মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন-র চতুর্থ বই ছড়ায় ছড়ানো একাত্তর ।
বইটির প্রকাশক : মৃদঙ্গম, প্রচ্ছদ করেছেন : শিবু কুমার শীল বিশ্ব, পরিবেশক: মুক্তধারা, নিউইয়র্ক। প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০১৯। বই মেলায় মুক্তধারা নিউইয়র্কের স্টলে বইটি পাওয়া যাবে। মূল্য একশত টাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন গ্রাম: জারুলিয়া, ডাকঘর: গাজীপুর, উপজেলা:চুনারুঘাট, জেলা: হবিগঞ্জ। মুক্তিযোদ্ধা কবি মো. আনোয়ার হোসেন ১৯৫৫ সালের ৮ মে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার জারুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবির বাবা আব্দুল ওহাব এবং মা ফয়জুন্নেসা দুজনেই মৃত। আনোয়ার হোসেন পেশায় ছিলেন একজন পরিবহণ শ্রমিক। এখন তিনি নিয়মিত লেখা-লেখি এবং হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিয়ে ব্যাস্ত।
তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘ ঝড়’ প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম প্রকাশ প্রকাশনী থেকে ২০১২ সালে। ২০১৫ সালে একুশে বই মেলায় পুঁথিনিলয় প্রকাশ করেছে কবির দ্বিতীয় কবিতার বই ‘ ঝলকানি মেঘের গর্জন’। ২০১৬ সালের বই মেলায় ‘ আকাশ ভরা ছড়ার মেলা’ নামের কবির প্রথম ছড়ার বই প্রকাশ করে দোয়েল প্রকাশনী । ২০১৮ সালের বই মেলায় পুঁথিনিলয় প্রকাশ ‘ ছড়ায় ছড়ানো একাত্তোর’নামের আরেকটি ছড়ার বই । এই বইটির জন্য তিনি এবার দিগন্ত ধারা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বিয়ে করেন কিশোরগঞ্জের কন্যা আয়েশা খাতুনকে। কবির সংসারে পাঁচ ছেলে এবং এক মেয়ে । বড় ছেলে মোহাম্মদ কামাল হোসেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তোফাজ্জল লিটন নিউইয়র্কে প্রথম আলো পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছেন। দেলোয়ার হোসেন সুমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি স্নাত্তকোত্তর সম্পন্ন করেছেন এবং আফজাল সুযন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত আছেন। কনিষ্ঠ ইমতিআজ শিপন আইন শাস্ত্রে পড়াশুনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একমাত্র মেয়ে ফাতেমা খাতুন বিয়ে করে নিজের সংসার দেখছেন। এই মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে এবং মেয়ে বাদে সবাই জীবন সংকেতের গর্বিত সদস্য।
মো. আনোয়ার হোসেনের যুদ্ধে যাওয়া : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর সর্বত্র নির্বিচারে বাংলার মানুষকে হত্যা করে । জ্বালিয়ে দেয় তাদের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট । বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। তখন মো. আনোয়ার হোসেন গাজীপুর হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। সেই সময় হানাদার বাহিনী ছাত্র জনতা যাকে যেখানে পেয়েছে গুলি করে মেরেছে। তখন তিনি ভাবলেন ‘বাঁচার উপায় নাই। মরব যখন যুদ্ধ করে মরি’। বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে এপ্রিলের শেষ দিকে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন তিনি। রেমা চা-বাগানে উঠার সময় তিনি শুনতে পান কিছু মানুষের পিস পিস শব্দ, কেউ বলে গুলি কর, কেউ বলে ছেলেটা যখন আসতেছে আসতে দাও। এরই মধ্যে কেউ একজন বলে উঠল, হোল্ড । হ্যান্ডস আপ। তিনি হাত উপর তোলার পরে তাঁকে ধরে কমান্ডার সুবেদার শামছুল হুদা’র কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি আনোয়ার হোসেনকে স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে চেগানগর স্কুলের উপর উড়াইয়া দিতে বলেন । তিনি রওয়ানা হয়ে অর্ধেক নদীতে আসার পর তাকে ফিরে আসতে বলা হলো। দেশপ্রেমের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার পর কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাকে ভারতের বাঘাই ক্যাম্পে পাঠানো হলো। কিছুদিন সেখানে থাকার পর তাঁর মনে হল, এখানে আমার থাকা ঠিক হবে না। কারণ যেকোনো দিন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বাড়িতে গিয়ে তিনি উপস্থিত হতে পারি। আর তা জানাজানি হলে হানাদার বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে গুলি করে মারবে। এই কথাগুলি কমান্ডার সাহেবকে বলার পরেও তিনি তাঁকে লিখিত কাগজ দেন নি। আনোয়ার হোসেন তখন নিজেই খোয়াই টাউনের অফিস টিলায় এমপি মোস্তফা শহিদের অফিসে গিয়ে লিখিত কাগজ নিয়ে যুব শিবিরে ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর লোহার বন ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে ২১দিন ব্যাসিক ট্রেনিং দেওয়ার পর তাকে দেওয়া হয় জুনিয়র লিডার উইং( জিএল ডবলিও) ট্রেনিং। পরে সেক্টর কমান্ডার মেজর চিত্ত রঞ্জর দত্তের আন্ডারে ৪নং সেক্টরে কমলপুর মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন ক্যাম্পে গিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন। সেখানে শ্রীমঙ্গলের ধলাই চা-বাগানে এক ভয়াবহ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা। কিছুদিন পর ৩নং সেক্টর কমান্ডার শফি উল্লাহ-র অধীনে সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব ( সাদি) ক্যাম্পে ঘমি শিং বাড়িতে যোগদান করেন আনোয়ার হোসেন। সেখান থেকে মাহবুবুর রব সাদি’র নেতৃত্বে ৯০জন মুক্তিযোদ্ধা নবীগঞ্জ থানায় আক্রমণ করে থানাকে মুক্ত করেন তাঁরা। এর কিছুদিন পর তারা ১২জন রওয়ানা দেন হবিগঞ্জের সদরের উদ্দেশ্যে। সারা রাত হেঁটে আলমপুর এসে এক বাড়িতে রাত্রিযাপন করে তাদের দলটি। মোক্তিযোদ্ধাদের দলটি পৌঁচার একদিন আগে অর্থাত ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী হবিগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। মোক্তিযোদ্ধাদেও দলটি হবিগঞ্জ শহরে প্রবেশের পর সহস্র মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন তারা।
বইটি পাওয়া যাবে -
মুক্তধারা নিউইয়র্ক স্টল নাম্বার ১২২ ১২৩ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।