১) শিরোনামহীন
এই রাস্তায় কোনো যতিচিহ্ন নেই
দাঁড়ি কমায় থমকে যাওয়া নেই
বিস্ময়চিহ্নে অবাক হওয়া নেই
লোকজন হেঁটে চলে অবিরাম।
ধূমায়িত চায়ের সকাল আসে
অতি সাধারণ কাপে
উষ্ণতার সৌখিনতা বিলাতে ,
গরম চায়ের কাপ শূন্য হয়
পুনরায় ভরে ওঠে যৌবনভারে,
চকচকে প্রলেপের আহ¦ান
অসংখ্য ছোট-বড় বুদবুদ,
সময় বয়ে যায় উত্তাল নদীর মতো
চলন্ত সাদা মেঘের মতো
সব ঠিকঠাক চলে
শুধু কিছু মানুষ পোড়ে
ভুল সম্পর্কের দাবানলে।
২) অতঃপর আমি হাত ছেড়ে দেই
অতঃপর আমি হাত ছেড়ে দেই
একা একা পথ হেঁটে চলি,
মুহুর্মুহু রৌদ্রের বাগানে মুখ লুকোই
ওই উপত্যকা আমার আপনার নয় ,
ছিল না কখনো বাহুবদ্ধ,
আমাকে চূড়ান্ত করে ত্রিবেণীর ঢেউ,
যেদিন জানালা খুলতেই
আকাশ ছুঁয়ে দেয় দেয়ালের শরীর
সেদিনই দ্রোহের আগুনে পুড়ে
টুকরো টুকরো হয়ে যায় ওড়নার ঘের,
এই যে থেকে থেকে বিষণ্নতা,
আবার সুখের সহনীয় গুণটানা
আমাকে আশ্বস্ত করে,
নতমুখী করে
ভোরের আকাশের মতো।
৩) দিনলিপি
হারিয়েছে পথ ওই নীল-সাদা ঘুড়ি
দিগন্তে থেমে গেছে দৃষ্টির সুখ
নাগরিক বিকেলের রোদ হলো চুরি
বিলবোর্ডে ঢেকে গেছে আকাশের বুক।
আকাশের উদাত্ত নীলে ভাসে ঢেউ
নেমে এল জলধারা এসিড ছোঁয়ায়
ঢেঁকিভানা সুখ পেতে ভিজে যায় কেউ
কামনার জলফোঁটা ইটের খোয়ায়।
সমুদ্রে ভেসে গেছে অভিলাষী মন
চারদিকে ভেজালের মহা উৎসবে
ধর্ষিতার চিৎকারে দুলে ওঠে বন
ডাস্টবিন কাঁপে নবজাতকের রবে।
ধানশ্রী রাগে নেই সেই ভালোলাগা
উবে গেছে ধোঁয়া হয়ে স্বপ্ন মধুর
খসে গেছে তরুণীর দুবাহুর তাগা
একাকী সন্ধ্যা কাটে আয়েশী বধূর।
হুইসেল দিয়ে যায় সন্ধ্যার ট্রেন
ঘরমুখী মানুষের সবেগে ছোটা
কেন এই জীবনটা হলো যেনতেন
জংশনে বসে ভাবে সেই বৃদ্ধটা।
৪) নীরবতা
মাঝে মাঝে খুব চলে যাই
থমকানো এক নীরবতার ভেতর,
ভালো লাগে দেখতে কথাহীন কিছু দৃশ্য
অনুভব করতে প্রতিটি মুহূর্তের ডানামেলা সুখ
যখন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাই মেঘের মতো
গলে গলে যাই মোম হয়ে
কিংবা তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ি,
কথাহীন মৌনি দুপুর কিংবা সন্ধ্যা
অথবা মাঝরাতের নিঝঝুমতা
আমাকে তিলে তিলে আবার গড়ে তোলে
নির্ভার আকৃতি দেয়,
ফিরিয়ে দেয় চেনা রূপের ছবি,
এই সুনসান নীরবতার ঝকঝকে মোহ
সাজতে শেখায়, বাঁচতে শেখায়
আমায় বারবার বাঁচিয়ে দেয়।
৫) এই শহরে
এই যে, এই শহরে
প্রতিদিন না পাওয়ার দ্বন্দ্ব
ইচ্ছা-অনিচ্ছার নিরন্তর সংঘর্ষ
ভালো আর মন্দের পরস্পর বিরোধিতা,
প্রতিনিয়ত এসব দেখে দেখে
স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়,
প্রতিবাদীর কণ্ঠ চেপে ধরা এই শহরের সঙ্গীতে
নেই অস্থায়ী, নেই অন্তরা, সুরের মূর্ছনা,
পৈশাচিক হাসিতে ভেসে যায় এর গন্ধরাজ বিকেল,
বিটুমিন পথে সহজেই দৃশ্যমান হয়
রক্তের দুর্বোধ্য গ্রাফিক্স,
ক্ষমতাবানদের এ শহরে বৃষ্টির আঁকিবুঁকি নেই
রঙধনু এসেও ফিরে চলে যায়,
নিজেকে মেলে ধরে না ময়ূরের মত,
প্রিয়জনকে জোছনায় ভাসাতে না পেরে
আড়ালে ডুকরে ডুকরে কাঁদে চাঁদ।