হুমায়ূন নেই, হুমায়ূন আছেন
হুমায়ূন নেই, হুমায়ূন আছেন

নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন ২০১২ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু তিনি আজও বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে। কিন্তু মৃত্যুর ছয় বছর পরও তার বইয়ের বিক্রি কমেনি। হুমায়ূন আহমেদ যে হারিয়ে যাননি তা বইমেলায় গেলে বোঝা যায়। মানুষের মন থেকে তাকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। আর সব জায়গা থেকে হয়তো তিনি হারিয়ে যাবেন। কিন্তু পাঠকের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন।

জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক সর্বশেষ সশরীরে মেলায় এসেছিলেন ২০১২ সালে। তবে বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদ সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তার অগণিত ভক্তের হৃদয়ে তিনি যে বেঁচে আছেন সেটার প্রমাণ মিলেছে বইমেলার অন্যপ্রকাশ স্টলে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম দিন থেকেই অন্যপ্রকাশে ভিড় ছিল অন্য স্টলের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ একটাই, অন্যপ্রকাশে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। আছে হুমায়ূন আহমেদের যত বই।

গতকাল সোমবার স্টলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাতছানি দিচ্ছেন তার অগণিত পাঠক-ভক্তকে। তবে সেখানে অধরা হুমায়ূন আহমেদ!

অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, এবার মেলায় বই বিক্রি ভালো হচ্ছে। আমাদের প্রকাশনী থেকে উপন্যাসের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। আর অন্য যে কোনো লেখকের চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের বিক্রি বরাবরই অনেক বেশি। হুমায়ূন আহমেদের পুরনো বইগুলো এখন ভালো বিক্রি হচ্ছে। যারা আগে পড়েননি তারা এখন কিনে পড়ছেন।

কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমা ইসলাম মিনার সঙ্গে। তিনি বলেন, হুমায়ূন এখনো মেলার প্রাণ। তার বই না থাকলে মেলাকে শূন্য মনে হতো। তিনি নেই তবে তার বই আছে। তাই মেলাকে আমার কাছে প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে।

কলেজ শিক্ষার্থী রুমানা ইসলাম বলেন, ক্লাস সেভেন থেকে হুমায়ূন পড়ি। তখন থেকে আমার বেশ আগ্রহ হুমায়ূনে। তাই পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই কিনেছি হুমায়ূন আহমেদের বেশকিছু বই। এরমধ্যে আছে কাঠ পেনসিলে আঁকা পরী, নন্দিত নরকে, দেয়াল, মিসির আলী আর হিমু সিরিজের কিছু বইও।

অন্যপ্রকাশের স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলেন, শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, এই লেখকে আগ্রহ আছে সব বয়সী মানুষের। আর তার প্রমাণ মেলে অন্যপ্রকাশসহ হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশনাগুলোর কাছে গেলেই। পাঠকরা এসব প্রকাশনা থেকে নিচ্ছেন নিজেদের পছন্দের বইটি। তবে তাদের বেশি আগ্রহ হিমু আর মিসির আলী সিরিজে।

মূল মঞ্চের আয়োজন: গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনুপম হায়াৎ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আমানুল হক, লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং শিবলী মহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল লোহানী।

কামাল লোহানী বলেন, বুলবুল চৌধুরী নৃত্যের পাশাপাশি প্রাচী নামের উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। তার নৃত্য কেবল প্রায়োগিক শিল্পকলা নয়, একই সঙ্গে সমস্ত অসুন্দর এবং কলুষতার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদের নাম।

এ ছাড়াও কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং চঞ্চল আশরাফ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম সারোয়ার এবং মু. আহসান উল্লাহ ইমাম খান তমাল। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী চন্দনা মজুমদার, সেলিম চৌধুরী, পাগলা বাবুল, রুশিয়া খানম এবং কোহিনুর আকতার গোলাপী।

লেখক বলছি কর্ণার: প্রথমবারের মতো এ বছর ভালো মানের ৫ জন লেখককে ২০ মিনিট করে নিজের বই নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেক পাড়ে ‘লেখক বলছি’ কর্ণারের এ আয়োজনে গতকাল সোমবার নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন হোসেন উদ্দীন হোসেন, হাবিব আনিসুর রহমান, ড. তাশরিক-ই-হাবিব, মশিউল আলম এবং শিহাব শাহরিয়ার।

মোড়ক উন্মোচন: গত বছরের মতো এবারো মেলায় রয়েছে মোড়ক উন্মোচন কর্ণার। প্রতিদিনই অনেক বই আসলেও মোড়ক উন্মোচন করান গুটিকয়েক লেখক। তবে যারা এ কর্ণারে এসে মোড়ক উন্মোচন করাচ্ছেন তাদের বক্তব্য শুনে অনেক পাঠক আগ্রহী হচ্ছেন সেসব বই কিনতে। আর এ কারণে মোড়ক উন্মোচনের আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে। গতকাল সোমবার ৯টিসহ এখন পর্যন্ত মোট ১৬০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।

নতুন বই: অমর একুশে গ্রন্থমেলার গতকাল সোমবার ছিল একাদশতম দিন। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১২৮টি। এর মধ্যে মধ্যে গল্প ২১টি, উপন্যাস ১৬টি, প্রবন্ধ ১০টি, কবিতা ৪৯টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৪টি, রচনাবলি ১টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৪টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস বিষয়ক ৫টি, রাজনীতি ১টি, স্বাস্থ্য ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ৫টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে জি এম ফরিদের ছোট গল্প ‘কুহকের দিনরাত্রি’, সময় প্রকাশন থেকে পিয়াস মজিদের ‘স্মৃতিকথা নির্জন নোটবুক’, চিলড্রেন বুক কালেকশন থেকে আনিসুল হকের ‘গুড্ডু বুড়ার নতুন বোকামি তারপর’, সময় প্রকাশনী থেকে সৈয়দ শামসুল হকের নাটক ‘ফজল শেখের শেষ ম্যাজিক ও অন্যান্য’, দোয়েল প্রকাশনী এনেছে সাংবাদিক রেজাউর রহমান রিজভীর গ্রল্পগ্রন্থ ‘ভালোবেসে চলে যেতে চাই’ কথাপ্রকাশ থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী’র প্রবন্ধ ‘গণতন্ত্রের অভিমুখে’, বাবুই প্রকাশনী এনেছে সাংবাদিক আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থ ‘পরাণে রাখিও’।

আজকের আয়োজন: অমর একুশে গ্রন্থমেলার আজ ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং শেষ হবে রাত ৯টায়। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কবি-অনুবাদক ‘মনির উদ্দীন ইউসুফ: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শফিউল আলম, রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং মোহাম্মদ আবদুল হাই। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান