নীহার লিখনের কয়েকটি কবিতা
মোনালিসা
আসল চেহারা অন্য কোথাও রেখে তুমি
আমাকে পৃথিবী দিতে চাও, বুঝতে পারি না
যে কথাগুলো বলো, তা সত্যি অর্থে এক ব্যাঙ-লাফ, ধরতে পারি না
এ্যাতো কিছুর পরেও তুমি আমার আশ্রয়, যার জন্যে জলে নামা যায়, যার জন্যে আরগ্য চায় সে মানুষ, যার বাজার দর একটা ব্ল্যাঙ্ক , এবং তা হচ্ছে নিপাট সাগর, যেখানে ডুবলে কেউ ফেরে না, অনিশ্চিত এক নিশ্চিত, মোহের হস্তিনাপুর
তোমার হাতে, পা’য়ে, তাদের নখে, চুলে, চোখে, সমস্ত শরীরে ও বাতাসে আর ছায়ায় সংকেত ভাসে, শব্দ হয়, তাল কাটে, জুড়ে, মাছ ও মিনার, অতৃপ্তি ও খুন, বেহুলার গান, সাইকেল ও রঙিন ছাতা, পায়রা ও ঝড়, বিকল ম্যাশিন, ঝুলন্ত সেঁতু, শ্বেত পাথরের ফলবাটি ও পাখি, মনুমেন্টগুলো, গুম হয়ে যাওয়া প্রিয় বন্ধুর মুখ, বিষাদ ও বিকার
আর সে সব দৃশ্যও যা কেউ দেখে না, যা লুকিয়ে রেখে তুমি হাসো মোনালিসা
নৈবেদ্য
বাহিত হতে হয়, হলেই বুঝি সাক্ষাতে সে দ্রাক্ষা পাই, হাড়গোড় ঝুরে যাওয়া অর্থের অবশেষে যেন কেউ থামাতে চাইছে, মরমের পরমের অন্তিমে স্ফীতীর জীবন, যার নিযুত ওজন, বাহিত করছে কোনো উটের মতন
যদি থেমে যাই, অনর্থ হবে না, সবুজ পাতার ক্যারাভান অযুত রয়েছে জানি বনে
বাহিত হইছি; এ কোনো ভ্রান্তি না, পথে পড়ে-থাকা শিয়ালের লাশের মতোও যদি দূর্ঘটনার চিহ্নটা হয় রক্তের দাগে,ভাববো তা নৈবেদ্য, বিগ্রহ ধরে নিয়ে যা, শিরাগামী হই মসৃন, তোমার শীতলে, ভূমধ্যভাগে
যদি থেমে যাই, ডাম্পিং জোনের পাতা ও লতার থেকে যে কয়টা রোগাটে ফুল আজও চেয়ে থাকে, তারা মরে যাবে রাগে
মরা সুন্দরবনে
তুমি আমাকে ভালোবাসি বললে
জগতের যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো সেরে যায়
মনে হয় , অনেকদিন না হওয়া চুক্তিগুলোর বরফ গলে যাচ্ছে অচিরেই, এবং দেশে-দেশে গোপন সব মারনাস্ত্রের ভাণ্ডারগুলো চিরতরে মাটির নিচেই চলে যাচ্ছে
মনে হয়, আমি ধরতে পারছি সে বিভবটি, যা না থাকলে মানুষ পড়তে পারে না দু:খের মহিমায় লুকানো সব সত্য ও সুখ
তুমি আমাকে ভালোবাসি বললে আমার আর মিথ্যা কোনো অঙ্ক শেখার জন্যে জীবন পাড়ি দিতে হয় না, এ্যতো কাঠখড় পুড়ানো সময়ে যেতে হয় না নিছক বৃন্দাবনে, ক্রমশ নাই হয়ে যাওয়া চিত্রা হরিণীর খোঁজে মরা সুন্দরবনে
আশাবাদ
আশাবাদ, তোমার ভেতরটা ঝাঁঝরা হয়েছে জেনেও তোমাকে মান্য করি, তুমি একটা কাঠের আলমিরাটাই যেন , দাঁড়িয়ে থাকছো; বস্তুত তেমন কোনো ভরই নিতে পারো না, পলকা বাতাসেও ভেঙ্গে যাবে তোমার শরীর
তারপরও তোমাকে শিব জ্ঞান করি, পুজা দেই, ফুল দেই, দুধ ঢালি মাথায়, আহ্নিক করি প্রতি সকাল সন্ধ্যায়
তোমার ভেতরে কোনো মাটি নেই আর, তিল বা বীজের
তারপরও মানসিকে বটের স্থানে মনে মনে তোমাকে রাখি, সেখানে জড়াজড়ি থাকি, আমি আর পাখি
গোপনে বাহিত শিরা
মৃদঙ্গে সে নদী কাচের পাথার, চিল পোষে চিরকাল ধরে
শহরে মাহূত-মানুষ হাঁটছি, ছাই-রঙা হাতিটার পিঠে
রাতের পা’পথে আলোর মাথায় আত্মা আমার বেয়ে ওঠে
তোমাকে ছাড়িয়ে আরেক আকাশে, তোমার অদূরে কোনো দূরে
মরেছে মহিম ভ্রমের পাখালি, গাছ কভু হইনি কোথাও
বাকল, পাতা বা বীজ ও শেকড় শুধু স্বপ্নে দেখেই বেঁচেছি
নির্বাণ ভেবেছি পাহাড়ী ফুলেরা, নীরব পেলেই করে রাও
নিক্তি বা ফানেল অথবা চোখের কোটোরে বোধি, জলে মেপেছি
তাছাড়া তোমাকে ডাকার নামটি, ইহ কালে বুঝবার নাই
শ্রীকৃষ্ণ অথবা বিধাতা আরও যারা পুজিত হচ্ছে এ ভবে
মৃতের ফেলানো পোষাক আর ঘর শুণ্য থেকেছে কই, কবে ?
নিস্কৃতি চেয়েছি বলেই ভেবেছি, চিরকাল আমিও সে রাই
পাথরে,অরবে,অনলে, টানেলে আমার আপন আগাছাই;
যদি কারোর প্রেমেতে, গোপনে বাহিত শিরা আমার না পাই