নিলয় গোস্বামী এর কবিতাগুচ্ছ
কবি : নিলয় গোস্বামী
মাইনাস থার্টি ডিগ্রি ও মারণাস্ত্র
আমি এক শান্তির বিশ্ব চাই -
যেখানে মারণাস্ত্ররা গোলাপ হয়ে ভালোবাসা ছড়াবে।
আমি এক নিরাপদ পৃথিবী নামক বাড়ি চাই -যেখানে সবাই একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য হয়ে বেঁচে থাকবে।
আমি মানুষের সু-অনুভূতি চাই,
যেখানে যুদ্ধ নয় আলিঙ্গন হবে প্রতিপক্ষের ব্রহ্মাস্ত্র।
আমি মানুষকে মানুষ হয়ে বাঁচতে দেখতে চাই; যেখানে রুধির হবেনা ঝরানোর খোয়াইস...
বারুদের কারখানায়
সবুজ ফসল ফলবে শস্যকণার দায়...
নিউক্লিয়ার বোমা,হাইড্রোজেন বোমারা শিশুর মতো কোমল হবে,
লজ্জাবতী গাছের মতো নাজুক আঙুলে কবিতা লেখে যাবে...
শান্তির কবিতা।
ভালোবাসার কবিতা।
যুদ্ধ বিমান গুলো হয়ে যাবে
সাদা পায়রা ;
শান্তির স্নিগ্ধ দূত।
সোলজাররা রণকৌশল চর্চা না করে
ফুলের বাগান তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে।
যুদ্ধ ময়দান হবে বাহারি ফুলের কলরবে মুখরিত।
মানুষ ফুলেল মহল বানাবে-
তাঁবুর বদলে।
থাকবেনা কোনো কাঁটাতার
আর মানুষকে আটকে রাখার কূটকৌশল -হাতিয়ার।
কমান্ডোরা গুহাকে ক্যানভাস করে ছবি আঁকবে -
মাইনাস থার্টি ডিগ্রি
বরফ জলে মাথামুড়ে মানুষের হৃদয় খুঁজবে।
আমি তো এমন বিশ্ব চাই,
যেখানে ভালোবাসা ছাড়া মানুষের মুখে -বুকে আর কিছু নাই।
আমি মানুষের জন্য মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই....
বিনিময়
আমি নিয়মের করেছি যে ক্ষয়
দৃশ্যের চোখে দিয়েছি রঙ
ভুলের পেলব জানে
প্রেম অনন্ত, খুঁজে বিস্ময়...
তবু কেনো আজ প্রাণে
কিছু হারানোর এত ভয় !
আলোর ঘুমেতে জাগে সুর
হিজলের চোখে গান
মুহূর্তের ছিঁড়ে ফেলা সুখ
এ বুঝি প্রেমের অন্য নাম !
কেউ কি কখনো জানে
পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া
আর
আঙুল ছোঁয়ার মানে !
হৃদয় দেয়া এতটা
সহজ তো নয়
হোক সেটা দূর- পায়ে পায়ে চলা
অথবা ক্ষণিক পরিচয়।
'লঘুকায় ভুল
পরিধির সমগ্রটা ছুঁয়ে যেতে শুধু
আয়না বাজি খেলা
ঘাড়ের চন্দ্রবিন্দু খুলেছি
ঘুঙুর করেছি
ছত্রভঙ্গের দু-পায়
এতটা লঘু হয়েছি
গৌণ হাওয়া ভূগোল চেনায় !
খোঁপার সিন্দুকে রেখেছি কী
রহস্যের অস্থায়ী আঙুল !
ভালোবাসা লিখে রাখে
পরিচিত ঘ্রাণের সে ভুল।
বিস্ময়
বসন্ত,মৃত্তিকা আর রোদ- এরা
কথা বলতে তো জানেনা ;
কিন্তু এদের নিয়ে তো
মুগ্ধ কবিতাই হয় !
আমিও তোমার কাছে গেলে বোবা
জানালার মতো চুপ !
তোমার চোখের আফিমে যে ডুবে থাকি...
ধমনীর লালচে কালিতে
লিখে রাখি মায়াবী কবিতা।
ফিরে এসে দেখি, আমার কবিতারা যে
গোল্লাছুট খেলে যায় -
তোমার মেরুন ঠোঁটে।
নির্বাক প্রসব করে চলে
অনিবার্য কিছু বিস্ময় !
সমীকরণ
সময় যা-ই বলুক
অতীতে ছিলে তুমি মুগ্ধ একটা রাত।
আজ হয়েছ টেরাকোটার মতো দগ্ধ একটা দিন।
কারো জীবনের করুণ অংশীদার।
গ্রহণের পর প্রকাশ হবে তৃপ্তির মহাশূন্যতায়....
ব্যর্থ স্মৃতির হাওয়ায় হেঁটে,মন খারাপের সব টুকু ঘিরে
আমাদের সন্ধ্যেরা আজও নামে।
কিন্তু তখনকার মতো আর হাসেনা।
ভরিয়ে দেয়না পাতাদের কানাকানিতে আমাদের স্পর্শ।
ফেলে আসা সময়ের মতো এই সময় আর তুমিময় হয়না।
অথচ তমাল বনে রোজ সন্ধ্যা প্রদীপ দিয়ে যাই
স্মৃতির আগুনমাখা চিহ্নে;
কারণ এখানেই আমাদের আক্ষেপেরা প্রতিদিন একটা করে ছোটগল্প লিখত।
এখন উইপোকার প্রাচীন জনপদে কিছু ঢিবির পরিবর্তন হয়েছে,
কিছু শিকড় নিজেদের প্রজন্ম বিস্তার করেছে;
আর নিয়ত পাতাদের ঝরে যাওয়া দেখে গেছে বোবা তমাল বৃক্ষ...
এখন ভুলে থাকি শুধু নিজেকে নিজের মতন করে।
এখানেই দাঁড়াই প্রতিদিন, আর স্মৃতির তর্পণ করে চলি অবিরাম- পাখিদের মতো।
জোনাকির যতো গান
তোমাকে ভাবতে গিয়ে ঘুমেরা যে
বাহানা চিনে যায়
জোছনা আড়িপাতা শিখে আমাদের প্রিয় সীমানায়।
শহুরে কুয়াশা বেসামাল হয়ে জোনাকির চিঠি লেখে
কাছে টেনে নেয় মুহূর্তদের বৃষ্টি নামার দেশে।
স্পর্শের আধুলি শিরোনাম ছুঁয়ে অলস হয়ে
হাঁটে
তুমি স্মৃতির বরফ হয়ে জমে থাকো এ বুকের আনাচে-কানাচে ।