স্টাফ রিপোর্টার:
১৮ বছরে পা দিল মহামায়া গণ পাঠাগার মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। আর লিখিত ভাষার ভান্ডার হলো বই। আর এই বইয়ের ভান্ডারকে বলা হয় পাঠাগার।
যেখানে মানুষ পৃথিবীর বিচিত্র সব রক্ষিত ভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পায়। নিত্য নতুন উপলব্ধি আর অভিজ্ঞতায় নিজেকে বিকশিত করা যায় পাঠাগারের মাধ্যমেই। জ্ঞান ভান্ডার আর অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হচ্ছে সাহিত্য। আর সাহিত্যের ভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত করতেই ‘মহামায়া গণ পাঠাগার’ গঠনের উদ্যোগ নেয় ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের একঝাঁক বই পোকার দল। তাদের গড়া সেই পাঠাগার এখন পরিপূর্ণ। চলতি বছরের আগস্টে মহামায়া গণ পাঠাগার ১৭ বছর পার করেছে।
ইউনিয়নের নামেই এই পাঠাগারের নাম, ‘মহামায়া গণ পাঠাগার’। সবসময়ই পাঠকে সরব থাকে, এর প্রধান কারণ পুরো ইউনিয়নে আর কোনো সক্রিয় পাঠাগার নেই। নিজের মধ্যে আলো জ্বালাতে হলে সবাইকে এখানে আসতেই হয়। আর এই প্রদীপকে ২০০১ সাল থেকে জ্বালিয়ে রেখেছেন পাঠাগারের সভাপতি মো. ইউনুছ খান।
পাঠাগারটি তাদের কার্যক্রমের কারণে দিনদিন ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে। শুধু বই দেওয়া-নেওয়াই নয়, তাদের কার্যক্রমের তালিকা অনেক বড়। গত ৮ বছর ধরে আয়োজন করছেন বৃত্তি পরীক্ষা, যাতে পুরো উপজেলার ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। সেখান থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তি। তাছাড়া বছরের শুরুতে গরিব ছাত্রছাত্রীদের পাঠাগারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় শিক্ষা উপকরণ। বেশ কয়েকবার তারা চিকিত্সা ক্যাম্পেরও আয়োজন করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষকে দিয়েছে বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা। প্রতিমাসে সাহিত্য আড্ডার পাশাপাশি বছরে একবার কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বৃক্ষরোপণ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঈদ বস্ত্র বিতরণসহ নানা আয়োজন তো আছেই।
মো. ইউনুছ খান, জাহাঙ্গীর কবির, শেখ জুটন, রেজাউল করিম, আবদুল্লাহ ইবনে মনির, দেলোয়ার হোসেন কাকনসহ কয়েকজন তরুণের হাত ধরে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন অনেকেই। যাদের পাঠাগারে আসার সুযোগ হয় না তাদের জন্য ঘরে বসে বই পাওয়ার অভিনব পদ্ধতি চালু করেছেন তারা।
বইপড়ার এই অভিনব আন্দোলনকে কেন এবং কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনুছ খান বলেন, ‘শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই সঠিকভাবে জ্ঞানার্জন সম্ভব না। আর বই পড়লে অন্যান্য খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। বই-ই পারে একমাত্র আলোর পথে নিয়ে যেতে। সবাইকে আলোর পথে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাঠাগারটি চালানো আমার একার পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেকেই কমবেশি সাহায্য করেন। বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সহযোগিতা করেন। এছাড়া এলাকার অনেকে বই দিয়ে সহযোগিতা করেন।
কিছুটা হতাশা নিয়ে ইউনুছ খান বলেন, ‘অনেকে বই নিয়ে ফেরত দেন না বা হারিয়ে ফেলেন। এতে পাঠাগারের বই কমে যাচ্ছে। নতুন বই কেনার মতো আর্থিক অসচ্ছলতা তো আছেই! পাঠাগার চালাচ্ছি কোনোমতে।’ এমনিতে পাঠাগার পরিচালনার ব্যয় মেটানোই ভার। তবে সহায়তা পেলে পাঠাগারটি আধুনিক ও তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
বর্তমানে তাদের নিবন্ধিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ও পাঠক সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর বাইরেও অনেক পাঠক আছেন, যারা শুধু পাঠাগারে এসে বই পড়ে যান, কিন্তু নিবন্ধিত হননি। এখন দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ১২০ জন পাঠক পাঠাগারে এসে বই পড়েন। বইয়ের পাশাপাশি দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্র-পত্রিকা পাঠদানের কার্যক্রমও বেশ দৃষ্টিনন্দন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছে পাঠাগারটি। পাঠাগারের কর্মকর্তারা জানান, তারা আরো অনেকবছর গ্রামের মানুষকে দিতে চান আনন্দময় এক জগতের খোঁজ। যে জগতের খোঁজ তারা পেয়েছিলেন বইয়ের ছাপানো অক্ষরে। সেই আনন্দের ভাগ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেই ১৭ বছর ধরে তারা স্লোগান দিচ্ছেন ‘পড়লে বই আলোকিত হই, না পড়লে বই অন্ধকারে রই।’