আবদুল হাসিব-এর গুচ্ছ কবিতা
       আবদুল হাসিব-এর     গুচ্ছ কবিতা

 

খুঁজে বেড়াই তোমাকে

 

অন্তরে আমারএ্যাদেন উদ্যাননেই

নেই তার স্থিতি স্থায়িত্ব

সুতরাং, এমন কোথাও আমি তোমাকে

অবান্তর খুঁজবো না।

আরবের আরাফাতেও না,

ওখানেআদম-হাওয়ামিলন মিথ আছে

তোমাকে সেখানে খুঁজবার

আমার কী দরকার আছে।

পাশ্চাত্যের প্রাচুর্যেও খুঁজবো না

ওখানেরুমিও জুলিয়েটআছে।

 

আমি খুঁজবো তোমায় প্রাচ্যের স্নিগ্ধ ছায়ায়

আমার দুখিনী বেহুলা বাংলায়

বৃষ্টির শব্দ-ছন্দে ওঠোনে যার

দশ দশা সুর উঠে দ্রæপদ সঙ্গীতে;

যেখানে হেমন্ত শিশির আদর মাখে 

সবুজ শস্যদানায়,

যেখানে কামাতুরা ময়ূরী নৃত্য করে

ময়ূর পেখম মেলে অনুরাগে ফিরে ফিরে চায়

মেঘপুঞ্জ আর হংসারীরা

যে শান্ত মাটির বুকে ছায়া ফেলে যায়

প্রেয়সী আমার,

আমি সেখানেই খুঁজে বেড়াই তোমাকে।


অষ্টপ্রহর স্পর্শ চাই

 

সমস্ত দিন একা; এই চার দেয়ালের ভেতর

আমি তমীস্রার সন্ত্রস্ত অস্থিত্ব অনুভব করি!

ব্যাধিগ্রস্থ শরীরটাকে খুবই অসহায় ভেবে

অনুভুতির বিশাক্ত শিকড় সর্বাঙ্গে পীড়া দেয়।

 

যতক্ষণ তুমি দূরে দূরে থাক দেখতে পাই না

ততক্ষণ ঈশানের বিষন্ন মেঘ জমে ভিথরে;

আমি হয়ে যাই একেবারে রিক্ত নিঃস্ব সর্বহারা

বৈশাখী ঝড়ে মুচড়ে পড়া নির্বাক বৃক্ষের মত।

 

তোমার অনুপস্থিতিটা রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরকেও

মনে হয় কৃষ্ণপক্ষের সু-দীর্ঘ রাত্রির মতই;

সময় তখন কাটতে চায় না, কাটে না সময়!

ভাল লাগে না আমার, কিছুই ভাল লাগেনা আর;

ভাল লাগে না কুসুমিত কানন কুকিলের গান

ভাল লাগে না ঝরা পাতার শব্দ নদীর কল্লোল

ভাল লাগে না বিকালের শালিক বর্ণালী আকাশ

ভাল লাগে না নিশিতের কুহুতান ফাল্গুনী চাঁদ

ভাল লাগে না সজ্জিত গৃহাঙ্গন অলিন্দে চেয়ার 

ভাল লাগে না  বঙ্কিম শরৎ রবীন্দ্র নজরুল

ভাল লাগে না জীবনানন্দের প্রিয় কবিতাবলী

ভাল লাগে না তোমারই দেয়া সার্ট টাই ব্ল্যাজার;

ভাল লাগে কেবলই  ঘ্রাণ, স্পর্শ, সান্নিধ্য তোমার।

 

তুমি আমার মঞ্জুভাসিণী আমারই নিরঞ্জনা

তুমি মৃগনয়না, তোমার আয়তলোচন মাজে

স্নিগ্ধ ভোরের পাতা ঝরা দেখবো, শাপলার বিলে

শুভ্র বলাকার ডানায় ডানায় উল্লাস দেখবো

তন্ময় থাকিয়ে কার্শিয়াঙ কাঞ্চন জঙ্গা দেখবো

তুমি হবে আমার প্রানময় কাঙ্খিত অনুভুতি

তোমার অবস্থানে নিবাস গৃহ হবে নিধুবন

তাই এই আমি, অষ্টপ্রহর স্পর্শ চাই তোমার

 


প্রসূনে প্রনষ্ট

 

জীবন চলার পথে

অগণিত মানুষের ভিড়ে

শুভাকাক্সক্ষী সংখ্যা ছিল বড়ই বিরল;

অর্থ বিত্ত অথবা প্রতিভা

সুস্থ মনোরম সমাজ সংসার,

কোনটাই মেনে নেওয়া সম্ভব হয় না তাদের

কেননা, প্রসূনেই প্রনষ্ট ওরা;

ঘুণে ধরা মস্তিষ্ক ওদের।

        

পদে পদে পেয়েছি বিষাক্ত কাঁটা

কাঁটায় দিয়েছে আমায় দূর্বার গতি

পদ-যোগল ছিল ক্ষত-বিক্ষত অতি,

তবুও প্রত্যাশায় ছুটেছি আমি প্রাপ্তির সন্ধানে;

ক্ষতির খাতা শূণ্যই রয়ে গেল আমার, অথচ

ওরাই রয়ে গেল অন্ধকারে সনাতন প্রতায়।

 

অন্যের বিভাসিত প্রতিভা দেখে

উন্মাদ হয়েছে, খাম্চে ধরেছে নিজেই নিজের জামা,

টেনে-টুনে ছিড়ে-ছুড়ে

নিজের কাছে নিজেই হয়েছে হাবা, লজ্জায় হয়েছে ম্লান!

