বসন্ত
সে তুমি কোকিলের কন্ঠে সুরের সুধায় -
কোন ষোড়শী মেয়ের হৃদয়াঙ্গম।।
ভোর কেটে যাওয়া প্রথম রোদে
পাখামেলে প্রেমুময় ঘুঘুর সরাজ ডাক।।
আমার নিসঙ্গতা দেখতে দেখতে ওরা দুঃখ করে,
দুঃখ করে আমার বসন্তবৈরির ত্রিশটা চক্র দেখে।।
করুনাহীনার একদিন
আমার অনুভূতি কাতরতায় তুমি ছিলে রুক্ষ।।
আমি সেদিন নিশাখোরের মত শক্তিহীন,
কাঁপাকাঁপা হাত নিয়ে তোমার করুনার প্রার্থী ছিলাম।
ছিলাম নির্বাক, স্থির, আবেগার্ত।
সেই ক্ষণ পার হয়েছে স্বাভাবিক পৃথিবীর যাত্রায়।।
অনুভূতিগুলো আবারও হয়তো ঘনীভূত হবে,
আবারও কোন একদিন নিশাখোরের মত -
হন্য হয়ে খুজবো, তবে তোমাকে নয়।।
দুঃখ করোনা
দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়েছে গোটা ছ 'য়েক কুকুর, আরো কয়েকটা তাদের পাশেই দাড়িয়ে, কোনটা বা শুয়ে আছে তাকিয়ে।
এ স্টেশন, ব্যস্ততা, ট্রেনের সিডিউলে তাদের কিচ্ছু আসেনা।
এই বিশাল শিমুলগাছটিও এখানে দেখে নির্জনতা, দেখে ক্ষীণ আলোর নিচে ক্ষণিক
বসে থাকা কিছু লোক, যারা শিমুলের ফুলগুলোকে দু' পায়ে মাড়িয়ে ক্ষত করে, আবার
উপরে তাকিয়ে এ ফুলেরই প্রশংসা করে।
মাথায় জ'টা নিয়ে ঘুরছে দেখো, কয়েকজন। চলছে জীবন তার মত।
তুমিও এসো, তুমিতো নয় জ 'টা মত, বেওয়ারিশ কুকুর গুলোর মত, নয় থেতলে যাওয়া কোন শিমুলের কাচা ফুল।
একবার ঘর ছেড়ে চলে এসো,
দুঃখ হবেনা তাতে।।
স্পর্শ
শীতের সকালে কচি রোদে মুরগির সদ্যফোটা বাচ্চাদের লম্ফঝম্ফ,
মখমলের মত শরীরে শৈল্পিক দৌড়ে নাচে যে ছানা।।
মনে হয় কোন এক হিমশীতে কুয়াশা ভেদ করে যতটুকু চাদ দেখি,
তার আলোতেই স্মৃতিক্ষণ,
স্পর্শিত হাত,
কুসুমের মত নরম।।
সাদা দাড়ি
একসময় সাদা দাড়ির লোক দেখলে দাদা বলে সম্বোধন করতাম। বাবাও দাড়ি রেখেছেন বছর দশেক হবে। ধীরে ধীরে বাবার দাড়িও সাদা হচ্ছে। এখন সাদা দাড়িওয়ালা লোকের সাথে চাচা বলে সম্বোধন করি।।
আসছে দিন খুব নিকটে, যেদিন নিজেই সাদা দাড়ি নিয়ে ঘোরব!!
নষ্ট সূচি
নগরীর নারী, রাস্তা আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বেশ থমথমে গুমোট ভাব আর অনিশ্চয়তায় চলমান সময়।
দিনের প্রহরীরা নিদ্রারত, সময়ের পালাবদল
ঘুমন্ত নগরীর সাক্ষী হয় আবছা আলোর ল্যাম্পপোষ্ট।
ভিজে জবুথবু মাদী কুকুর, দামি গাড়ির হেডলাইটের প্রতিফলিত আলো, বিঘ্ন সিডিউল।
অট্টালিকার ভেজা দেয়াল, স্বচ্ছ কাচের জানালা - সব নিশ্চুপ, বোবা প্রহরী
স্যূয়ারেজের পানিতে মিশে যায় কয়েক লক্ষ শুক্রাণু, লবনাক্ত ঘাম।
আমার কঙ্কাল
আমার কঙ্কাল দেখতে এসেছো, তাই না?
কিন্ত আমার কঙ্কালে এখনো প্রাণ আছে।
এই দেখো, নাড়াচাড়া করছি।
এইতো তোমায় আমি দেখছি।
শুনতেও পাচ্ছি তোমার অব্যক্ত অভিশাপ গুলো।
নারী
হিমবাহ থেকে আগত বিষন্ন প্রবাহ,
স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালে খানিকটা আমার প্রতিচ্ছবি,
বাকিটা ওপাশের আবছা দৃশ্য
তবু দেয়ালের গায়ে চোখ লাগিয়ে দেখি।।
ঝাপসা হলেও
স্পষ্টত সেথায় দিয়াশলাই কাঠির স্তুপ।
অগ্নেয়গিরির মৃত মুখ -
অপেক্ষায় রয় সময়ের, অভিসপ্ত সময়ের।।