ডালিয়া পারভীন 'র ১১টি কবিতা
কবি : ডালিয়া পারভীন
নিষ্পেষিত নিঃশ্বাস
আকাশসম সভ্যতার দেয়ালে অসভ্য উন্মাদ উইপোকার বাসাভরা উগরানো মৃত্তিকার অন্তরে,
মেরুদণ্ডহীন স্বাধীনতার লেবাসে অন্তঃসারশূন্য,
মেরুকরণে অস্থিতিশীল অস্থিরতায় চিনে জোকের একচখোমি বর্বরোচিত বিধ্বংসী রক্ত শোষক।
ঘূর্ণাবর্তে ঘূর্নায়মান রক্তখেকো কুটিল বাতির অপ্রকৃষ্টের অসঙ্গল ধূম্রকেশা প্রয়োগ....।
বারুদের ধোঁয়াশে আবর্তনে অঙ্কুরোদগম স্বপ্ন নাওয়ের
বিদ্ধস্ত নাগরিক জটলার জন্মকোটরে
অসহায়ত্বের অগ্নিকোলাহলে বিষমিশ্রিত বিষম ধ্বংসাত্মক উস্কানি ভরা নির্মমতার যাতাকলে
বিবেকের হুশজ্ঞান সমূল সমুহে উতপাটন।
চারদিকে শুধু কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসৃত নিষ্পেষিত নিঃশ্বাসের শ্বাসরুদ্ধ নিঃসরণ....।
অস্তিত্বের দোদুল্যতা
অস্তিত্বের উঠোনে হেঁটে বেড়ায় দীর্ঘশ্বাসের মরা শালিক
বর্ণের উনুনে শীতল মাকড়সা।
কথার স্তম্ভ নিস্তব্ধতার বালুচরে আটকা পড়ে স্তম্ভিত আকাশের কাপড় খোলা উলঙ্গ গাত্রের নীরব যন্ত্রণা।
শকুনির মার দারুণ চেতন,দরজা খুলেই হুংকার ডাকে
অমানিশার আঁচল পেতে।
ভয়ের কোন্দলে অভয়ের সবুজ পত্র কালের কালিমায় কালোর প্রচ্ছদে যায় আটকে।
কাচের দেয়ালে ভঙ্গুর ঠিকানায় নিঃশব্দে হিংসার তাপে
কুচিকুচি ভাংগে চটের মত বিছানো কাথা।
কান্নার ঘরে বসত গাড়ে নিয়তির যন্ত্রণায় আটকে পড়া
সময়ের কালো মাত্রা।
তিক্তস্বাদ
বিভীষিকাময় মাংসপোড়া
এক দুর্গন্ধের ধুপছায়ায়
জীবনের হাতলবিহীন
চিন্তার অবিশ্রান্ত ঝুলন্ত চারপায়ী।
পেরেশানি বাস্তুহারা
উদবাস্তু উলুখাগড়ায়
তলার তল্লাটে খাঁখা খুলে খুলে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিঃশ্বাসের নগ্নজমি।
অপকর্মের অনিষ্ঠ পরগাছা
অসঙ্গল ধামাধরায়
বর্জিতাংশের নামফলক ভরা
তীক্তস্বাদের নির্লজ্জ ত্রপা স্তুতি।
স্থবির সময়
স্থবির মলাটে আটকানো সুখের পাপড়ি
অস্থির জানালা খুলে
লেজকাটা বাঁধন ছিড়ে উবে গেছে
তার দূর্বার পাখা।
সময়ের অলিগলি বেতাল আলগা
যেন শিরাতে শিরাতে
জমে থাকা সহিংস থাবার হিংস্রতার চর্বি
চারদিক শুধু তান্ডবের গর্জন।
মরার যন্ত্রণায় বাঁচার তদবির
বেতাল কাল বড্ড বেরসিক
আকাল পত্রের জাল ফেলে
মৃত্যুর হাড়ে জল কাপানো দুরূহ দিনাতিপাত।
নেশাগ্রস্থ ফেসবুক
ফেসবুকের এলকোহল কর্পূরের কর্পোরেট সিগন্যালে নেশায় বুদবুদ টালমাটাল ম্যাসেঞ্জারি শাবক।
খোঁড়া অজুহাতের শ্লেষাত্মক অম্লীয় বাক্যের বিস্ফোরণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টারত উনপাজুরে উকুন গুলো।
বন্ধুত্বের খালি দাগে নিখুঁত ভঙ্গীমায় আবির্ভূত হয়ে, সময় নাই,অসময় নাই, হাভাতে খাদক হয়ে বার্তাবাহী বক্সের শূন্যপেট,
পুরো গর্ভবতী কলসিতে ভরিয়ে তোলা,
তাদের নিত্য নৈমিত্তিক মৌলিক কর্মের দোসর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিরিক্ত আতেলের ঝনঝনানিতে আজ ফেসবুকের ধামাধরা বেহেল্লাপনা ভালোলাগার ফোড়ন সীমা পেরিয়ে অসহ্যের সীমানা কোটরে,
সত্যি ফেসবুক আজ ঝাঁঝালো যাযাবর নগ্ন অশ্লীলতার
অসহ্য মাত্রার রিখটার স্কেল।
বৈরী বাতাস
ভ্রুকুটির কালোজামা পরে পরাস্ত তেতুল মাখনায় জর্জরিত হেলে যাওয়া সূর্যিক্ষণ।
দিনের আলোর মতো ফকফকা শত্রুঘ্ন দৃষ্টিসীমা।
অন্তঃশত্রুর আত্মদ্রোহীর নির্মমতার নজিরে বেহাল সব হৃদ্য হালের নরক বার্তার আপন আলয়।
উপচে পড়া ছাপানো গরলের ফোয়ারায় ভরপুর চারধার।
বৈরী বাতাস কাঁদুনে গ্যাস মিলে অসহ্য আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজন কেমনে সম্ভব?
