ড. হুমায়ূন আহমেদ পাঠক তৈরি করেছেন, এটি কেন মিথ্যা - ডা. অপূর্ব চৌধুরী
হুমায়ূন
আহমেদ বইয়ের পাঠক সৃষ্টি করেছে, এটি বই বিক্রেতাদের একটি হাইপ, একটি
মিথ্যা প্রচার । হুমায়ূন আহমেদ বইয়ের কোন পাঠক সৃষ্টি করেনি, হুমায়ূন
আহমেদ কেবল তার কিছু পটেটো চিপস মার্কা বইয়ের ক্রেতা সৃষ্টি করেছে ।
হুমায়ূন আহমেদের এই বিশাল সংখ্যক ক্রেতারা কেবল হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েন
।
বইয়ের ক্রেতা এবং বইয়ের পাঠক, দুইটা ভিন্ন জিনিস। যারা শুধুমাত্র বইয়ের ক্রেতা, তারা এ কথাটা বুঝবেন না বলে কথাটির সাথে দ্বিমত করবেন; এটাই স্বাভাবিক । আর যারা পাঠক, তারা বুঝবেন কথাটির মানে ।
১৯৮৪ সালে বোম্বের পটেটো চিপস বাংলাদেশের প্রথম প্যাকেটজাত চিপস ছিল, তখনো পপুলার, এখনো পপুলার; ভালো খাবার হিসাবে নয়, মজাদার হিসাবে রুচিময় । হুমায়ূন আহমেদ গল্প উপন্যাসের জগতে এরকম একটি পটেটো চিপস স্বাদের মজাদার কুরকুরে ভাজা ।
বইয়ের সত্যিকার পাঠক সব সময় কম, এখনো কম, সব দেশেই কম । ডেন ব্রাউন কিংবা জেমস পেটারসেনের বই ৩০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়, ইএল জেমসের ইরোটিক ট্রিওলজি ফিফটি শেডস অফ গ্রে ১০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়; চমস্কি কিংবা সাঈদের বই হাজার কয়েক বিক্রি হতেই কয়েক বছর লাগে, কিন্তু গাধী ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম এর অটোবায়োগ্রাফি কিংবা মিশেল ওবামার বিকামিং যতগুলো বিক্রি হয়, নেলসন ম্যান্ডেলার লং ওয়াক টু ফ্রিডম কিংবা মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী এতগুলো বিক্রি হয় না । জে কে রোলিং এর হারি পটার একখণ্ডই যতগুলো বিক্রি হয়, নোবেল লরিয়েট ভি এস নাইপাল, ডোরিস লেসিং এবং হ্যারল্ড পিন্টারের সারা জীবনের সব বই এক সাথ করলেও শিশুতোষ বই হ্যারি পটারের এক খণ্ডের সমান হবে না । একজনের বই বিক্রি হয়, অন্য তিনজন প্রজন্মের পাঠক তৈরি করেন ।
বইয়ের সত্যিকারের পাঠকরা লেখা দেখে, লেখক দেখে না । ভালো লেখকদের লেখায় পাঠকের রুচি বৈচিত্র্যতা বাড়ে । তার কৌতুহল বাড়ে, আকাঙ্ক্ষা বাড়ে, অন্য বই পড়বার এবং চেখে দেখবার সাধ জাগে । মনে প্রশ্ন তৈরি করে, সেই সমাধানের খোঁজেই অন্য লেখক এবং বই এ হাত বাড়ায় ।
ভালো বই পাঠক গড়ে, বাজে বই পকেট কাটে । হুমায়ুন তার পকেট গড়েছেন পাঠকের পকেট কেটে । বোম্বে পটেটো চিপস কেউ কিনে না স্বাস্থ্য উন্নয়ন করতে, ওটা কিনে খানিক ঝালমুড়ির স্বাদ পেতে । হুমায়ূন ক্রেতারাও এমন । হুমায়ুনের বই পাঠক রুচি গড়েন নি । হুমায়ুন কেবল বইয়ের কিছু ক্রেতা সৃষ্টি করেছে ।
১৯৭০ সালে আমাদের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটির বেশি । তখন বছরে আমাদের গড়ে বই বের হতো তিনশটি । আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার হার ১৯৭১ সালে ছিল ১৮% মাত্র । ১৯৯২ সালে আমাদের শিক্ষিতের হার গিয়ে দাঁড়ায় ২৫%, জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে চোদ্দো কোটি । তখন বছরে বই বের হতো হাজার দুয়েক । ২০২০ সালে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার হার গিয়ে দাঁড়ায় ৭৫% । বছরে আমাদের বই বের হয় ১০ হাজার । মানুষ আমাদের আঠারো কোটি । মানুষ এবং শিক্ষিতের হার বাড়ার সাথে কী আমাদের পাঠক বেড়েছে ?
হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই ৫০ হাজার বিক্রি হতেই পারে, আবার হুমায়ূন আজাদের কোন কোন বইয়ের ৫০০ কপি বিক্রি হতে নয় বছর লাগে । আহমেদ শরীফ, আহমেদ ছফা, হুমায়ুন আহমেদের নানা শ্বশুর ড. ইব্রাহিম খাঁ, তিনজনের সবগুলো বইকে একসাথে করলেও হুমায়ুনের এক কপি বই বিক্রির সমান হবে না । কিন্তু যে তিন জনের নাম বললাম, এই তিনজন তিন প্রজন্মে পাঠক তৈরি করেছেন, আর হুমায়ূন কেবল কিছু ক্রেতা তৈরি করেছেন ।
যে এই সত্যগুলো বুঝতে পারে না, সে এখনো ক্রেতা, বইয়ের পাঠক হতে পারে নি
বইয়ের ক্রেতা এবং বইয়ের পাঠক, দুইটা ভিন্ন জিনিস। যারা শুধুমাত্র বইয়ের ক্রেতা, তারা এ কথাটা বুঝবেন না বলে কথাটির সাথে দ্বিমত করবেন; এটাই স্বাভাবিক । আর যারা পাঠক, তারা বুঝবেন কথাটির মানে ।
১৯৮৪ সালে বোম্বের পটেটো চিপস বাংলাদেশের প্রথম প্যাকেটজাত চিপস ছিল, তখনো পপুলার, এখনো পপুলার; ভালো খাবার হিসাবে নয়, মজাদার হিসাবে রুচিময় । হুমায়ূন আহমেদ গল্প উপন্যাসের জগতে এরকম একটি পটেটো চিপস স্বাদের মজাদার কুরকুরে ভাজা ।
বইয়ের সত্যিকার পাঠক সব সময় কম, এখনো কম, সব দেশেই কম । ডেন ব্রাউন কিংবা জেমস পেটারসেনের বই ৩০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়, ইএল জেমসের ইরোটিক ট্রিওলজি ফিফটি শেডস অফ গ্রে ১০০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়; চমস্কি কিংবা সাঈদের বই হাজার কয়েক বিক্রি হতেই কয়েক বছর লাগে, কিন্তু গাধী ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম এর অটোবায়োগ্রাফি কিংবা মিশেল ওবামার বিকামিং যতগুলো বিক্রি হয়, নেলসন ম্যান্ডেলার লং ওয়াক টু ফ্রিডম কিংবা মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী এতগুলো বিক্রি হয় না । জে কে রোলিং এর হারি পটার একখণ্ডই যতগুলো বিক্রি হয়, নোবেল লরিয়েট ভি এস নাইপাল, ডোরিস লেসিং এবং হ্যারল্ড পিন্টারের সারা জীবনের সব বই এক সাথ করলেও শিশুতোষ বই হ্যারি পটারের এক খণ্ডের সমান হবে না । একজনের বই বিক্রি হয়, অন্য তিনজন প্রজন্মের পাঠক তৈরি করেন ।
বইয়ের সত্যিকারের পাঠকরা লেখা দেখে, লেখক দেখে না । ভালো লেখকদের লেখায় পাঠকের রুচি বৈচিত্র্যতা বাড়ে । তার কৌতুহল বাড়ে, আকাঙ্ক্ষা বাড়ে, অন্য বই পড়বার এবং চেখে দেখবার সাধ জাগে । মনে প্রশ্ন তৈরি করে, সেই সমাধানের খোঁজেই অন্য লেখক এবং বই এ হাত বাড়ায় ।
ভালো বই পাঠক গড়ে, বাজে বই পকেট কাটে । হুমায়ুন তার পকেট গড়েছেন পাঠকের পকেট কেটে । বোম্বে পটেটো চিপস কেউ কিনে না স্বাস্থ্য উন্নয়ন করতে, ওটা কিনে খানিক ঝালমুড়ির স্বাদ পেতে । হুমায়ূন ক্রেতারাও এমন । হুমায়ুনের বই পাঠক রুচি গড়েন নি । হুমায়ুন কেবল বইয়ের কিছু ক্রেতা সৃষ্টি করেছে ।
১৯৭০ সালে আমাদের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটির বেশি । তখন বছরে আমাদের গড়ে বই বের হতো তিনশটি । আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার হার ১৯৭১ সালে ছিল ১৮% মাত্র । ১৯৯২ সালে আমাদের শিক্ষিতের হার গিয়ে দাঁড়ায় ২৫%, জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে চোদ্দো কোটি । তখন বছরে বই বের হতো হাজার দুয়েক । ২০২০ সালে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার হার গিয়ে দাঁড়ায় ৭৫% । বছরে আমাদের বই বের হয় ১০ হাজার । মানুষ আমাদের আঠারো কোটি । মানুষ এবং শিক্ষিতের হার বাড়ার সাথে কী আমাদের পাঠক বেড়েছে ?
হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই ৫০ হাজার বিক্রি হতেই পারে, আবার হুমায়ূন আজাদের কোন কোন বইয়ের ৫০০ কপি বিক্রি হতে নয় বছর লাগে । আহমেদ শরীফ, আহমেদ ছফা, হুমায়ুন আহমেদের নানা শ্বশুর ড. ইব্রাহিম খাঁ, তিনজনের সবগুলো বইকে একসাথে করলেও হুমায়ুনের এক কপি বই বিক্রির সমান হবে না । কিন্তু যে তিন জনের নাম বললাম, এই তিনজন তিন প্রজন্মে পাঠক তৈরি করেছেন, আর হুমায়ূন কেবল কিছু ক্রেতা তৈরি করেছেন ।
যে এই সত্যগুলো বুঝতে পারে না, সে এখনো ক্রেতা, বইয়ের পাঠক হতে পারে নি