আহা, এমনই জীবনের রং
সুগন্ধী রুমাল
উৎসর্গঃ চিত্রশিল্পী পার্বতী ঘোষ
আহা, এমনই উড়ো হাওয়ার দিনে তুমি ছিলে।
শারদ জলে মুখ দেখে ফেরা পাখির পালক, ডানা ঝরা বিন্দুগুলো, সবুজ ধানক্ষেত, ভেজা ঘাস, ঈষৎ সান্ধ্য রং... তোমার প্রিয় ছিল; আমারও
তারপর সেইদিন, তোমাকে নিয়ে যাওয়াÑ ধ্যানী বকের ছোবলের মতো হঠাৎÑ আমার মনকে সার্বজনীন দ্রাবক করে দিয়েছে। দ্যাখ, কোন কষ্ট নেই, কোন দাগ নেই
শুধু এখনও, সুগন্ধী রুমালের স্মৃতি ভাঁজ করা থাকে বুক পকেটে। ওটা ছাড়া তোমার না বলা কথাগুলোর স্পর্শ পাওয়া হতো না
পথিক
আহা, এমনই জলজ ঘ্রাণে বেড়ে ওঠা ধানক্ষেত, হাওয়া ওড়া দিনে নেচে নেচে যায়। বুকে চারাগাছ গেঁথে নেওয়া মাটি লালন করে কৃষিজীবি ইচ্ছেগুলো
ঘাসের সবুজ ছুঁয়ে চলা নদী বয়ে যায়, বুকে তার সহস্র বিষাদ!
হাঁটা পথে পা জোড়া নামলে আমার শৈশব ডেকে ওঠে। আর বর্তমান নিবাস থেকে আমার দূরত্ব বাড়তে থাকে।
হৈমন্তী মেয়ের প্রতি
আহা, এমনই হৈমন্তী মৃদু হাওয়ায় ভেসে আসা ঘ্রাণ সমূহ থেকে তোমাকে আলাদা করে নেয়া যাচ্ছে।
শিশিরের রাত পোহালে ঘাসেরা মুক্তোদানা ছড়ায় আর উড়ে যায় ধানশালিক, তোমারই দিকে। ঠোঁটে তার শস্য সংবাদ।
এক একটা পথ; মাঠ ঘুরে এলে যে অপার সৌন্দর্য ঝরে যায় টুপ টুপ টাপ্, তুমিই তার উৎসভূমি। তাইতো মেয়ে, ও হৈমন্তী মেয়ে, এই কৃষিজীবি মন-ঘরই তোমার ঠিকানা বানাও।
আমি ওই ঘ্রাণে, ওই প্রাণে দীর্ঘ জীবন যাপনের স্বপ্ন বুনছি
লেট মর্নিং বেল
আহা, এমনই রোদের হৃদয়ে ঘুণপোকা মেঘ জমলে শস্যবতী ক্ষেতের বুকে ছায়াদের স্মৃতি জমা হয়। নেচে ওঠে ধানফড়িং। ঘুড়ি ওড়া হাওয়ায় একটা সকাল পাড়ি দেয় বহুদূর পথ।
শরতের ঘাসে জমে উঠা শিশির উড়ে গেলে পথ ফুরিয়ে যায়। তখনই পাঁজর খামচে ধরে বয়সী বেলার খিদে।
দূর বসতি বৃক্ষে আসমানি রঙ ডানা ঝাপটালে একঝাঁক পাখি উড়ে আসে। জানিয়ে যায়, ও-পাড়ার গির্জায় ঘণ্টা বাজল গুনে গুনে দশবার।
ক্ষণস্থায়ী
আহা, এমনই জলে বাড়-বাড়ন্ত নদীর বানভাসি দাগ খেয়ে নেয় তৃণভূমি খুঁজে ফেরা ভেড়ার পাল।
গায়ে রোদ মেখে মেঘগুলো দাঁড়িয়ে গেলে গলিপথে বাতাস শিস দিয়ে যায়। জন্ম হয় আরও একটা প্রেমকাহিনি, বারান্দায়। রেলিং-এর ফাঁক গলে উড়ে আসা চুমু মেখে আলগোছে হেঁটে যায় পথ।
ঘাটে পৌঁছাতেই মেলে বাড়ন্ত জলের বুকে থই থই কচুরিপানা বিচ্ছেদ!