কবিতাগুচ্ছ ।। হামিদুর রহমান সোহেল
দলছুট কয়েকটি চোখ
পিছনে যেতে যেতে দেয়ালে ঠেকে গেলে পিঠ-
সূত্রপাত ঘটে ঘুরে দাঁড়াবার অনন্ত প্রচেষ্টার।
বিপ্রতীপ প্রত্যাশার রসাস্বাদনে পাল্টে যায়
কারো কারো স্বপ্নের নিগুঢ় ভাবার্থটুকুই।
সম্মিলিত আহাজারি এসে ধুয়ে মুছে
সাফ সুতরো করে দিয়ে যায়
আজন্ম জমানো পঙ্কিলতার অনুচ্চ ঢিবি।
হতাশার জড়ানো চাদরে ঢেলে দিলে সমগ্র সুখ
সংজ্ঞাহীন পৃথিবীর শ্বাসমূলেই বসত গড়ে তোলে
যাযাবর পাখিদের দলছুট কয়েকটি চোখ।
শুধু শুধু বাতাসের গান শোনার প্রতিক্ষায়
জেগে থাকে রঙধনুর ছেঁড়া ছেঁড়া রঙিন ছায়ারা-
বিশালতার কাছেই শুধু মানা যায় নির্মোহ হার
হার মানাতেই যেন জাগতিক প্রশান্তির ঢেউ।
অলেখা চিঠি
একটা চিঠি লিখবো বলেই
জেগে আছি এই স্মিত রজনীতে।
চিঠির কোন প্রাপক থাকবে কিনা
তা ভেবে সময় চলে যাচ্ছে বলেই
শুরু হয়নি চিঠির লেখ্যরূপ।
ধরে নিই কোন এক সময়
লেখাটি শেষ হলেও
তা কিভাবে পাঠাবো
অনির্ধারিত কোন প্রাপকের কাছে?
চিঠির সম্ভাব্য ভাষা প্রাঞ্জল হলেও
তা কোন ভাষায় লিখবো সেটাই বোধগম্য নয় আমার কাছে।
মাতৃভাষা বাংলায় তো আজকাল আর কোনকিছুই
লিখতে পারিনা ঠিকঠাক।
ভাষা ও বানানজ্ঞান এতোটাই সীমিত যে, নিজের নামটা লিখতেও কাটাকুটি করি সহস্রবার।
চিঠিটা লেখা শেষ হলেও কিন্তু নিস্তার নেই কোনভাবেই।
পোস্ট অফিস কি আছে আদৌ হাতের নাগালে?
এখন তো যুগ পড়েছে "রেডএক্স" কিংবা "গ্রীণএক্স" এর।
মান্ধাতার কুরিয়ারও যেন নিতান্তই বেমানান আজ- হাল আমলে।
সবকিছু ঠিকঠাক মিললেও
এখনো মেলাতে পারছিনা
চিঠির বিষয়বস্তু।
চারিদিকে ঘুরপাক মৃত্যুময় "করোনা"র।
শূন্যতায় ভেসে গেলে
(অকাল প্রয়াত স্নেহাস্পদ রোকন এর স্মরণে)
সুনসান নিরবতা ভেঙে হঠাৎই আগমন তোমার
কেউ তো কখনো ভাবেনি এমন !
অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো
একেবারে হাড় কাঁপানো শীতের রাতের মতোই যেন;
এভাবেই কি কাটছিলো সময় তোমার ?
প্রতিদিন রোদ-ধুলোমাখা ব্যস্ত শহরে ঘোরাফেরা
দিনশেষে ঝুলিতে অর্জন; একেবারেই মন্দ নয় কিছু-
পরিচিত কিংবা অর্ধপরিচিত মুখগুলোর সাথে
ভাব ও ভাষার অকৃত্রিম বিনিময়েই
যেন রাজ্যের প্রশান্তি তোমার।
ভাবেনি তো কেউ তোমাকে নিয়ে এভাবে-
কতো কিছু করে গেলে সবারই জন্য।
শুধু নিজেকে নিয়েই থাকোনি তুমি ব্যস্ত কখনোই
চারপাশের কাদামাখা পথঘাট পেরিয়ে অবশেষে
সীমাহীন অভিমানে থামলে গিয়ে বুঝি অজানাতেই।
শূন্যতায় ভেসে গেলে ভাসমান এই পৃথিবী ছেড়েই-
তবে কি অপরাধ ছিলো কিছু আমাদের ?
ফাল্গুনী চাঁদ
পথ চেয়ে থাকতে থাকতে
নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে আজকাল।
এই যে আজ রাতে আকাশে উদয় হচ্ছে
ঝলমলে একটি পূর্ণাঙ্গ ফাল্গুনী চাঁদ -
আমি চাইলেও সে না এসে
পারবে কি লুকিয়ে থাকতে?
এটা আমি আজ খুব ভালো করেই
উপলব্ধি করতে শিখেছি যে- আমার চাওয়াতে এই ফাল্গুনের
একটি পলাশ কিংবা শিমুলও ফুটবেনা নতুন করে।
তবে শুধু শুধু কেন এহেন আয়োজন?
কেনই বা মহাকালের শেষ বিন্দুটুকু
ছুঁয়ে দেখার এমন তীব্র বাসনার লালন
এই অবুঝ হৃদয়ে?
বেশি কিছু চাওয়া নেই
যদি কাছেই থাকো
তবে সাড়া দিও তুমি অকপটে।
কাছে থেকেও কেউ কেউ
থেকে যায় বহুপথ দূরে- এমন ঘটনা আজকাল খুব বেশি বেশিই ঘটে।
হাতের আঙুলগুলো ছোঁয়া যায়
এমন দূরত্বে থেকেও।
মনে মনে ঘৃণা করে
হৃদয়ে প্রেমের ছবি এঁকেও।
বেশি কিছু চাওয়া নেই
পাশে থেকো এটুকুই
খুব করে চাওয়া আজ।
আমি নাইবা হতে পারি শাজাহান
তুমি কেন হবেনা মমতাজ ?
দায়
তুমি কি আমারই অপেক্ষায়
জেগে আছো এতোটা দীর্ঘ সময় ধরে?
তাহলে আমি একেবারেই নিশ্চিত যে, পরবর্তী ভোরের সূর্যটা হয়তো তোমার অদেখাই থেকে যাবে
এ যাত্রায়।
আমি বুঝিনা-
কিছুতেই পারিনা বুঝতে
জগতে আমি নিশ্চয়ই
তেমন কোন মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারিনি যে,
আমার জন্যই কাউকে
অথবা নেহায়েত তোমাকেই
অপেক্ষা করতে হবে
এই করোনোত্তর কালে!
আজ আমার অনেক দায় জমা হবে নিশ্চিত।
তোমাকে কষ্ট দেওয়া কিংবা
আগত বসন্তের নির্মল ফুলগুলোকে
ইচ্ছেমতো ঘৃণা করার দায়।
অথবা কোন নিষ্পাপ কিশোরীর
জীবনব্যাপী আরাধ্য কোন যুবকের
ধূমায়িত ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ার মুহূর্তটিকে
ধ্বংস করে দেওয়ার কুৎসিত কোন দায়।
এমনটা হলেও কোন ওজর কিংবা
আপত্তি ছিলোনা আমার।
শুধু যদি জীবনের মানেটা
অন্তত শিখে নিতে পারতাম
এই তোমার থেকেই।
অবিরত প্রেমালাপ
অবিকল বাতাসের মতোই স্নিগ্ধ মুখখানি তোমার-
ধূপছায়া বিকেলে তোমার মুখ দেখে দেখেই
হয়ে যায় অবিরত প্রেমালাপ।
টইটুম্বুর জলের ধারায় সাঁতার কেটে কেটে
ডুবন্ত সময়ের ঘোর কেটে যেতেই
অবিচ্ছেদ্য ভঙিমায় কেঁদে ওঠে
তোমার জলভরা সহোদরা চোখ।
সূর্যস্নাত প্রত্যুষেই বুঝি হয়ে যাও বেসামাল তুমি
আগলে রাখা বেদনার অফুরান ঝাঁপি খুলে
ছড়িয়ে দাও বিষমাখা ফুলেদের একরাশ ঘ্রাণ।
ঘুমচোখে রাতভর ক্যানভাসে এঁকে যাই
আজন্ম স্মিতহাস্য মুখ-
অতঃপর ঘুম ভেঙে দেখি শুধু তোমারই প্রচ্ছায়া।