শামীম
আজাদ তিন দশক বিলেতে আছেন এবং বাংলাদেশী কবি ও গল্প-কথক
হিসেবে মূলধারায় স্থান করে নিয়েছেন। ১৯৯০ সালে শিক্ষকতার
জন্য তিনি বিলেতে যান কিন্তু সেখানে থেকেই তিনি এই তিন দশক বাংলাদেশে লিখে গেছেন
নিরন্তর। যার কারনে তিনি কখনোই পাঠক সংলগ্নতা হারাননি।
সত্তর ও আশি দশকের পুরোটা জুড়ে বাংলাদেশেই সাপ্তাহিক ’বিচিত্রায়’ সাংবাদিকতা, ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা, রেডিও ও টেলিভিশনে উপস্হাপনা এবং সেই সঙ্গে কবি ও লেখক হিসেবে নিরন্তর সাহিত্য সাধনা নিয়েই কেটেছে এক কর্ম মুখর ও বর্নাঢ্য সময় ।
২০১১ সালে বিশ্বখ্যাত এডিনব রাফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালে ও ২০১২ ইংল্যান্ডের সাংস্কৃতিক অলিম্পিয়াডে পরিবেশন করেছেন কবিতা ও গল্প। ১৯৯৭ সালে আমেরিকার বিখ্যাত সাময়িকী ‘দি নিউইয়র্ক’ এর বিশেষ সংখ্যায় তাঁর কবিতার অনুবাদ ছাপা হয়।
ইংরেজী ও বাংলা ভাষায় কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, অনুবাদ, শিশুগ্রন্থ মিলে তাঁর বইয়ের সংখ্যা সাঁইত্রিশোর্ধ।
বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৫ দেশী ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইলে সাংবাদিকতার জন্য বিচিত্রা এ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ বাংলা একাডেমীর সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার এবং ইংল্যান্ড থেকে ২০০৯ বাংলাদেশী হুজ হু, ২০০১ সিভিক, ২০১৪ ক্যানারী ওয়ার্ফ গ্রুপ কমিউনিটি এওয়ার্ড এবং ২০১৯ গ্রিসের এথেন্স এর এ্যা পোয়েটস আগোরা থেকে আবাসিক কবির সম্মাননা লাভ করেছেন।
ইমেলঃ lekhok@gmail.com
https://www.poemhunter.com/shamim-azad/biography/
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shamim_Azad
চূর্ণকবিতা
১.
ভাইরাসের চরণে সব নার্ভ
জমা দিতে বাধ্য হয়েছি
এখন যুদ্ধ করবো কিভাবে?
২ .
প্রতিদিন ঘুমোতে যাই এক পৃথিবী রেখে,
জেগে উঠে দেখি সে আরেক হয়ে গেছে!
২.
কবিতা দিয়ে বাণিজ্য হয় না
কোভিড দিয়েও কবিতা হয় না
কিন্তু কবি যে লাচাড়।
৩.
আমার যে হায় খসা পালক
বৃক্ষভাঙা কাল
কইলজা সাজাই চোখ চন্দনে
পুচ্ছ করি লাল।
৪.
চার্গিল টার্কি, টলস্টয়ের টি
আর
টেমস রিফুকরা জলের পকেটে
এই অধমের কবিতাও
ভাসছে ছিন্ন:মস্তা!
৫.
যদি দৈবাৎ কোনদিন
ঘুম ভেঙে জেগে উঠি
কফ্ ও কাশিহীন
বলি, শুভ জন্মদিন
শামীম
এ তোমার নতুন প্রভাত!
প্রিয়োষ্ণ কথা
When spoken words lose their voices
The speakers die without choices.
-তোমাকে আজ এত টক্টকে দেখাচ্ছে যে !
-কাল রাতে শোনা সব রবীন্দ্র সংগীত গুলোই ছিলো অসম্ভব লাল।
- লাল রবীন্দ্রনাথ!
-শৈশবস্মৃতি তূল্য
-এক অনন্য যাদুকর
- যার ম্যাজিক এক চলিষ্ণু নদী। বয়ে চলতেই থাকে… চলতেই থাকে … চলতেই…
বলে আমি ঠোঁটে ফোয়ারা এনেছিলাম।
আমাদের কথোপকথনে ঠিক এক মানুষ পেছনে দাঁড়ানো
একজনের কন্ঠ থেকে বালকের মত উচ্ছ্বাস উড়ে এসেছিলো।
আমি ঘাড় ফেরাতেই তুমি মানুষটাকে আড়াল করে দিলে
আমি আর তার দাঁত দেখতে পেলাম না।
-এসে গেল হতাশায় হদ্দ হয়ে যাওয়া মনের মানচিত্র।
-আমরা এগুচ্ছিলাম হোয়াইট চ্যাপেল আর্ট গ্যালারীর কিউ ধরে
-এ্যাকসেন্ট্রিক ও এ্যক্লেইমড আর্টিস্ট
লুইস বোর্জোয়ার কাজ দেখবো,কথা শুনবো বলে।
-আমাদের পেছনের
সেই মানুষটি নারী না পুরুষ বুঝতে না বুঝতেই
সে এক টিরামিসু টিউলিপ হাসি দিয়ে সামনে এসে
থ হয়ে যাওয়া এই আমাকেই সোজা সিলেটিতে বলল,
আফনে সামনে আগ্গাউকা!
-বিলেত বলে কথা!
-এখানের আরেকটি ভাষা সিলেটি !
-অথচ টিউলিপ পরা দেখে বুঝতেই পারিনি
কিউতে আমাদের মত খয়েরী আর কেউ আছেন!
