জুননু রাইনের পাঁচটি এয়া
জুননু রাইনের পাঁচটি এয়া

ক.

একটা সুবহে সাদিকে সেজদারত পৃথিবীর মুখ ভেসে উঠছে-
ধূপের আলোয়, মন্দিরের ঘণ্টায়, পাহাড়ের শব্দে।
শহুরে কুকুরের ডাকে কয়েক ফোঁটা ক্লান্ত ঘুম ঝরছিল-
বট ফলের লাল-নীল গন্ধে- ঝরছিল।

এমন একটি ভোর আমাকে তোমার দিকে নিয়ে যাবে?

প্লাটফর্মে ছিনতাইয়ে স্বর্বস্ব হারানো যুবকের কান্না-
ঔৎসুক জনতার ভিড়ের দিকে তাকানো দু’পাহীন অতিউৎসাহী
জ্বলজ্বলে চোখে যে গল্পটি হাসছে- আমি তাকে চিনি না।

ট্রেন তখনও আসেনি, মানুষের যাওয়া আর যাওয়া...
ঠিকানাহীন এই যাওয়ার ভিড়ে কোনো মানুষ ছিলনা
ছিলনা খালি জায়গা- হাটবার, দাড়াবার, বসবার।

সূর্য উঁকি দিচ্ছে! সেও কী দেখবে?
নাকি তার চোখে আমাকে আবার মানুষের পৃথিবী দেখতে হবে!

ভয়ে আমি বৃক্ষের মতো হাঁটতে থাকি, মাটির মতো দৌড়াতে থাকি
মাটি তোমার পায়ের নিচে, বৃক্ষ তোমারই বাগান
বল, তোমার নাম বিছিয়ে বসে থাকা এই পৃথিবীর কোথায় পালাব!

খ.

এই মাঠে যায়গা নেই
তবু প্রতিটি ডাকে
আকাশের বুক ছুঁয়ে
আমার পাখি ওড়ে

বর্ষণভরা শুকনো গাছের পাতা
তোমার নাম ধরে রাখে
দেখে, দেখায়…
পৃথিবীতে কে কখন
তাকিয়েছিল মানুষের দিকে।

গ.

তোমরা কোথায় কোথায় দেখা কর, আমি জানি না
রেললাইনের একা হাঁটা অবাঞ্ছিত গাছের সবুজ
তোমাদের গল্প রাখে?
পায়ে হাঁটা শ্রমিকের ঘামে ভেজা জোসনার পথে
তোমাদের কোন কথা কি লেগে আছে?
তোমাদের কোনো দেখা কখনও কি মাটিতে পড়ে?
অভিমানে,
পেকে,
ঝড়ে?
বৈশাখেরা বয়সে ভীষণ হলুদ হলে?

তোমরা কোথায় কোথায় দেখা কর, আমি তো জানি।

ঘ.

দিগন্তে, তোমার শূন্যে আঁকা করোটি
নিলো না আমাকে-
আমারে নেবে তুমি মাটি?

চোখে পাথরঝরা ভাঙা ভাঙা দিন
এখানে এসে ফোটে না কারও অশ্রু
প্রজাপতি ডানায় দূর-চেরা নীল।

ঙ.

তুমি জাননা ইছামতি
যখন মানুষের পৃথিবীতে
এক হাঁটু সন্ধ্যা নামে
যখন সমুদ্র খালি পায়ে
হেঁটে হেঁটে বুকে আসে
বাসা বাঁধে- চোখে, দৃষ্টিতে

তখন, আমরা এক হয়ে
আমাদের অন্ধকারে-
আমাদের বারবার হারাই।

আমরা যে পাহাড়ের ফুল ফোটাতাম
যে পাখির গলায় গান তুলতাম
তারা এখনও ভোলেনি
ভোলেনি জীবনের গান।

ঢেউ তো অনেক এসেছে-
মানুষের বাঁধ ভেঙে গেছে
জোয়ারে ভেসে গেছে সেইসব কথা।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান