আরও নিঃস্ব হল বাংলা সংস্কৃতিজগত, শূন্য হল বাংলা কবিতার বাহুডোর। চিরঘুমের দেশে চললেন কিংবদন্তি কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। জার্মানিতে নিজস্ব বাসভবনে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত নটা নাগাদ মৃত্যু হয় অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর। বেশ কয়েকদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন কবি। মৃ্ত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর স্ত্রী এলিজাবেথ এই মৃত্যুসংবাদ জানান।
রবীন্দ্র অনুসারী কাব্যরুচি থেকে বাংলা কবিতাকে এক পৃথক খাতে বইয়ে দেওয়ার শুরু পঞ্চাশের দশকে। এই সময়ে যাঁরা নিজস্ব ভাষাভঙ্গি নিয়ে লিখতে এসেছিলেন অলোকরঞ্জন ছিলেন তাঁদের অগ্রপথিক, কবি শঙ্খ ঘোষের পরমবন্ধু। জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছে ২০ টির ওপর কাব্যগ্রন্থ। সেই কাব্য অভিপ্রায় উদ্বুদ্ধ করেছে কতশত নবীন শ্রীজাতকিশোরকে কবিতার কাছে আসতে।
অলোকরঞ্জনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর। শান্তিনিকেতনে প্রথম পাঠ সেরে অলোকরঞ্জন উচ্চশিক্ষার জন্য পা রাখেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। স্নাতকোত্তর সারেন কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় থেকে। এক দশকেরও বেশি সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক বিভাগে পড়িয়েছেন।
হামবোল্ড ফাউন্ডেশান ফেলোশিপ নিয়ে অলোকরঞ্জন একসময়ে পাড়ি দেন জার্মানিতে। বাংলা ভাষার সঙ্গে জার্মান সাহিত্যের মেলবন্ধনের রূপকার তিনিই। দুভাষাতেই অনুবাদ করেছেন অবিরল। জার্মান সরকার তাঁকে গ্যেটে পুরস্কারে ভূষিতও করেন। ১৯৯২ সালে মরমী কারাত কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে সাহিত্য অ্যাকা়ডেমি পুরস্কার এনে দেয়।
তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে অলোকরঞ্জনের ছিল এক অদ্ভুত বন্ধুতা। আজীবন সকলের বন্ধু, সদালাপী মানুষটি চলে গেলেন নিশ্চুপ ভঙ্গিতে। কিন্তু কীর্তিনাশার দেশে এই মৃত্যুর চেয়েও বড় যে পয়ারছন্দ, বহমান অক্ষরমালা। অলোকরঞ্জনকে কখনও ভুলবে না বাঙালি।