কবিতাগুচ্ছ ।। কিয়াস আহমেদ
কবিতাগুচ্ছ ।। কিয়াস আহমেদ
চিহ্ন


.
এখানে আর তোমার কোনো চিহ্ন নেই,
সব মুছে গেছে প্রায়
একেবারেই !
.
একথা আমার বন্ধুরাও স্বীকার করে একবাক্যে
আর যারা প্রেমর কবিতা লেখে তারাও
.
এখন আমি মরে গেলেই তোমার সব চিহ্ন শেষ।
তুমিই তো ওদের বলেছিলে 'আমি তোমার কপালের টিপ'।

সেক্স


.
আমরা লুকিয়ে সেক্স করে ছিলাম,
সেক্স তো লুকিয়েই করার জিনিস।
চন্দ্র - সূর্য গ্রহ আর নক্ষত্রকে ফাঁকি দিয়ে -
আমরা পৃথিবীর এককোণে
একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায়
লুকিয়ে সেক্স করে ছিলাম,
সেক্স তো লুকিয়েই করার জিনিস।

রাক্ষস


.
যারা সবরকমের মানুষ নিতে পারেন না
সবরকমের মানুষের সাথে মিশতে পারেন না
আদর করতে পারেন না।
তারা আমার কাছে মানুষ রেখে যাবেন।
.
আমি সবরকমের মানুষ নিতে পারি,
.
আপনার ভাই হোক বা বোন হোক
প্রেমিকা বা বউ হোক,
আমি সবরকমের মানুষই নিতে পারি
আদর করতে পারি,
.
তা না হলে ওরা আমাকে রাক্ষস বলে কেন?

সুযোগ


.
আমাকে আপনার কাছে রেখে-
আমি অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলাম,
বলেছিলাম ; আমাকে একটু ধরুন
আমি একটু ঘুরে আসি।
.
আজ যখন ফিরে এলাম,
আমাকে আপনার কাছে দেখতে পেলাম না,
বললাম,আমাকে কোথায় রেখেছেন?
আপনি আমাকে একটি ঠিকানা ধরিয়ে দিয়ে বললেন
ওখানে যাও, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়ি
সে তোমাকে যত্ন করে রেখেছে,
তুমি তাকে আমার পরিচয় দিলেই -
সে তোমাকে ফিরিয়ে দেবে,
.
আমি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়ি গেলাম,

সব বলে; তার কাছে আমাকে ফিরে চাইলাম,
সে আমাকে বললো আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি
এবং আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি
আপনি অনেক কষ্ট করে এতটা পথ এলেন
কিন্তু সত্য হলো এই যে
আমার এক দূরসম্পর্কের ভাই এসে ছিল বেড়াতে
সে যাবার সময় আপনাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইলো
আর আমিও কিছুতেই না বলতে পারলাম না
তাই দিয়ে দিলাম! তার জন্য অবশ্য মন খারাপ করবেন না
আমি একটা ফোন করে দিচ্ছি,
আপনি সেখানে পৌঁছানো মাত্রই নিজেকে ফিরে পাবেন।
.
আমি তার দূরসম্পর্কের ভাইয়ের কাছে গেলাম,

তিনি বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন,
তার সামনের টেবিলের উপর দুটি চায়ের কাপ রয়েছে,
আমাকে দেখে বললেন আপনার জন্যই আমি বসে আছি
ভাবলাম একসাথে চা খেতে খেতে কথা বলবো
আমি ধারণা করেছি আপনি এই মসয়ের মধ্যে চলে আসবেন
দেখুন কেমন মিলে গেলো।
.
আমরা চা খেতে শুরু করলাম,

চা খাওয়ার ফাঁকে তিনি কথা বলছিলেন,
গত পরশুদিন আমি
আমার দূরসম্পর্কের ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম
(মানে যেখান থেকে আপনি এখন এলেন)
সেখান থেকে ফেরার পথে আমার মনে হলো আপনাকে সাথে নিয়ে যাই
আর আমার ভাইও আপনাকে আমার সাথে নিয়ে আসার জন্য
জোরাজোরি শুরু করলেন তাই আমিও না বলতে পারলাম না।
কিন্তু আমার এত কাজ যে আমি আপনাকে এনে
কোথায় রেখেছি তা আর এখন মনেই করতে পারছি না,
.
আমার দূরসম্পর্কের ভাই ( মানে যার কাছে থেকে আপনি এলেন)
তিনি আমাকে ফোন করার পর থেকে আপনি আসার আগপর্যন্ত
প্রায় দেড় ঘণ্টা আমি পুরো বাড়িতে আপনাকে খুঁজেছি
কিন্তু আপনার একটি চিহ্নও পাই নি এই বাড়িতে
তাই আমি ভাবছি আপনাকে পথেই কোথাও ফেলে এসেছি কিনা
এই নিয়ে অবশ্য পত্রিকায় একটি নিখোঁজ সংবাদ দিতে চাইছি
আর থানায়ও একটা ফোন করতে চাইছি এখন আপনার অনুমতির অপেক্ষা করছি।
.
আমার চা খাওয়া শেষ, আমি চলে আসার জন্য উঠে দাঁড়ালাম,

তিনিও আমার সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন
এবং কাছে এসে হাত ধরে বললেন,
আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন?
নাকি আমাকে সন্দেহ করছেন?
.
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম
সন্দেহ তো আমি তিন জনকেই করছি,
কিন্তু কি করবো বলুন? এভাবে কেউ সুযোগ পেলে
কবে কে কাকে ছেড়ে দিয়েছে?

জেনারেশন



আমরা কারও শেখানো ভাষায় কথা বলি না
আমরা কথা বলি আমাদের নিজস্ব ভাষায়
কেনো না আমরা অতীত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।
.
আমরা প্রেম করি নতুনভাবে
যেভাবে কেউ আগে কখনও প্রেম করে নি!
এমনকি আমরা সন্তান জন্ম দেই নতুনভাবে
আর তাদের লালনপালন করি আমাদের মত করে,
.
আমরা যখন বুড়ো হয়ে যাই
তখন অতীতের বুড়োদের মত নিজেদেরকে বুড়ো ভাবি না,
আমরা নিজেদের কৌশলে অন্যরকম বুড়ো হয়ে বাঁচি,
.
শুধু মৃত্যু এলে আমরা এমনভাবে মরে যাই
যেভাবে কোটি কোটি বছর আগে মানুষ মরে যেত।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান