'আমার মুর্শিদ পরশমনি গো' কালজয়ী গানটির আদি কথা -
শাহরিয়ার কাসেম
'আমার
মুর্শিদ পরশমনি গো- লোহারে বানাইলায় কাঞ্চা সোনা' প্রাচীন বাংলার এ
দেহতত্ব বাউল গানটি শোনেনি এরকম মানুষ খুঁজে বের করা মুশকিল। সত্তর, অাশি
এমনকি নব্বই দশকে এ গানটির জোরালো অবস্থান ছিল
বাংলার প্রতিটি
অঞ্চলে অঞ্চলে। কিন্তু আজ আধুনিক গানের তলে পরে গানটি নতুন প্রজন্মের কাছে
কতটুকু বোধগম্য হয়ত বলা বাহুল্য। তবে বাংলাদেশের কিংবদন্তী গায়ক, গায়কীরাও
গানটি গেয়েছেন। বিশেষ করে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত বারী সিদ্দিকী, মমতাজ,
শাহাবুদ্দীন, আশিক ও বিল্পব শাহ্ তারা গেয়ে গানটির নতুন মাত্রা এনে
দিয়েছিলেন।
এরকম একটি কালজয়ী গানের গীতিকবি কে
হয়ত অনেকেরই অজানা। যিনি গানটি সৃষ্টি করেছেন তিনি হলেন বাউল সাধক কালা
শাহ্। অবশ্য গানটির শেষ পংক্তিতে তিনি তাঁর নামটি উল্লেখ করেছেন। অনেকে
তাঁর নাম নিয়ে গানটি গাইলেও বাউল সাধক কালা শাহে্র সম্বন্ধে কিছুই জানেনা।
আনুমানিক ১৮২০ সালে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নে ধাইপুর
গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিলেন তমিজ বেপারী।
আধ্যাত্বিক
বাউল সাধক কালা শাহ্ বাংলাদেশের প্রথম সারির বাউল শিল্পী ছিলেন। এবং গুণি
শিল্পীর ভক্ত শ্রোতাও ছিল অসংখ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় এরকম একজন বাউলের নাম
ক'জনেই মুখে নেয়!
জানা যায়, তাঁর তিনটি গানের
সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে; প্রেম তরঙ্গ, রত্ন সাগর ও অানন্দ সাগর।
তিনি প্রায় চার শতাধিক গান রচনা করেছেন।
বাউল
সাধক কালা শাহ্ তাঁর প্রত্যেকটি গানই ছিল দেহতত্ব বিষয়ক। গানেই তিনি
ডেকেছেন সৃষ্টিকর্তাকে। গানেই ভজন করেছেন সৃষ্টিকে। তাঁর সবই সঁপেছিলেন
তাঁর মুর্শিদকে। মুর্শিদকে পেতে সরলে গরল মেশাননি। তিনি সরল দেশে বসবাস
করেই মুর্শিদের সাধনা করে গেছেন।
তাঁর জন্ম ও
মৃত্যু প্রসঙ্গে দিরাইয়ের বাউল গীতিকার সয়াল শাহে্র তথ্যানুযায়ী তিনি প্রায়
দেড়শত বছর বেঁচে ছিলেন। এবং এই প্রখ্যাত বাউল সাধক মহান মুক্তিযুদ্ধের
প্রায় বছর দুয়েক আগে তথা ১৯৬৯ সালে তাঁর মুর্শিদের ডাকে সাড়া দিতে এই নশ্বর
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।