সাদা টিপ
আজ সে সেজেছে,
লাল শাড়িতে কালো ডোরা।
কপালে সিলিকন ভরা সাদা টিপ,
নিয়ন ল্যাম্পের নিচ দিয়ে হেটে চলা।
বাহ্! আজ কি মায়াবী চাহনি।
তাকে অনেকবার দেখেছি
এ পথ ধরে হেটে যেতে।
জানি -
নিশির বাতাশে, বিকল ট্রেনের গহ্বরে,
অভিশপ্ত উল্লাসে বিচ্যুত হবে কেশ সজ্জা।
এই ট্রেন, স্টেশন, নিয়ন বাতি,
আর ওদের কানাঘুষা।
যাদের প্রতিটি ভোর আসে দ্বারবদ্ধ
ঘরে,
ঘুমের আয়োজনে।
তবে সে আজ সেজেছে খুব করে।।
তবুও তুমি আসোনি
শীতের কুয়াশা ঘন সন্ধ্যায়,
সমস্ত কর্মব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়েছি।
এই মৌন -নির্জনতায় আর নয়,
একটু উষ্ণতা চাই আমার।
মেটোপথ, সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার,
পথ হেটে বহুদূর।
সোয়েটারের উপর মায়ের চাদর মোড়েছি আজ।
নিঃশব্দ রাস্তা, শা শা বাতাশ
নিজের পায়ের শব্দে ভুতুড়ে গন্ধ।
সারি সারি তালগাছ আর পেচাদের আস্তানা
ক্ষীন ভয়কে মাড়িয়ে, দাড়িয়েছি এ বৃক্ষ তলায়
তবুও তুমি আসোনি।
প্রথম পরশ
তুমি হেসেছিলে সেদিন
মুক্ত মনে তাপিত হৃদয়ে।
ক্ষনিক দাড়িয়ে,
মুচকি হাসিতে আমিও তোমায়
দেখেছি ঐ মিনিট দুয়েক ধরে।
ভাবি আজ এ চক্ষু খুলিয়া
তুমি বাস্তব, তুমি আজ হাতের মুঠোয়।
তবে তুমি সেই?
যারে পোষেছি এক যুগ ধরে,
একাকী হাসিয়েছ পাগলের মত করে,
কল্পিত গগনে অঝর ধারার বর্ষণে,
ময়ূর পেখমের বিচিত্র্য রঙ্গে।
সেই তুমি আজ আমার দৃষ্টিমুখে
ঘুরেছি তোমার পাশ ঘেঁষে ঘেঁষে
তুমি হেসে ছিলে শব্দহীন ভাবে মাথা নিচু করে
বাকশূন্য পরস্পরে।।
কত শতদিনের ভাবনা-মায়াবীর এই মেয়ে
নিশব্দে ঐ হাত ধরেছি চেপে।
সেদিন দেখেছি,
সব রসায়ন পাঠ ঐ কম্পিত অধরোষ্ঠে
আখিকোনে ভীত এক সঞ্চিত ঊল্লাস।
আমি এখনও দিন গুনি
আমি এখনও দিন গুনি
প্রতিটি দিনের প্রতিটি সময় আমাকে ছুঁয়ে যায়
এই হতভম্ব বর্তমানটা কখনই কাম্য ছিল না ,
বুকের ভিতর এক ধরনের ব্যথা অনুভব হয়
ব্যথা আগেও ছিল, কিন্তু এতটা তীব্র নয় |
আমি এখনও দিন গুনি
এক দুই, হাজার দিন বহে যায়, নিদারুন অনুভূতি দিয়ে,
করাল গ্রাসে অন্ধকারের অভিশপ্ত ছায়ায় দিন-অতীপাত
ঐ লগ্নভষ্ট গন্না |
আমি এখনও দিন গুনি
এ উতপ্ত মরুবুকে, শ্যামল ছায়ার খুজে
লাঠি ভর করে ছুটে আসা বৃদ্ধের ন্যায়
ধূলিময় মুখশ্রী ,কঙ্কাল-কাহিল শরীল আর লম্বা আলখাল্লা দুলিয়ে
দূরবীন পথ হেটে আসা এ ছায়ায়
জীবন সায়াহ্নে |
সে যে আমার পথের পাথেয়,
আমি হাটি তারই পথে
বুকের পাজর খুলে,রক্ত সিক্ত করে এ ভূমি |
আমি এখনও দিন গুনি
সে দিনের, যে দিন ধূলাময় মুখশ্রীর
শ্শাশত সুন্দর মানুষটি শীতল ছায়ায় বসে হেসে হবে কুটিকুটি |
আজও হাটি আমি তারই লগ্ন খুজে
এ দুঃখ প্রসবের লগ্ন |
অভিতপ্ত হৃদয়
যাপিত জীবনের নিঃসঙ্গতার
প্রতিধ্বনিতে
তুমি কেঁদেছ সহস্র অশ্রু ধারায়।
দিশাহীন চোখের চাহনি-
খুঁজেছে উষ্ণ-শীতল মায়া।
বন্ধুতের মায়া ছিন্ন করতে পারিনি-
তোমার অসহায়ত্বের সীমানা করতে চূর্ণ।
অভিন্ন রেখায় জীবন চক্রে
এঁকেছিলাম মায়ার পদচিহ্ন।
কত অন্ধকার রজনী রঙিন করেছি
কত নিশি কেটেছে রং লাগা স্বপ্ন তুলিতে
দোয়েল ডাকা ভোর দেখেছি বারবার।
তোমার অভিজাত্যে ছিল ভয়, ছিল সংশয়।
সুযোগে এঁকেছ তুমি ভিন্ন এক বক্ষ
আজ,
তুমি মিথ্যাবাদী, অভিসম্পাতিত।
বৃদ্ধ পিতার কুমারী মা
রেল জংশনের পাশ ঘেঁষে
জংগলে ভরা পতিত জমি।
বটবৃক্ষের ন্যায় মস্ত মাথা করে
আজও দাড়িয়ে আছে কিছু আমের গাছ।
পাশে কৃষ্ণচূড়া, যার খোপা ভরা লাল ফুল।
নিচে জটলা বাধা ঘাস, গত রাত্রির বৃষ্টিতে অনেকটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
পাশেই স্লিপার আর আবর্জনার স্তূপ,মৃত শিয়ালের গলিত লাশ।
ভোরের সূর্য লগ্নে এখানে কুকুর আর কাকের বাড়ে আনাগোনা।
গাছের গোড়ায় স্থান করে নিয়েছে বৃদ্ধ।
কঙ্কালসার দেহ, শুয়ে আছে
মাথা পেতে এক কিশোরী মায়ের কোলে।
কত দিন হয়নি খাওয়া তাদের
দুবেলা পেটপুরে, হয়নি সচ্ছ পানিতে স্নান।
এ কুমারী তব -
অর্ধ নগ্ন দেহে পড়ে আছে স্নেহ বাধনে।
ভালবাসা আর আবেগে,
জল তুলে দিচ্ছে পিতার দু'ঠোট খোলে।
ইনিই তো মা-
যিনি কৈশরের উচ্ছলতাকে দিয়েছে জলাঞ্জলি,
যিনি যৌবনের টানকে দিয়েছে বিসর্জন,
যিনি পুরুষের লাল চোখের মায়াজালে জড়ায়নি।
আজ বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে
ক্ষণ গননার ক্ষণে
খোলা আকাশের নিচে -
বসে আছে এ মা।।