কবি : ওয়াহিদ জালাল
মাটিতে ভেসে ওঠা মুখ
ছোঁয়া মাত্র সবুজে নুঁয়ে থাকা পাতাগুলো
অলৌকিক হাসিতে মুখরিত করলো,
কষ্টের ঘামে ভেজা যে হরিণী
সন্তান প্রসব করে পিছন ফিরে তাকাতে
তাকাতে অন্য বনের দিকে পা বাড়ায়
তার বুকের জ্বালার মতোন
মনের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো
বিজয়ের বুকে রেখে আসা নিশ্বাস।
স্রোতের মধ্যেও হাত বাড়াই
চেয়ে থাকি ভোর থেকে সন্ধ্যায়,
তোমাকে কিতাবের মতো পড়ি
মাটির অক্ষরে লিখা শব্দগুলো সমস্বরে,
ভাটির কষ্টে জীবন একবারও কাঁদেনি
বরং সে প্রাণ কাঁপানো ঝড়ের সাথে বসে
খেলছে ইতিহাসের ভেজা তাস।
এক সময়ের শোকার্ত ভাবটি সর্বাপেক্ষা
সুন্দর হয়ে বুকের জমিনে ফুটেছে আজ।
গরীব চাষীর বিষয় তুমি ভালো বুঝো ।
তাই আমাকে আর প্রেম,প্রেম,প্রেম বলে
চিৎকার করতে দিওনা।
ব্যাথার সুরে ভিজে অন্তের বৃক্ষ যে
কী ভাবে বড় হয়ে যায়
তাই দেখে বিষয়ের সম্পত্তি কেমন
অতিরিক্ত রুঢ়তায় হৃদয়হীনতার পর্যায়ে
চলে গেলো !
আঙ্গুল টানে অনিদ্রার রাত্রি, আমি
গ্রামের নদীর মতোন সন্ধ্যার শূন্যতায়
একাকী নিজের সমাধি হিজরত করি।
আত্মকাব্য
মানুষের জীবদ্দশায় কিছু আশা
পূরণ হতে নেই,
সব আশা মিটে গেলে
মানুষ বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেয় ।
আত্মকাব্য
বিশ্বাস করো,প্রতিটি মানুষের হাত
এবং এই পথের পাথরগুলো
আমাকে খুব বেশি চিনে রেখেছে ,
সেদিন থেকেই অমন হলো,
যেদিন হতে তোমার অবহেলাগুলো
জীবন ভেবে ওয়াহিদ
অঙ্গে মেখেছে ।
আত্মকাব্য
কোন সম্পর্ক তৈরী করে
কখনো যাচাই করতে নেই,
সত্যিকার ভালোবাসা
আত্মার খতিয়ান লিখে রাখে চিরকাল।
ঈশ্বর আমার নিদ্রাহীন রাত
ঈশ্বর তোমার ঘুম নেই জানি,
জানো,আমার এখন ঘুম ভেঙ্গে যায়
প্রতিটি রাতে ভিন্ন ভিন্ন দুঃস্বপ্নে
কখনো উঠোনে শুনি ইতরদের পায়ের শব্দ,
বৃক্ষের যৌনিতে ধাক্কা দেয় তাদের বজ্জাত নিশ্বাস,
ইমানের স্তন চুষে খায় হারামির দৃষ্টি অনবরত ।
যে জন্মের অশ্বারোহী দূরত্বের
কঠিন প্রান্তর পেরিয়ে গেছে
তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো
কষ্টের ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা উড়াল বাতাস,
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে
পুকুরের জলের উপর ভেসে ওঠা কান্নার শব্দ শুনি,
যৌনাঙ্গ থেকে ধুয়ে যাওয়া অন্ধকারের
চেয়েও ভয়ঙ্কর অনুভব করি ইতরগুলোর বীর্য থেকে
রেরিয়ে আসা সতীর মর্মজ্বালা,
আমার আজকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় ঈশ্বর,
দুয়ার খুলে দেখি, ইতরগুলোর কামের আড়ালে
ঢেকে যাচ্ছে আমার মা,বোন
আর সন্তানের পবিত্র মুখগুলো ।
ঈশ্বর তোমার ঘুম নেই জানি,
আমার আজকাল ঘুম ভেঙ্গে যায় ঈশ্বর,
আমি শুধু মানুষের চিৎকার শুনি,
শিশু সন্তানগুলো কী অসহায় হয়ে ডেকে যায় আমাদের,
আমরা বধির হয়ে,অন্ধ হয়ে,স্বার্থের কাছে নিজেকে
প্রতিটি দিন বিক্রি করে বাড়ি ফিরছি!
ঈশ্বর আজও ঘুম হয়নি,আমি জেগে আছি,
তুমি কি দেখতে পাচ্ছো আমার ঘুমহীন চোখ ?
তাকিয়ে দেখো ইতরগুলো কী লালসায়
আমাদের সাজানো ফুলের বাগান নষ্ট করছে
আর পুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে,
তুমি দয়াময় পরবাসী হে আমার প্রিয় ঈশ্বর,
তুমি কান পেতে শুনো,মৃত্যুর যন্ত্রণায়
ছটফট করে প্রাণগুলো কী ভাবে বলে যাচ্ছে
তাদের আগুনে ঝলসে যাওয়ার বেদনা ।