প্রদীপ আচার্য এর কবিতাগুচ্ছ
প্রদীপ আচার্য এর কবিতাগুচ্ছ

আইসোলেশন কথকতা


ভোরে ঘুম ভাঙতেই

মোবাইলে সময় দেখে ভাবি এইসব অচেনা আলসেমি বাড়ুক অনন্তকালের জন্য...

স্ক্রিনে আঙুলের অভ্যস্থতায় চোখে পড়ে গভীর রাতে তোমার পাঠানো ইউটিউব লিংক

'এক কোটি বছর তোমাকে দেখি না' কবিতাটার আবৃত্তি

ওপরে লিখেছ, Miss you...

 

কতদিন হলো তোমায় দেখি না

একই শহরে তবু দু'জনে আজ কতটা দূরে

দিনে তুমি বলেছ কতবার, প্লিজ বের হও অন্তত একবারের জন্য, তোমাকে দেখেই চলে যাব

মিছেই বলেছি তোমায়, এমন অভিজ্ঞতার স্বাদ যদি আর না আসে জীবনে

 

ভাবিনি এমন সময়ের মুখোমুখি বো কখনো

তুমি এর নাম দিয়েছো 'যন্ত্রণা'  

আবৃত্তিটা শুনতে শুনতে শব্দগুলো হারিয়ে গেছে কখন 

বুকের ভেতর কেমন একটানা বৃষ্টি হচ্ছে হাহাকার তুলে

ঘন ছায়ায় লম্বা পথের শেষে দূরে

তুমি একা দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছো

পৃথিবীর বাকি সব শব্দেরা নির্বাসনে...

মিছে বলায় ফাঁক ছিল না তাই সত্যিটা জানা হয়নি তোমার 

আইসোলেশনে সে তোমাকে লিখছি, তোমার শূন্যতা অনুভব করছি খুব...

 

ফোন রেখে আবার ফিরে যাই তন্দ্রায়

জেগে থাকার যুদ্ধে মাতি 

অনাহুত অচেনা এক আমি সাথে...

 

 

লো ভিবাসি হই


চলো অভিবাসী হই  

চোখের ঘোরজাগা মুগ্ধতায়

হাতের নিবিড় আলিঙ্গনে

পায়ের শিহরিত বন্ধনে

সীমাবদ্ধ সামর্থ্যের দাঁড়িপাল্লায় গুন করছিলাম সময়ের জমাখরচ 

তবে কি দ্বিধায় ছিলাম হঠাৎ সম্পর্কহীন যাত্রায়

পৃথিবীর সব প্রান্তর আজ বেঁচে থাকার সংগ্রাম 

ক্লান্ত 

ক্ষয়ে যাওয়া পলেস্তারায় নিজেকে েখে সহসা চমকাই 

তবে কি মিও অভিবাসী 

অচেনা লোয় চির চেনা প্রান্তরে

তুমি অভয় দিলে 

মুগ্ধতা, আলিঙ্গন, আর বন্ধনের গল্পটা ঠিক তেমনই আছে 

নতুন আশ্রয়ের খোঁজে কেবল নিজেকে পাল্টাই  তোমারই নির্ভরতায় 

পৃথিবীও হাতে তুলে দিলআগামীর ভবিতব্য 

তখনও ছিলাম আমরা, এভাবেই উজ্জিবিত

হাতে হাত রেখে

প্রেরণার পথে...

ছায়ানারী


ঘরে থাকো, তাতেই বাