হেনরী স্বপন
কবি জীবনানন্দ দাশের বরিশালে, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারীর জন্ম। এখানকার নদী-মাঠ-বন-বনানী-ঘাস-পাখি-পুকুর-পতঙ্গ আমাকে ‘রূপসী বাংলা’ দেখিয়েছে। সৌভাগ্য ! এই যে, জন্মাবধি এখানের মাটি কামড়ে বেঁচে আছি। বরিশালের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম বহুবছর। এখন অবসরে লেখালেখি নিয়ে আছি। স্ত্রী : মারিয়া লাকী সরকার ও একমাত্র কন্যা : কসটিকা চিনতী, এই আমাদের সংসার। প্রকাশিত গ্রন্থ : কীর্তনখোলা (একফর্মা ১৯৯৪)। মাটির বুকেও রৌদ্রজ্বলে (একফর্মা ১৯৯৪)। বাল্যকাল ও মোমের শরীরে আগুন (দুইফর্মা ১৯৯৮)। জংধরা ধুলি (২০০১)। কাস্তে শানানো মোজার্ট (২০০৪)।ঘটনার পোড়ামাংস (২০০৯)। হননের আয়ু (২০১১উড়াইলা গোপন পরশে (১৪১৮)। শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১৫)। মৃত মনিয়ার মতো (২০১৮)। গদ্য সংকলন : ছোটকাগজের ক্রান্তিকাল ও অন্যান্য লিটেলম্যাগ: জীবনানন্দ কবিতাপত্রের সম্পাদনা এখন অনিয়মিত !
শব্দ শুনি, গার্মেন্টস ভেঁপু...
.
বাহুটানে টের পাই, ভায়োলিন মদিরায়
ঝুকে আছ তুমি;
হিজলের থোকায় দুলছ?
একা নও, সেখানেও দুজনার দেহসুর ভূমি।
নিরবতা ভেঙে যে দেহের—প্রার্থনায় জেগে ওঠা সাঁই;
আমার আয়ূ ঠুকরে খাওয়া ঈগলের ঠোঁটে—লেগে থাকা,
ষাঁড়ের চুম্বন লড়াই।
এখনো তুমি চিনির বোয়াম ভর্তি ঘ্রাণ খুলে গলে পড়া
জিলেপির রসে...
জেনে গেছি, মৃত্যুর মোড়কে আছ...চঞ্চল মৃগ কস্তুরি—
হরিণের বশে।
রাত্রি তোমার তাঁতির সুতোয় বোনা সেলাইয়ের কল;
শব্দ শুনি, গার্মেন্টস ভেঁপু...আখ মাড়াইয়ে বেজে ওঠে
শেকল বন্দি পায়ের মল।
.
তোমার দূর্গ বাংকারে আর যুদ্ধ সাঁজোয়া ঘাঁটিতে;
মিসাল ছুড়লে বিমান আমার বিধ্বস্ত হয় মাটিতে।
ভগবানের বুকেও...নি:শ্বাসের অসুখ!
.
করপোরেশন গাড়ি ভর্তি ভেঙে নিচ্ছে তোমার আমার সুখ;
বিলবোর্ড মোড়ে, বিপদ সংকেত দেখি: ভগবানের বুকেও...
নি:শ্বাসের অসুখ!
.
ঘুড়িওড়া রৌদ্র খুঁজি, কার্নিশে-ছাদ ঘেঁষাঘেঁষি
বাড়ছে নগরায়ন—
পুরাতনের টের পাই না, কিসের নবায়ন?
দূর-অন্তে তো দাঁড়িয়ে আছ—শান্তগহিন জারুলগাছ;
কাছেই গির্জা গথিক চার্চ ঘন্টা বাজায় বারোমাস...
ফুটপাত যে মাতাল পথিক নিয়ম ভেঙে চলে,
ধেই ধেই ধেই হাঁটি চলি, জ্যোৎস্না দেখি:—
আমিও তাদের দলে।
.
ভাগ্যিস এবার ম্যানহোলে সব ঢাকনা দেবার ব্যস্ত অজুহাতে;
তালতলী ব্রিজ মগ্ন তোমার জোছনা জাপটে ঘুমাই আমি...
কাফন কাপড় রাতে।
নগর নারীও, জ্যোৎস্না অভিমানী সেজে—
ঝড়ঝঞ্জা বৃষ্টিজলে উপচে উঠবে রতিজমে; কষ্ট স্যুয়ারেজে।
নতজানু সব টুকরো নরোম মাটি
.
মনের সীমানা খুঁজে খূঁজে ক্লান্ত দুপায়ের ক্ষত;
বিসৃত আমন কাটা ক্ষেতের বাতাস অবিরত।
সকাল আবার পাঠ করে শুনিয়েছ—
সুহৃদ পাখির কণ্ঠ,
সমস্ত শরীর পুষে ঝরঝরে ধুলো করে
রোপন করেছি নগ্ন কালিজিরা বীজ—
চারপাশে সব অন্ধকার ধ্রুবপথ ভুলে
অঙ্কুরিতো হবে তুমি;
মাটির তলায় গুপ্তভূমি পুঁতে—গোপন খনিজ।
আমি শুধু দেখি:
নিশ্চুপ কুমোর বাড়ির প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠা—
প্রতিমার মতো নিবিড় তোমার মুখ!
দেখি, ধান কেটে বাড়ি ফেরা কৃষকের...
পায়ের গোড়ালি ফেটে রক্ত ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা।
কখনো এমোন আবেগের সব ভর সইতে পারতে
রান্না ঘরে একা—মাংস ভূনা বাটি;
আরো কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারতে?
.
পায়ের কাছেই পড়ে আছে, নতজানু সব টুকরো নরোম মাটি।
দুজন বিষের মুখোমুখি
.
এখন আমরা দুজন বিষের মুখোমুখি;
কে যে, কাকে খাবো?
আমি আর বিষ...
প্রভু, তুমি নি:শব্দে থাকবে সুখে-সুখি।
অবলা বাছুর কেবলই দুগ্ধ ছুঁতে ওলানের
পিছু পিছু ছুটে যায়;
কাঁটা চামচের শব্দ ফেলে খাবার ঘরের
দূরত্ব তোমাকে খেতে চায়।
তুমি ছিলে মহাকাল—ইলিশের প্রাণ;
সেলোফেন মোড়ানো হাতের ইশারায় লোভাতুর ঘ্রাণ।
কতোভাবে পালিয়ে বাঁচবে বলো? পোকার কামড়
ফুলে আছে বুকে—
শরীর মিশ্রিত ঘূর্ণি;
আমার কাছেই ফিরে ফিরে আসে তোমার আঘাত...ধুকে ধুকে!
কাঠবাদামের গায়ে ধুলো পড়ালে, অঙ্গুলের টোকায়—
সাইবারে যুদ্ধ হলে;
.
মৃত্যু ছাড়া কফিনের পাশে কিছুই থাকেনা—হায়...