কি জানি কি মোহে তারে

একই পথে আবার আনে,

ক্রমেই করে যায় নিষ্টুর কাজ।

 

আমি বোধের গভীরে মৌন ধ্যানেও দেখিছি

ওরা অনিষ্টকারী, ওরা মানুষ্য মনে অত্যাচারী;

ওদের ধৃষ্ট প্রবণতা প্রবল ওরা দুষ্ট, প্রসূনে প্রনষ্ট।

 

 


কী বিষাদ নিঃশ্বাসে

 

অনেক দিনের পরে

শৈশব-কৈশোরের ধুলো মাটির টানে

স্মৃতি বিজড়িত আমাদের সেই 

আমন ধানের উঠোনে গিয়েছিলাম।

 

দেখলাম বাড়ির দক্ষিণে সব্জীক্ষেতের বেড়ায়

লতিয়ে উঠেছে অবিকল আগের মত 

পঁই শাক লাল শাক শঁশা আর ঝিঙে ঝাড়

দক্ষিণ-পূর্ব কোণে গোয়াল ঘরের খড়ের চালে

বিস্তীর্ণ লাউ ঝাড়ের কচি ডাঁটাগুলো

ঠিক সেই আগের মতই ঝুলে আছে

এই বুঝি মা এসে ঠুস ঠুস করে তুলে নেবেন।

হঠাৎ দেখলাম, লাউ ঝাড়ের সাদা ফুলের গা ছুঁয়ে

ফুড় করে এক চড় উড়ে গেল,

আমার কৈশোর ওখানে ঝলমল করে উঠলো।

গোয়াল ঘরের আঙিনায় বাঁধা

ধুসর রঙের গাভী আর তার বাছুরটি দেখে

মনে হলো তারাও যেন প্রতিক্ষমান

আমার মায়ের জন্যে।

 

বাতাসে ধানের খড় ছাড়াচ্ছেন বাড়ির উত্তরে

জন মহিলা দেখলাম,

বেগুনী শাড়ীতে ঘোমটা পরা একজনকে দেখে

মনে হলো, এই বুঝি ছুটে আসতে আসতে

উল্লাসে বলে উঠবেন, দেখো, দেখো তোমরা দেখো,

কে এসেছে দেখো, আমার খোকা এসেছে !

আমারই খোকা! -হা-রে, কী আনন্দ আমার!

নতুন ধানের পিঠা করবো, চিড়া মুড়ি গুড়ের খই ;

এই টি দিন কত মজা হবে,

বাড়িটা আমার মেথে থাকবে সারাক্ষণ।

 

অথচ, ওখান থেকে এত গুলো কথা বলতে বলতে

তৃষার্ত দৃষ্টি মেলে কেউই ছুটে এলোনা, কেউ-

বুকে জড়িয়ে নিলোনা আমাকে।

কেবলই প্রানবন্ত প্রিয় সেই কথা গুলো কেঁদে কেঁদে

বিহানের বাতাসে ভেসে ভেসে সুদুরে চলে গেলো।

অতঃপর, অজান্তেই কন্ঠ ছিড়ে উচ্চারিত হলো

মা, মা, মা-গো; তুমি আজ কোথায় মা!

 

 

 

কারো কি কষ্ট হবে

                                                            

অনেক হয়েছে সাধা হয়েছে কাঁদা অনেক

হাতেপায়ে ঠেলেছি কত পাহাড় জঞ্ঝাল

এখন আর নয় চাই না আর, চাই অবকাশ

যে টুকু সময় আছে জীবনে আমার;

না আমি ভাববো না। কন্যা-পুত্র-জায়া

ভ্রাতা-ভগ্নী! না কারো কথা না।

এখন আমি সাগর সৈকতে যাব

শৈত লোনা বাতাসে হবে আমার

স্বপ্নময় কাঙ্খিত বিশ্রাম-বিলাস;

জলের কল্লোলে মধ্যময় তন্দ্রা আসবে

আমার দুচোখ ভরে

অনেক দিনের পরে।

অপরাহ্নে উঠে আসবো আমি

সবুজ ঘাসের প্রাণময় বুকে,

বিকালে বর্ণালী আকাশের মুছে গেলে ছবি

জ্যোৎস্নার জোয়ারে ভেসে যাবে রাত,

আমি হাসনাহেনা মাখবো সারা গায়

রাতের গন্ধময় শরীরের মত। তারপর

ঝরা শিশিরের শব্দ শুনতে শুনতে

অথবা,শশীর সৌন্দোর্য দেখতে দেখতে

যদি বা আমি ঘুমিয়ে পড়ি মৃত্তিকার পরম মায়ায়

ভোর হবার আরো কিছু আগে!

তবে কি খুবই কষ্ট হবে এইখানে,

এই বিশ্ব চরাচরে  আমার জন্যে কারো বুকে!

 

 


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান