কবি : নান্নু রেহমান
উদ্বাস্তু
প্রীতম চাকমা,তুমি বার বার বলো-
দাদা একবার হলেও রাঙামাটি ঘুরে যাও
কাপ্তাই লেক,ঝুলন্ত সেতু, ডুবন্ত রাজার প্রাসাদ দেখে
অভিভূত হবে ভ্রমন পিয়াসু চোখ;শুভলং ঝর্ণা তে সুযোগ হলে শরীরটা ভিজে নিও-
উত্তরে বলেছি-জানিস সবাই খুব সাজেকের কথা বলে রে-জায়গাটা নাকি মনোমুগ্ধকর!
সত্যি সত্যি তোদের শহরে চলে এলাম প্রীতম
নৌকা ভ্রমনে আমার উচ্ছাসে তুমি কেমন যেন চুপচাপ
জলের ভিতরে হয়তো খুঁজছিলে বাস্তু ভিটার দাগ
তখন আমার চোখে ভাসছে- উদ্বাস্তু পাহাড়ীরা ছুটে পালাচ্ছে অজানা পথে।
অচিন পাখি
পথভুলে চলে এলে এই জনাকীর্ণ শহরে হে অচিন পাখি
গ্রীবা ঈষৎ নিচু করে এক নজর দেখে নিলে
কোলাহল মুখর শহরের অলিগলি
চঞ্চুতে আটকানো গোলাপ কলিতে তখনও সুঘ্রাণ
তোমার বিচরণের পথে পথে ফাঁদ পেতে উসখুশ করছে মৌসুমী পিশাচ শিকারী
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে খুঁজছো তোমার নিরাপদ আশ্রয়-ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ভর করছে অজানা অাতঙ্ক ভয়
তবুও রেটিনা দিয়ে স্ক্যান করছো তোমার নিরাপদ পদতল-শহরজুড়ে চলছে এখন শিকার কার্নিভাল
পথে ঘাটে চলছে পশ্চাৎমুখি উম্মাতাল অবক্ষয়
যা তোমাকে এক নিমিষে আকাশ থেকে নামিয়ে মাটিতে
মিশিয়ে দিবে-কিন্তু হে অচিন পাখি আমি তোমাকে হারাতে চাই না!যতই অচেনা থাকো বার বার!!
উন্নয়ন নামা
আমরা ক্ষুধার্ত
ক্ষুধায় পেটে আগুন জ্বলে
খাবারের পরিবর্তে শরীর ঝলসানো
উন্নয়ন দেখি-রাস্তায় বিএমডব্লিউ,মার্সিডিজ বেন্জের ভিতরে বসা অহংকারী সুন্দরী রমণীর ঝলসানো রূপে
চোখে সবকিছু উল্টো দেখি
নতুন নতুন আলিশান উদ্যত বিল্ডিং ও মুখ ভেংচিয়ে
আমার দারিদ্রতা কে স্মরণ করে দেয়
খাবার মেনু থেকে আজকে ওটা বাদ কালকে ওটা বাদ
বরং উন্নয়নের সুফলে ডাক্তারের উপদেশ কে আমলে নিই-বেশি বেশি খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
টাকা ঋণ করে হলেও উন্নয়নের গাড়িতে উঠে মহাকাশে
ভ্রমণ করি;বড়লোকদের মত গাম্ভীর্য নিয়ে কিছু টোটকা সাধারণ জ্ঞান রপ্ত করি
স্যাটেলাইট,আকাশ ট্রেন,ট্রানেল,সাবমেরিন এবং পরমাণু বিদ্যুতে আমরা
কেমনভাবে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছি-উন্নয়ন হাওয়ায় ভাসতে হলে কিছুটা ঋণের বোঝা
ও কাঁধে নিতে হয়।
উন্নয়ন তো আস্ত একটা মিথ
সত্য মিথ্যার প্রশ্ন এখানে অবান্তর
বরং চেতনাবাজদের জুজুর ভয়ে তটস্থ থাকি সারাক্ষণ
সম্ভাব্যতা
হ্যাঁ ও না দুটোই শতভাগ সম্ভাব্যতা
অনিশ্চয়তার মাঝে নিশ্চয়তার আশা
তবুও সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে
অদৃষ্ট কে দোষী
পারলে বার বার কয়েন টস করে নিশ্চয়তা কে খুঁজি
এই যে দোদুল্যমান্য ফলাফল এজন্য তো তোমার
আমার সিদ্ধান্তহীনতায় দায়ী
পারলে সিদ্ধান্তে হও স্থির,না হলে দৈব চয়নে
সব সময় অনিশ্চিত সম্ভাব্যতায় ঝুঁলে থাকবে
দুজনের দোটানা মন।