এরশাদ জাহান । গুচ্ছকবিতা
সংবেদী সোফিয়া
যদিও ক্যালেন্ডারেই শুক্রবার আজ
তবুও জিজ্ঞেস করলে উচ্চারণে ভয়,
সূর্যটা উঠবে, এ সত্যেও পুষে সংশয়!
সংশয় ছলনায় কি প্রেম কি ভালোবাসা
ডুবে গেছে, যা আছে তা হতাশার নীর,
এ দুঃখ ঘুচাতে আমি প্রেমপত্র পাঠাবো
সংবেদী সোফিয়াকেই। করেছি মনস্থির।
মানুষের তৈরি হলেও রোবট সোফিয়া
মানুষের মতোন সে শেখেনি বাহানা
প্রেরকের ঠিকানায় রাখা মাত্র চোখ
নির্দিধায় বলে দেবে হ্যাঁ অথবা না।
কতোটা অপাত্রে গেলে প্রেম-ভালোবাসা
মানুষে মানুষে আর থাকে না ভরসা!
কালকূট
বাজারে শুকিয়ে যাচ্ছে
বাগানের তাজা তাজা ফুল
রাত্রি তখনও স্নানে
'টক শো'য়ের মজা পুকুরে...
ধান মলনের মতো
মানুষের বুকের উপরে
দিনরাত নেচে যাচ্ছে
প্রবৃত্তির কালো কালো বুট
দৃশ্যের আড়ালে বসে
কে হে, তুমি হাসছো কালকূট?
ব্যারাম
পোষমানা পাখিদের ডাক আছে, নেই কোন ডানা
অধরা ওদের কাছে আকাশ ও দিনের ঠিকানা।
বলো তুমি কোন পাখি? পোষ না আপোষহীনে হবে? পোষ্য হলে নিঃসন্দেহে তুমি এক সুইচের পাখি। নাচালেই নাচো তুমি, ডাকালেই ডাকো
আর দেখালেই দেখো-- ফিরে ডান-বাম;
তোমাকে ধরেছে তবে লোভ আর ভয়ের ব্যারাম।
চিড়িয়াবাসী
কেমন আছ খাঁচার ব্যঘ্র!
জিভের কাঁটাচামচে তুলে খেতে খেতে টুকরো মাংস
ভুলে কি গেছ দাঁতে-নখে ছিঁড়ে খাওয়ার স্বাদ!
এক অশীতিপর রাজনীতিবীদের মতো
প্রদক্ষিণ করতে করতে খাঁচার বলয়
ভুলে কি গেছ একরোখা স্রোতের বিপরিতে সাঁতার ও সঠিক নিশানা?
কেমন আছ খাঁচার ঈগল!
অন্ধের দিন ও দয়ায় বাঁচতে বাঁচতে
ভুলে কি গেছ ডানার দাপট, আকাশের উচ্চতা, সুতীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি?
কেমন আছ খাঁচার বানর!
মার্কিনী থানের মতো সস্তা হাসির শহরে বিনোদন হতে হতে
ভুলে কি গেছ বনের বর্ণনা, বৃক্ষচারী স্বভাব তোমার?
কেমন আছ খাঁচার বক!
মনে কি পড়ে খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীনের কথা!
মৃত, বাসি খেতে খেতে ভুলে কি গেছ পুঁটির লম্ফ, শিকারে দক্ষতা, জীবিত প্রাণের স্বাদ?
হেইঁ ব্যঘ্র, ঈগল, বানর ও বক!
তোমাদের সমগোত্র আরো যারা চিড়িয়াবাসী আছে
জানতে চাই সকলের কাছে—
তোমাদের ওখানেও কি ঘটা করে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়?
আশা রাখি পত্রের উত্তরে জানাবে নিশ্চয়।
হাতল ছেঁড়া যাপন
সকালকে গিলেছে দোয়ালের
বোটা ছেঁড়া পন্স।
শোকে ও অসুখে
কুড়িতে বুড়িয়ে গ্যাছে বিকেল।
রাতেরা ভাতের লোভে
ভাতারের গলা ধরে পালিয়েছে কবেই।
কত আর বেড়াব বয়ে
এইসব হাতল ছেঁড়া ব্যাগের যাপন!
ভালো থাকার গল্প তুমি ফিরে এসো,
ফিরে আসার এখনই সময়।