কবি - আবদুল কাইউম
গুরুচন্ডালী যোগ' পঞ্চমে
শ্রমিকের ঘামে শেদ্ধ হয় যখন বাসমতি চাল আর
আঙুরের রসে বুদহয়ে থাকে অতিথিরা; তখন পকেট নিংড়ে জমা করে কেউ ফাইভস্টার ইমেজ ৷
আগরের খুসবু মেখে সকাল সন্ধ্যায় স্বর্গের খাজনা তুলে কেউ অকারন! 'রাশি'তে যখন রাহু,কেতু,আর বৃহস্পতির অবস্থান; তো...
চেহারায় নেতাসুলভ ভাব ভঙি মাখলেও
যখন লেবু চুষবে চোখ দু'টি আপনা আপনি কুঁচকে যাবে ; আসলে তাঁর 'গুরুচন্ডালী যোগ' পঞ্চমে!
মানুষজন শিক্ষিত হচ্ছেতো; তাই এখন সব বুঝে,
মুখে মুখে সম্মান দেখালেও অন্তরে গালি খুঁজে ৷
অর্থের অনার্থতা
বিশ্বাস করো...
যেখানে জীবন আছে সেখানে অর্থ নেই;
আর যেখানে অর্থ আছে সেখানে জীবন নেই;
আবার অর্থ ছাড়াও জীবন অর্থহীন!
আসলে জীবনটা'ই একটা গ্যারাকলে; এটা কী ভুল?
কেউ কেউ বলে অর্থ'ই অনর্থের মুল!
নরপশু
ওই আদি জানোয়ার এবার তোরা মানুষ হ
লক্ষ কোটি বছর পেরিয়ে অনেকটা ধাপ মাড়িয়ে
আজ সভ্য প্রাণী হিসেবে যেখানে মানুষ বাস করছে
সেখানে তোরা এখনো পশু রয়ে গেলে?
মেয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধা, ছেলে কিংবা মেয়ে,
আপন পর গরু কিংবা ছাগল কেউ'ই তোদের লিপ্সা থেকে রেহাই পায় না; এমন কি পাখিও না!
ওরে নরপশুর দল
পশুর চেয়ে আলাদা যে সেন্স পেয়ে তোরা মানুষের
খোলসের ভেতর ঢুকেছিস;সেই সেন্সকে কু'কাজে লাগিয়ে তোদের তৃতীয় হাত গজিয়েছে?
তোদের তৃতীয় হাত হল অজুহাত আর সেটা
প্রতিটি কু'কর্মের পরে ব্যবহার করে নিজেকে বাঁচাতে
বলিস 'শয়তানের কারসাজী !
ওই ধুরন্ধুর শয়তান
তোরা'তো বুলবুলি পাখীকেও বলবে তাঁর পেছনে
লাল কেন? তোদের কোন দোষ নেই! তাহলে কি বুলবুলিও ড্রাইপার পড়ে ডালে বসবে? আর গরু ছাগল অান্ডার প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াবে?
শোন ওরে ধর্ষকের দল—
তোরা মানুষ কি জিনিষ চিনিস না! যেদিন পীঠ দেয়ালে ঠেকবে সেদিন ঘুরে দাঁড়াবে আর সব কটা'কে ধরে ধরে নপুংসক বানাবে; যে ভাবে গোয়ালের পোত
মাঠ তাড়ানো ষাড়'কে বলদ বানায় ৷
নিকট অতীতের দিকে থাকিয়ে দেখ—
বাঙ্গালীর একাত্তর কিংবা ভিয়েতনামের ছোট ছোট মানুষগুলোর কথা মনে কর; সবাই মিলে অনেক বড় বড় ষাড়'কে বলদ বানিয়ে ছিল একদিন ৷
এখনো তোরা মানুষ হ নইলে তোদের খবর অাছে ৷
হাতছাড়া
ছোটবেলা পুতুল খেলায় বর সেজেছিলাম,মা বলল বাবা এগুলো মেয়েদের খেলা—এ খেলা খেলতে নেই ; সেদিন প্রথম হাতছাড়ার হাতেখড়ি হয়,হায় সেদিন'ই পুতুল বউ'টি হাতছাড়া হয়ে গেল!
