অপমৃত্যুর দলিল
মোমবৃক্ষের তলে আনন্দ নেই
কেবলই অক্সিজেনহীন বাতাসের মাতম ,
আলো গলে গেলে ছায়ায় কুণ্ডলি পাকায় -
বুনোশুয়োরের দল !
ছায়ার পর্বত পেরোলেই জীবন ধীর পায়ে হাঁটে
লাশকাটা ঘরের দিকে ,
অতঃপর স্বজনেদের হাতে একটি অপমৃত্যুর দলিল !
সেখানে সাড়েতিন হাত মাটিই যেনো তাঁর জন্মের অধিকার ,
আবার কেউ কেউ মৃতজ্যোৎস্নায় গুম হয় ছায়ার পর্বতে ...
পৃথিবীর দেয়ালে যখন ঠেকে য়ায় পিঠ
পরাজিত সেই ফ্যাকাশে মুখগুলো
চৈত্রের ফাটা মাঠের মতো ঠোঁট
নেই আদ্রতার লেশ
নিয়তির প্রখরতায় বাস্পিত মুখের লালা ,
নাষিকারন্দ্রের বেড়িবাঁধে বিষাক্ত মাছির প্রজননে
বড্ড ক্লান্ত ,মহাকালের স্তন চুষে চুষে
এখনও নিঃশ্বাসের হাই তুলে বাচাঁর প্রবল উচ্ছ্বাস নিয়ে
শ্রান্ত হাতের আঙুলে গজিয়েছে বৃক্ষের মতো শেকড়
মাটির নির্মল আদ্রতা পান করে সবুজ পল্লবের প্রার্থনায় ,
শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলে,ভাঙা পটের মতো
দুটি গালে ,জেগেছে লবনের চর
সেই চরে স্বপ্নিল বৃক্ষের গগন ছোঁয়া উল্লাস ।
ল্যাম্পপোস্টের দণ্ডিত আলোর নিচে স্বপ্ন সাজে
বেঁচে থাকার স্বপ্ন ,
পূর্ণিমার চাঁদের থালায় অমৃত্যের মতো পান্তাভাত !
কিন্তু ক্ষুধা মিটে না তাঁদের ,
দ্বিখণ্ডিত চাঁদের ফাঁকে স্বপ্ন হারিয়ে যায় মহাব্যুমে ।
ভাঙে ঘুম
জেগে ওঠে স্বপ্নকাতর মানুষ ,
দিনের হাজিরা খাতায় লিখে নাম
শাণ দেয় লাঙলের ফলা ,
জমাটমেঘের বুকে লাঙ্গলরেখায় বহায় জলের স্রোতধারা
পাষাণের বেদীতে মাটির চারাগুলো যেনো আবার
শনশন করে বেড়ে ওঠার অনন্ত প্রচেষ্টায় ।
ভাবের সিম্ফোনি
বাউলের ঠোঁট থেকে গান উড়ে যায় ...
যেতে যেতে বহুদূরে ঝরে পড়ে সুরের পালক ,
করুণ শব্দরা যেনো বৈকুণ্ঠধামে
দিকচক্রবাল জুড়ে এঁকে যায় নদীর স্বরলিপি ।
তরঙ্গে তরঙ্গে ওঠে লহরি আনন্দ আশ্রমে
গুল্ম শেকড়ে জল সিঞ্চনে
আফিমের চারায় ফোটে গোলাপের কুঁড়ি ;
পূর্ণিমার চাঁদ ডুবে গেলে বাউলের চোখে
কলঙ্কের সাগরে জাগে ভাবের সিম্ফোনি
আমি তন্ময় হয়ে শুনি
ভাবের তরঙ্গে ভেসে যাই ,
বিনিদ্র সাগরের ঢেউ গুনে গুনে
সুরের গুলিস্তানে ।
রিপুর মুদ্রা
উঁকি দিলে রিপুর মুদ্রা
রতিপুষ্প রাতে
কে যায় আর অমরাবতীতে ?
গৃধ্নু দৃষ্টি যার
সে কী সাধু ? কবেকার ,
সুবর্ণ জ্যোৎস্নায়
সব দেখি ভেসে যায় ,
কে সাধু কে শয়তান ত্রিবেণীর ঘাটে ?
অতলান্তের অন্বেষণে
স্বর্গের খোঁজে সরুপথে হেঁটে
অনেক আগেই মরেছি আমি
কোথায় ঠিক মনে নেই, স্থান কাল ,
হয়তো পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে !
অথচ এখনও লাশটা হাতছাড়া ,
গুম হয়ে গেছে
অন্ধকারে দণ্ডিত ছায়ার মতো !
অনেক খুঁজেছি নিজের লাশ
প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্তে
মহাস্থান গড় হতে মহেঞ্জোদারো হয়ে পেট্রার ধ্বংসস্তূপে,
তারপর পদ্মা,মেঘনা পেরিয়ে সুয়েজখাল হয়ে আমাজন অববাহিকা পর্যন্ত ;
কিন্তু কোথাও নেই আমি ,সব যেনো ধোঁয়াশা ।
সেদিন অবচেতন মনে স্মৃতির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মোর্চারি গুলোতে খোঁজে
দেখলাম ,ওরা বলে এখানে কোন মানুষের লাশ নেই ,যা আছে শুকনো মাছের মতো
প্রাগৈতিহাসিক ফসিল ,
তুমি ধর্মতলায় গিয়ে দেখতে পারো ,
তারপর আর কথা নাবাড়িয়ে নিজের হাত পা বেঁধে মগজের পুসকুনিতেই ডুবে তল হয়ে গেলাম
অতলান্তের অন্বেষণে ।