জন্মবিলাস
একদিন ষরিষাতেল মাখাতে মাখাতে - মায়ের যে দুটি হাত থেকে নামতো শৈশব সেই দুটি হাত পুড়ে গেছে জ্বালানি কাষ্টের মতো । সেই উঠোনও হারিয়ে গেছে অদৃশ্য পেটের ভেতর। এখন মায়ের চোখ থেকে ভেঙ্গে চুরে নেমে গেলে আমাদের সংসার ; বাবার করোটি ডুবে যায় অন্ধকারে।আর বাবার শব্দময়ী বুকের পাঁজর ভাঙ্গে থৈ থৈ জলের ঢেউ।
এইসব দৃশ্য কেউ কেউ তুলে রাখলে অদৃশ্য আলমিরায় ; মাঝে মধ্যে দুর থেকে খড় -কুটোর মতো ভেসে আসে দোয়েলি সংগীত। এর ফাঁকে ফাঁকে কাকের ঠোঁটে কখনও নেমে এলে পাঁচ কেজি প্যেকেট আয়ু ; আমরা ওয়েভ তরঙ্গে সাঁতার কাটতে কাটতে সেলফায়িত হতে থাকি।
আর দুর থেকে কেউ কেউ জললিপিতে লিখে যায় - আমাদের জন্মবিলাসের কাহিনী ।
যে চোখ ধারণ করে সময়ের ওজন
রাতের পবিত্র ভাঁজ খুলে গেলে ধীরে ধীরে আমরা ঢুকে পড়ি যুদ্ধমাঠে। এ মাঠ এখন আলাদা কিছু নয়।এখন এখানেই আমাদের বসোবাস।যেখানে সেলফির অপ্রয়োজনীয় কিছু আনন্দের মতো এখানে সেখানে পড়ে থাকে কিছু খুচরা আয়াত।ভেঙ্গে যাওয়া কথার আত্মকাহিনী। আর প্রাক্তন খুলির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলে আদম হাওয়ার দীর্ঘশ্বাস ; চারপাশে জ্বলমল করে ওঠে আগুন।
সময়ের পথ ধরে পাহাড় থেকে নেমে আসে আদমের পদচিহ্ন। বাতাসের ব্যরিকেড ভেঙ্গে ওড়ে জীবনের আল্টিমেটাম। এই দৃশ্য দেখে কারও দক্ষিণ চোখ নড়ে ওঠে।আর জীবন্ত খুলির ভেতর অন্-মোড হয়ে যায়, সারি সারি সয়ংক্রিয় কথার সুইচ।কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠে জ্বলে ওঠে আগুনের হুইসেল।
অত:পর আমরা নিরীহ প্রাণীর মত গোপনে— ঢুকে পড়ি আদম হাওয়ার ব্যাকুল চোখের ভেতর।
জলপুড়া
আমি পিতার দীর্ঘশ্বাস থেকে ওঠে আসা এক মৌলিক সময়। আমি মধ্যরাতে পিতার পাঁজর ভাঙার যন্ত্রণা থেকে ওঠে আসা এক বালক। যে, রাতের মিনারে দাঁড়িয়ে দেখেছে, মায়ের বুকে জলের অসহ্য তান্ডব; ভেসে যাওয়া সংসার। আমি খড় কুটোর মতো ভেসেছি- পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে। রাতের ভাঙা আয়না কখন যে কেড়ে নিয়েছে বিশ্বাসের পরশ, মনে নেই আর। এখন ত্রাণদাতার উৎসবমুখর গুগুলিও হাসির ভাঁজে - দখল হয়ে যাচ্ছে আমার শৈশব।
আমার ভেসে যাওয়া আয়ুর - এই বাঁকেএখন শুধু থৈ থৈ জল। অজানা কোনো পাখির পালকের সাথে ভাসতে ভাসতে যেন মুছে যাওয়া এক জন্মচিহ্ন। আমি কোনো এক তৃষ্ণার্ত রাতে আবার শরীরে জুড়ে যাওয়া এক বিগত উল্লাস।
আমিতো এখন জলতলার ডোমঘরে - মায়ের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া - নামতা পড়া শিশু। যেখানে জলপুড়া লাশের সাথে, এখন আমার একান্ত নিশি বাস।
একটি নিজস্ব গল্প
আজকাল নিজস্ব ট্রান্সমিটার থেকে বের হচ্ছে অদ্ভুত সব শব্দ। নদীটাও উপুড় হয়ে আছে।আর বৃষ্টির মতো ঝরছে রক্ত। ভেঙে যাওয়া সংসারগুলো চিৎকার দিতে দিতে জ্বলে ওঠলে কিছুক্ষণ পর পর ; নিথর খুলির দিকে চেয়ে চেয়ে হেসে ওঠে— লোডশেডিং-এ ক্রোধান্বিত ভাল্ব।
আর সময়ের আগুনে পুড়ে ধেবে যায় ফুঁসকা ওঠা দেহ ; আমি সেই গলিতদেহ কোলে নিয়ে আজও হেঁটে যাই দীর্ঘপথ।শীততাপপকেটের পেটে এখনও ইমার্জেন্সিী রুমগুলো বন্ধ। চারপাশে বাতাসনৃত্যে মগ্ন দিশেহারা কঙ্কালগুলো।
এখন জন্ম থেকেই শেখানো গণিতের ভুল সূত্রগুলো— চেয়ে থাকে মৃতের মতো।
হ্যান্ডকাফ
আজকাল মধ্যমাসেই পকেট থেকে নেমে যায় পথের গন্তব্য। আর পানিতে ডুবে যায় মাছবাজার। আমাদের কিচিনের ছাদ থেকে টিপ টিপ করে ঝরে পেরেশানি । আমাদের উনুনে পোড়ে লোক দেখানো সভ্যতার চামড়া। আর আমরা লোডশেডিং এর মতো,হাতে হাত ধরে ধরে সাঁতার কাটি রাতের জলে।
আমরা ডাইনিং টেবিলে ধারহীন নাইফ দিয়ে সার্প করে দিই বাচ্চাদের কাঠপেন্সিল ; ভিতর থেকে অঙ্কিত করলে হৃদয়ের স্ক্যাচ ; পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে কেউ উল্টো করে ধরে ক্যানভাস। আমাদের মাথায় ভুমিকম্প হয়। আর আমাদের মুখ দিয়ে বের হতে থাকে গলিত লাভা।
অতপর রাত গভীর হলে অনেকেই আমাদের ঘিরে ধরে। শকুনের মত ঠোঁটে ফিস ফিস করে আমাদের চরিত্র বিক্রির পরামর্শ দেয়। আর আমরা পুনরায় আত্মহত্যা করি।