টিকিয়ে রাখা, টিকে থাকা বড্ড বেগতিক বেসম্ভব ।
শুভ্র বার্তা
নির্লজ্জের কলাপাতায় তেল চুবিয়ে
গা মালিশের বেহায়াপনা
বোবা অন্তরকূলে নির্বিকার আঘাত হানে।
চক্ষুগোলক চড়কসম অসহায় বার্তা
কালীহীন কলম ভরে
আঁচড় দেয় সাদা খাতা জুড়ে।
সবুজ মাখা বিছানো চাদরে
নির্মমতার কয়েদ খানায়
জ্বলন্ত যন্ত্রণা অভিশাপের তীর ছুঁড়ে।
সময়ের মাটি ফুড়ে বার্তার শুভ্র স্মারক করবে কী জয় আড়ালের কালো আস্তিন.....?
প্রাপ্যতা
তোমার সংক্রামক ভালোবাসার বৃত্তে বন্দী হৃদয়ের শ্বাসপ্রশ্বাসের পূর্ণতার ঝুড়ি।
উঠানামার হার্টবিটে ছোঁয়াচে অনুভূতি সেটাও তোমার দান যা আমার প্রাপ্তির যুগল জুড়ি।
প্রাপ্যতার অপ্রাপ্তির ঝুলি ভর্তির সম্মুখ শূন্যতার অসন্নিহিত আসন্নকালে চিন্তিত অন্তিম পুরী।
ক্ষয়ে যাওয়া অক্ষয় বর্ণের অবার্চীন শত মজবুত গিট্টু দিয়ে রেখো মোজাইক অক্ষরের নিরেট কলি।
নির্ভরতার কোল জুড়ে ভঙ্গুর রঙধনু ভেঙে ভেঙে মিলে যাক এক রঙা রক্তস্রোতের মিলন হলি।
মিলের মিলে সমান মিলে যাক একাত্মতার অবিমিশ্র
অসন্দিগ্ধ অমোঘ নির্বিকল্পের বিশ্বাসী পলি।
সীমাবদ্ধতা
বয়সের জানালা ধরে
অস্তমিত সূর্যের কার্নিশে
সুড়সুড় করে স্তম্ভিত জীবনের ধারাপাত।
গোল্লছুটের সেই সাপলুডু যেন
চোখের কালো পর্দার অন্তরালে
গতিময় জীবনের ছন্দহীন পতন।
কালের জৌলুশ খুলে অকালের চন্দ্রিমাতে
অচেনা শহরের নির্মোহ ডাক
ফেরাবার সাধ্যি কার?
ধরাবাঁধার ধারাবাহিকতায়
নির্দিষ্ট নির্দেশিকায় অচল নির্বিকার
গদ বাঁধা জীবনের চলন্ত পরিক্রমায়।
অপেক্ষা
মাটির বুকচিরে যে প্রেমজ আগাছা গিজগিজ করে আকাশ ছুঁয়ে গেলো জন্মসূত্রে সে তোমারই হৃদয় গর্ভের ঔরসজাত।
বেজন্মা বলেই যতই ছু্ঁড়ে ফেলো তবু তোমারই রক্ত অববাহিকায় সে বয়ে চলবে কেয়ামতের শেষ সূর্য অবধি।
অপেক্ষার প্রহরে মুখোমুখি দাঁড়ানোর পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কিছু সময়ের অলস ক্রান্তি কাটিয়ে নাও মেঘের পাখনায়।
ভেবোনা নীলে মিশে শিরেসংক্রান্তি হবে তোমার,
তুমি আটক হবে মেঘলা বিজনের বিদ্যুৎ আটকানো মহাপ্রলয়ে।
মুখোমুখি মুখের নয়ন উঁচানো এই ঝামটাখোলা সেদিন
বর্গ আকৃতি হিসেবের চিত্র মাঝে ছটফটিয়ে ফুটো থালায় হুঙ্কার দিবে।
শুধু সময়ের অপেক্ষা.....।
অকৃতজ্ঞ চেতনা
পরিচিতের অবয়বে অপরিচিত নেকাবে কতক্ষণ চালাবে নির্লিপ্ত অন্তর জ্বালিয়ে।
রাতের বেহুঁশ তারাগুলো একবারও কী বিধির জানালায় অন্তরাত্মার প্রশ্নের জোয়ারে ভাসায় না।
স্বপ্নের কুঠারাঘাত মনের পর্দা ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়না
বেঈমানীর ভাঁজ কী এতটাই পুরু!
মানুষ এতটা নির্লজ্জ চশমখোর কেমনে হয়।
উপকারের সমগ্র উপকারী মিঠা নিজে থলিতে পুরে গিঁট দেয়া থলি ধরে ঊর্ধ্বমুখী দৌড়,
ভদ্রতার চুলমাত্র লেবাস এদের চোখে মুখে নেই!
অথচ নীতিবাক্যের নীতিমালা প্রণয়নের একদম নীতিবাদীর উপরে কাতারে।
অকৃতজ্ঞের
কদর্য চুনকাম মুখের প্রতি লোমকূপের অন্দরের এমন হীনমন্যতা, জঘন্য,
নির্লজ্জতার আদর্শহীন ভাবনাগুলো বড্ড ভাবায় একদম এলোমেলোভাবে।
এমন কৃতঘ্ন শ্লেষাত্মক শ্লাঘনীয়তার শেষ কোথায়?