একদিন ফুটবল নিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম, বাবা কাস্তে শাবল হাতে দিয়ে বলল এসব তোমার খেলতে নেই এটা যারা বড়লোক তাঁদের ছেলেদের জন্য— তোমার জন্ম হয়েছে কাজ করার জন্য ; সেদিন ছেলেবেলা হাতছাড়া হয়ে গেল ৷
কলেজে নাটকে অভিনয় করার জন্য পান্ডুলিপি কিনে নায়কের সব ডায়লগ মুখস্ত করেছিলাম— রিহার্সেলের প্রথম দিন চন্দন'দা বলল নায়ক হতে হলে ভাল চেহারা আর ভাল পোষাকের প্রয়োজন তোমাকে দিয়ে হবে না; সেদিন অভিনয় হাতছাড়া হয়ে গেল ৷
চাকরীর ইন্টারভিউ দিলাম— উচ্চতা,মেডিকেল ফিটনেস,রিটেন,ভাইভাসহ সব কিছুতে টিকে গেলাম সিলেক্টের সময় স্টাফজি বলল উপরে তোমার কোন মামা আছে? — জ্বি না ৷ তাহলে তোমার চাকরী হবে না; সেদিন চাকরী হাতছাড়া হয়ে গেল ৷
কখনো ভাবিনি একদিন নিজের কাছ থেকে নিজে'ই হাতছাড়া হয়ে যাব! প্রবাসে যেদিন এলাম পরদিন থেকে ঘড়ি বেঁধে কাজ,খাবার আর ঘুম এই তিন নিয়ে দিনরাত কাটে তাই সেদিন থেকে সোসিয়্যাল আর কাল্চারাল একটিভিটি হাতছাড়া হয়ে গেল ৷
দিন শেষে সবাই ঢুকে যায় আপন খোলসের ভেতর আর আমিও তাই; নির্ঘুম রাতে কখনো মনে হয় কোন- দিন জানি এ জীবনটা'ই না হাতছড়া হয়ে যায় ৷
হায় মানুষের এই ছোট্ট জীবনে কত প্রাপ্তি আর কত হাতছাড়ার গল্প—আমরা ক'জনের'ই বা খবর জানি!
আসক্তি আর ঠেকা'ই দূর্বলতা
প্রতি কার্তিকে ভাটার ঠানে
উজান থেকে নেমে আসে বড় বড় মাছগুলো,
শিকারী লেউয়া জাল নিয়ে বসে থাকে—
চৌকার মোড় থেকে চামার বাড়ীর ডর পর্য্যন্ত;
মাছ তা জানে—
তবুও কোন মোহে প্রতিবার ছুটে চলে আল্লাহ মালুম!
আমরাও কখনো কখনো মাছ হয়ে যাই,
দায়ে পড়ে যেখানে যেতে হয়—
শিকারীরা সেখান থেকেই ফায়াদা নেয়; এটা চিরায়ত ৷
আসক্তি আর ঠেকা এ দু'জায়গা থেকেই চতুর বণিকেরা আজীবন হাতিয়ে নিচ্ছে মুনাফা ৷
পরগাছা প্রজন্ম
একটি প্রজন্ম যখন পরগাছা হয়ে বেড়ে উঠে
তখন তাঁদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের ভয়াবহতার কথা ভেবে শিউরে উঠি! যে বৃক্ষের উপর নির্ভর হয়ে বেঁচে আছে
তাঁরা; বৃক্ষটি যদি মারা যায় তখন কী হবে তাঁদের?
একটি প্রজন্ম যখন পরগাছা হয়ে বেড়ে উঠে আর সংসার সাগরে হাত,পা ছেড়ে আশ্রয় ভেলার উপর গা ভাসিয়ে পড়ে থাকে তখন ভয়ে মরি; ভেলাটি যদি
ডুবে যায় তখন কী হবে তাঁদের?
একটি প্রজন্ম যত বড় চোখ নয় তত বড় স্বপ্ন দেখে
আর অপেক্ষা করে আলাদিনের চেরাগ পাবে আর পৌছে যাবে সাফল্যের চূঁড়ায়; তো আরো ভয়ে মরি ৷
আসলে একটি প্রজন্ম যখন নিজের ভবিষ্যৎ নিজে
গড়তে চায় না তখন এসব চিন্তা হতেই পারে; নয় কী?