছি তার কত শত রূপ
আমার সবুজ, শ্যামল
বাংলা মায়ের মত অমন রূপ অপরূপ
দেখিনি তো কোথাও আর-
আটলান্টিকের পাড় ঘেঁষে
পাঁচতারা হোটেল “হলি ডে-ইন” এর কক্ষে বসে
নিঃসঙ্গ সেই সব দিন রাত্রিতে
দু’চোখ বন্ধ করে স্বপ্নের ঘনঘোরে
আমি হেঁটে বেড়িয়েছি
শিশির ভেজা ঘাসের উপর আলতো পায়ে পায়ে।
হারগিলা চরের নদী, নালা, খাল, বিল এর দু’ধার দিয়ে
ছুটে বেড়িয়েছি অনাবিল এক সুখময় উল্লাসে
মাতাল হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়েছি, করেচছ তাকে আলিঙ্গন
বাঁধন বিহীন বন্ধনে,
হৃদয়ের সকলস্পন্দ্বনে,
অনুভব করেছি আমি শেকড়ের গভীর সন্ধান।
“ম্যান হাটনের” সু-প্রশস্ত পথ ধরে,েআলোয় ঝরমলে নগরে বন্দরে।
যখন যেথায় গিয়েছি, দূর দূরান্তে,
নীল নিলান্তে
পৃথিবীর সকল প্রান্তরে,
বাহিরে বিংবা অন্তরে।
নিঃশ্বাসে এবং প্রশ্বাসে
আমার উপলব্ধির সকল বিশ্বাসে
আমি কেবলই পেয়েছি,
আমার হারগিলা চরের স্যাঁত স্যাঁতে
মাটির ঘ্রাণ-কারণ, আবহমান
বাংলার কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির
ঐতিহ্যে লালিত, পালিত
আমি যে এক চরের মেয়ে
হারগিলা নামক পাখির নামে
নাম-যার।