কবি
প্রতিদিন একজন কবির কাছে আমি নতজানু হই
হাঁটু গেড়ে বসি।
যে রকম একজন মাতা জায়নামাজে প্রতিদিন
চোখে স্নেহ
বুকে প্রেম
হাতে সেবা এনে
দু’হাত উঠিয়ে বলে, “ইয়া রহমান, আমার খোকার
চোখে-মুখে আলো এনে দাও”।
ঠিক সেরকম আমি একজন জননীর মতো
প্রেমিকার মতো
অমল-ধবল সেবিকার মতো
একজন কবির কাছে নতজানু হই
যে আকণ্ঠ ডুবে আছে প্রকৃতির প্রেমে, তার কাছে
হাঁটু গেড়ে বসি।
তাকে বলি
প্রতিদিন খুব ভোরবেলা তুমি কার কথা বলো কবি
কার কাছে বলো শিল্পের কথা, বলো মনীষার কথা?
যে তোমাকে চালহীন-চুলেহীন বলে ধুয়ো তোলে
শহরের ব্যস্ত মোড়ে মোড়ে
ছন্দে মাতাল শব্দ শ্রমিক কবি
তুমি না জানলেও শহরের সকলেই জেগে গ্যাছে
রমণীর কাছে মানুষের কোন প্রস্তাব নেই
নেই কোন হিসাব-নিকাশ।
এখন প্রতিদিন রমণীর কাছে শুধু
ঘৃণা নিয়ে যাবে। নিয়ে যাবে হিংস্র নখর
ধারালো দাস্তানা!
কবিদের ঈশ্বর নেই জানে; অথচ একজন কবি
কি দারুণ বিশ্বাসে প্রতিদিন রমণীকে নিয়ে যায়
শব্দের কাছে
নিয়ে যায় প্রকৃতির কাছে
অপরূপ নিসর্গের চোখে চোখ রেখে বলে
“ঈশ্বর এই দ্যাখো প্রকৃত সবুজ”।
একজন কবি প্রতিদিন প্রতিটি বেলায়
শব্দকে নিয়ে আসে হাতের মুঠোয়
ম্যাচ বাক্সের মতো নাচায়
আবার ধরে পুরে রাখে বুকের বাস্কেটে।
শব্দকে নিয়ে বাগাডুলি খেলে
শব্দের সাথে গলাগলি ধরে সাগরের কাছে যায়
বলে আসে যাবতীয় দুঃখের হিসাব
তার কাছে প্রতিদিন নতজানু হই
হাঁটু গেড়ে বসি
একজন প্রেমিকার মতো
একজন সেবিকার মতো
একজন জননীর মতো, হাত তুলে বলি
“কবি চারিদিকে শুধু দাহ ও দহন
তুমি রাতদিন বলো অনাহারী মানুষের কথা
বলো যুদ্ধের বদলে চাই সবুজ চাদর
বলো মানুষে-মানুষে ভালোবাসা হয়, মানুষে-পশুতে নয়”
অনাহারী মানুষের প্রতিনিধি তুমি কবি,
আজ আর প্রেমিক হয়োনা। তুমি বিক্ষোভ হবে
হবে জ্বলন্ত মিছিল
কবি তুমি মুঠো-মুঠো শব্দের বীজে রেখে আসো
মানুষের দুঃখের হিসেব
বলে আসো-দুঃখী জনতার বিজয় মিছিল...
শিরীন ভানুকে নিয়ে কবিতা
শিরীন ভানু, শিরীন ভানু চলে গেলে
কেন গেলে? কোথায় গেলে?
বলে গেলে কি আর এমন ক্ষতি হতো
তারচে’ বরং লাভই হতো, জানা হতো
যাচ্ছো কোথায়, আসবে কবে।
এইতো সেদিন দেখা হলো, ব্যস্ত তুমি, ব্যস্ত মোড়ে
: ক্যামন আছো
:ভালো আছি, আপনি কেমন
: আমিও ভালো, তোমার মতো
শিরীন ভানু মনে পড়ে বলেছিলাম
তোমায় দিয়ে কাজ হবেনা
তুমি যেন অচল টাকা
ভাঙাবাসন
মুলিবাঁশের ছিদ্রবেড়া
শ্যাওলাধরা পুকুর ঘাটে সকাল দুপুর দাঁড়িয়ে থেকে
যে মেয়েটি হাসতে থাকে, কামুক চোখে তীব্র হাসি
তুমি যেন তারই দোসর।
শিরীন ভানু বলেছিলাম
তুমি যেন অচল পয়সার ঝন্ঝনানি
সারাটাদিন বাজতে থাকো, আমায় ঘিরে
বাজতে থাকো কিন্তু কোন ফল হবেনা, ফল হবেনা
আমার কথাই ঠিক হয়েছে শিরীন ভানু, ঠিক হয়েছে
ফিরিয়ে নিলে যে মন ছিলো আমার ঘরে
অভিমানে কোন কিছু না বলে তাই
চলে গেলে, চলে গেলে, চলে গেলে
শিরীন ভানু আবার যদি হয়ই দেখা
আধো আলো-অন্ধকারে, চৌরাস্তার ওই ব্যস্ত মোড়ে
কথার ছলে জেনে নেবো:
কোথায় ছিলে (এই কতোদিন)?
ক্যামন আছো (আমায় ছেড়ে)?
আসবে কবে (আমার ঘরে)?
তোমার পোশাক
সবুজ ঝালর দেয়া কার্ডিগানে তোমাকে মানায় ভালো
তোমাকে মানায় ভালো নীল বকলেস আটা হাইহিলে।
অভিজাত বিপনী বিতানের
শো-রুম থেকে সাদা ফ্রেমে, চশমায় তোমাকে মানায় ভালো।
ঢেউ জাগা বুকের উত্থান থেকে সরে গেলে
অসতর্ক শাড়ির আঁচল
তোমাকে দেখায় যেন থিয়েটারে নায়িকার সাজে
পটিয়সী নঈমা আলমাস।
এরকম কোন সাজে, কোনটায় মানায় না তোমাকে
তোমাকে মানায় তেল চক্চকে সি’থিতে সিঁদুরে
খালি চোখে, হাতের শাঁখায়
তোমাকে মানায় এলোচুলে, লালপাড় ঢাকাই শাড়িতে।