মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের গুণী অভিনয়শিল্পী শর্মিলী আহমেদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার সকালে নিজ বাসাতেই মারা যান তিনি। প্রথম আলোকে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর বোন অভিনয়শিল্পী ওয়াহিদা মল্লিক জলি। বনানীতে স্বামীর কবরে শর্মিলী আহমেদকে সমাহিত করা হবে বলেও জানিয়েছেন ওয়াহিদা মল্লিক।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা লিখেছেন, আমাদের সময়ের অসাধারণ এক অভিনয়শিল্পী, আমার প্রিয় চাচি আজ সকালে নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। তাঁর প্রয়াণে গোটা নাট্যজগৎ তাঁদের সবার প্রিয় ‘আম্মা’কে হারালেন।
জানা গেছে, মৃত্যুর সময় শর্মিলী আহমেদের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। শর্মিলী আহমেদের প্রকৃত নাম মাজেদা মল্লিক। ১৯৪৭ সালের ৮ মে তাঁর জন্ম। এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী অভিনয় শুরু করেন মাত্র চার বছর বয়স থেকে। রাজশাহী বেতারের শিল্পী ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে চলচ্চিত্রাঙ্গনে নাম লেখান শর্মিলী। এর মধ্যে অবশ্য প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঠিকানা’ (উর্দু ভাষায় নির্মিত) আলোর মুখ দেখেনি। তবে সুভাষ দত্তের ‘আলিঙ্গন’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ এবং ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্র দিয়ে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।
এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ নাটক ও ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয়জীবনে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সবার মন জয় করেছেন সাবলীল অভিনয় দিয়ে। অভিনয়জীবনে মায়ের চরিত্রে এত বেশি অভিনয় করেছেন যে বিনোদন অঙ্গনে তিনি সবার কাছে ‘মা’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সবাই তাঁকে ‘শর্মিলী মা’ বলেই ডাকতেন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে শর্মিলী আহমেদ ছিলেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পরবর্তীকালে ছোট পর্দার মা, দাদি কিংবা ভাবির চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন।
তাঁর কাছে পরিবার আগে গুরুত্বপূর্ণ, তারপর কাজ। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা সব সময়ই শর্মিলী আহমেদকে অভিনয়ে সহযোগিতা করেছেন। ছোট পর্দায় তাঁকে বেশির ভাগ সময় মায়ের চরিত্রে দেখা গেছে। আর বাস্তবেও মায়ের মতোই আগলে রেখেছিলেন পুরো পরিবারকে।
অভিনেত্রী ও মা—দুই জায়গাতেই সফল ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। শুটিংয়ে যেমন তিনি সময় দিয়েছেন, তেমনি পরিবারের প্রতিটি কাজের দিকে খেয়াল রেখেছেন। প্রথম দিকে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কম থাকলেও মা হওয়ার পর দায়িত্ব বেড়ে যায়। সে সময় অবশ্য অভিনয় কমিয়ে দেন। সিনেমা ও নাটকের বেশির ভাগ শুটিং তিনি ঢাকার মধ্যেই করতেন যেন সন্তানদের সময় দিতে পারেন। সন্তানদের মানুষ করতে অভিনয়টা একটু কমিয়ে দিয়েছিলেন শর্মিলী।