নিলয় গোস্বামী এর কবিতাগুচ্ছ
কবি - নিলয় গোস্বামী
দাগ
ধীরেধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে সময়...
হারিয়ে যাচ্ছে মনের ক্যানভাসে রঙের দাপট।
সজীব হৃদয়ে শুধু অশনি হাওয়ার খুঁচাই বয়ে যায় অজানায়।
চিন্তার রাজ্যটা ঘোলাটে আকাশের মতো গিলে যাচ্ছে আলো...
জলের শামিয়ানা ঢেকেছে গতিশীল প্রত্যয়ের শরীর।
বয়ে যাওয়া ঝড় জানেনা ঝরাপাতার খবর।
রোদের চিৎকার আজ গোধূলি ছুঁয়ে দেখেতে চায় না।
স্তব্ধ ছায়াপথ জানেনা খসে যাওয়া তারাদের বিলাপ।
সব কিছু থেকেও শূন্য মানুষটা জানেনা কেনো অনাবৃত ভিখারি সে,কী জমিয়েছিল বুকের বাঁপাশের সিন্দুকে।
আড়ালে দিব্যি বেঁচে থাকা বোকাটে সে মুখ, ক্ষতি পুষিয়ে নেয় ভ্রান্ত চেতনার আদলে।
ক্ষয়ে যাওয়া স্পৃহা আর হারিয়ে ফেলা সময় ফিরে আসে না পথিকের মতো প্রিয় গন্তব্যে।
বৃত্তের অাবর্তন জানে সোনালি দিনেরা ফাঁকি দিয়ে যায় তাকে,
আর ফিরতে পারেনা কেন্দ্রের বুকে।
শুধু ছায়ার কান্নার মতো দাগ রেখে যায় আহত হৃদয়ে।
অনুপান
অনুপান সুরা ভেবে চাঁদ দেখা
কিছুটা ভুলে জানে ছেঁড়া পরিখা
যেন সাগর কাঁদছে আজ হ্রেষা
ভুল পায়ে খেলা শিখে নাগর ছাঁ।
রাত মাখে যে গায়ে ছিলা শেঁকা ঘা
সুখ জ্বালিয়ে রাখে যে দ্বীপ শিখা
অনুরাগ বৃথা করে দ্বার খুঁড়া
তুমি জাল বুনো শুধু ধ্যান একা।
মেঘলা সুরে মাঘ ছুঁয়া জলসা
দেখি আজ নিরা এসে রাখে নেশা
স্থির রাতে কে থাকে মেঠো পথে যা
অরুণা শিখেনা কেনো চিঠি লেখা!
গল্পের ধারাপাত
প্রতিদিন একেক জনের কাছে আশ্চর্য রুপে ধরা দেয় একেকটি সকাল।
কখনো
আয়েশী ঘুমের শেষে তৃপ্তির দু'চোখ মেলে ভোর দেখে মায়াবী সকাল;আর কখনো
নির্ঘুম রাতের বালিশে লেগে থাকে বিমর্ষ সকালের বিমূর্ত চক্রবাক।
চুপকথার বালিয়াড়ি আলাপ জমিয়ে রাখে নিঃসঙ্গ মিষ্টি হাওয়াদের গাঁয়।
জীর্ণ প্রতিশ্রুতি ভেঙে খানখান হয়ে যায়
নীরব অজুহাতের ঠোঁট দিয়ে।
অপ্রিয় শব্দ ছুটে আসে প্রিয়জনের উপহার হয়ে।
নম্র রোদের ছুপছুপ কান্না লেগে থাকে কিছু সকালের বুকভরে।
এভাবেই কিছু মানুষ আড়ালে হয়ে যায় নির্বাক সমাধির কাঁচঘর;
আর কিছু না জেনেই দিব্যি বেঁচে থাকে আয়েশী জীবনের আয়োজনে.....
নদীরা জানেনা নিরীহ মাছেরাও কাঁদতে জানে,
নিজের সম্ভারকে নিখুঁত ভাবে জেনে রাখেনা।
অনেক হৃদয় খবরের অতলে চাপা পড়ে যায়- নিভৃতচারী হয়ে অচিন দেশের অতিথি হয়ে রয়।
বিজলির ধমকের মতো সংঘটিত বর্ণরা আঘাত করে যায়,চুপ করে রাখে হৃদয়ের চারপাশ।
নীলসাগর বুকে ধরে লিখে যাই স্মৃতির আগুনে মোড়ান ধারাপাত।
পল
মনের খোলসে মিশে আছে ক্রোমিয়াম
কিছু না ভেবেই গলাধঃকরণ করি
আমাদের আছে শপথ ভাঙার রীতি
নিয়ত করি যে চেতনার বলিদান।
ফেরারি রাতের শরীর চিনেছি আমি
ধূলিকণা দিয়ে হৃদয় সাঁকোটা গড়ি
মগজের কথা নিলামে করেছি চুরি
ভুলে আঁকা পথ মুসাফির হয়ে শিখি।
দূরের পাহাড়ে শাঁখের অশ্রু ঝরে
সময় জিতেছে ভ্রান্তি নিলাম করে
আর্তনাদের হাসির চিহ্ন মেখে
চিতার বহ্নি ফিকে হয় অবশেষে।
বিনিময়ে থাকে স্বপ্ন বেচার ভুল
ফিরে ফিরে দেখি আমার আমিযে নেই
বিশ্বাস দিয়ে গিরিখাত ভরে যাই
মগ্ন ভ্রমের ইতিহাস রচে পল।
জলের শরীরে বৃষ্টি ছুঁয়েছে আজ
স্নায়ুদল খেলে নিয়ম ভাঙার সুখ
মেঘলা চোখের স্পৃহা ঘিরে রাখে ক্ষণ
গৃধির শাপেতে ভালোবাসা তবু হোক।
বিভ্রম
মনে হচ্ছে একটি গোলাপি সন্ধ্যাই
ইঙ্গিত ছড়িয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে চারপাশের আলো
শূন্য বিকেলটা দু'পায়ে ঘুঙুর দিয়েছে
উল্লাস ছিঁটিয়ে দিয়ে। গোধূলির সমারোহ নেবে
অন্ধকারে জন্ম নেয়া সোহাগী কবিতা।
দুপর ছুঁয়ে যায় অাক্ষেপে।জলের শামিয়ানায়
যতটুকু আগুন বেদির
ঠোঁট বেয়ে কথাবলে, এখানে শোরগোল হয় আমি বেঁচে আছি সম্ভবত পীতজ্বরের মতো।
অপেক্ষার দানারা চোখেই ক্যানভাস গড়েছে।
তোমাকে এতো নিবিড় ভাবে চাইছি যেন হেমন্তের
বুকে জন্মনিচ্ছে ফাগুনের সে তুখোড় ছায়া।
যদি কথা গুলি হেঁটে যায় জমে থাকা মেঘ হয়ে
যদি আবার পাখিরা নীড় না চিনেই ফিরে যায়
অক্ষটীর কোলে, তখন ভাবতেই পারো
বেঁচে ওঠাকে এড়িয়ে কিছু একটা ব্যত্যয় জেগেছে।
স্তম্ভ সব টুকু স্মৃতি ধারণ করেণা ;
সম্ভবত ভালোবাসা চেনা হৃদয়ের চেয়ে
তো একেবারেই নয়।
ক্রমশ স্মৃতি হয়েই উঠবো
মৃদু বাতাসের সাথে, মিশে যাবো খুব...
একটি একগুঁয়ে পাথর চেয়ে চেয়ে দেখে যাবে
বাতাসের বুকে জেগে থাকা, স্মৃতির মহল।