তুমি ফিসফিস করে বললে
-এদের পুরো দলটাই টয়েনবীর আর্টস এ্যাডমিন দেখে, নিউইয়র্কার পড়ে,
বিকালে ১৮৯৪ সালের পুরানো ব্লাইন্ড বেগার পাবে
খোলা চোখে পাইন্ট নিয়েবসে
এমনকি প্রতিবন্ধীদের প্রপিতামহরা পাপী ছিলেন
এমন কথা খারিজ করতে ইংরেজীতে তীব্র ও সফল ডিবেটও করে!
-নিশ্চয়ই ওর দাঁতও উৎকৃষ্ট।
-মনে আছে, একদিন,
আমাদের প্রথম কালে চলতি লাল বাসের দোতলায়,
ল্যা মিজারেবল দেখে রাতের বেলায়
আমাকে হো হো হাসির মধ্যে থামিয়ে বলেছিলে-
-চোখ বন্ধ করে ওভাবেই থাকো
আর ট্রফেলগার স্কোয়ার পেরিয়ে যেতে যেতে
মুখগহব্বর অটুট রেখে আমি ইউনিক্লো কোটের কলারটা
পেছনে ঠেলে দিয়েছিলাম।
সিটের নিচ থেকে হিটিং এর হাওয়া আমাদের পা উষ্ণ করে দিচ্ছিলো।
-আমি গ্লভস খুলে
বাঁ হাত তোমার জুলপির উপর রেখে
ডান হাতের নির্দেশিকা দিয়ে
তোমার ওপর পাটি দাঁতে ঘষা দিয়েছিলাম!তুমি,
-এটা কি হ’ল এটা কী হ’ল বলবার আগেই,
-মানুষের সুখী মুহূর্তে
আমার তাদের দাঁত ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে,
বলেছিলাম আমি।
-অদূরে সুইট চেস্টনাট ভাঁজছিল
মাল্টা থেকে মশলা আনা পিটার।
-টিকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে হলে প্রবেশের আগে
তুমি খপ করে আমার হাত জোড়া ধরে বল্লে,
-আনবো এক ঠোঙা গরম গরম?
-তুমি জানতে, আমি ঐ চেস্টনাটে
শৈশবের বৃষ্টি দিনের টিনের চালের শব্দ শুনি,
পোড়া কাঁঠাল বিচির গন্ধ পাই।
-আমি টকটকে লাল রবীন্দ্রনাথ দেখি।
-নাহ্।
আমি আসলে সেই
হতাশায় হদ্দ হওয়া মানুষটার আদৌ কোন
মসৃণ পার্ল আছে কিনা দেখতে চেয়েছিলাম।।
মৃত মানুষের বাজেট
আজ সারাদিন কেবল
জাতীয় বাজেটের বল ছুটেছে
আয় ব্যয়ও ন্যায়ের নির্যাস
নিঙড়ে
পালের গোড়ায় জল দিয়েছে সবাই
কিন্তু কলঙ্কিনী কোভিড কালের পর
আমাদের মানস সরোবরে যে
সংকট হবে তার জন্য তো
কোন থোক দেখলাম না!
মেগা প্রজেক্টের তরল গরমই
হয়ে গেছে আমাদের অভ্যাস।
খাত মানেই প্রবৃদ্ধির প্রপেলার
আর সার্বিক শব্দটা দেহের দাহ
বাদ দিয়ে শুধু পরিসংখ্যান হয়ে
গেছে।
যে সব মানুষেরা তাদের পালক ফেলে
চলে গেলেন
তাদের জন্য মনুমেন্ট না হোক
মিউজিয়াম তো হতে পারে-
যেখানে তাদের রূপোর আংটি,
অসমাপ্ত কবিতা,
কলার তোলা সাদা ব্লাউস,
তাদের মাতৃসদনের ঠিকানা বা
লাস্ট সাপারের কালা বাসের মত
পানপাত্রটি থাকতো।
বাজেট নিয়ে আমার সাতাশিটা
না হলেও সাতটি প্রশ্ন আছে।
যখন আমাদের গায়ে
পানকৌড়ির নরম রোম আর রোদ ছিলো
মানস ডিঙিতে বীজের ব্যাপক
আকাঙ্খা ছিলো
স্বাদু বিস্কুটের মত ছিলো রাতের
সেন্ট
তখন কেন কোন বাজেটের
দরকার হতো না ?
আজকের অধিবেশনের
শেষ বধিরটি ও বানোয়াট গল্প
বলেছে
শ্রোতারা মানুষ মড়কের জন্য
যে অর্থায়নের প্রয়োজন
তার কথা না বলে কেবল
পৃষ্ঠা উল্টে গেছে
আর আমি আমাকে প্রশমিত করেছি
প্রিয়জনের গায়ে চোখের জল ঘষে।
আয়ু কিনতে গেলে
রিটার্নের কথা ভাবা যায় না।
মুক্তির অনুপান
তোমার ত্বকের আলো
গেঁথে নিচ্ছে সকল গহীন
কন্যা বসুমতি,
তুমি কি তবুও
প্রতিরাতে নিদ্রাকর
এই জঠরে আমার
যা পড়ে আছে সেই পৌষ থেকে
একেলা জরায়ুবিহীন!
চন্দ্রকুঁচো নেমে এলে
ঘুমছায়া সরে গেলে
আমি তোর তাপ পাই
হৃদপিন্ডও পাহারা দেয় তোরে,
সোনারে!
তোর জন্ম ভোরে
যে অত্যাশ্চর্য হরিৎ দেখেছিলাম
আমার বাহুতে তা জমা আছে
আমি যতদূর যাই
ততদূর তোর সিথান খুলে যায়।
সুকন্যা আমার,
এইবার ছুঁড়ে ফেলো কীটে কাটা
স্লিপার তোমার।।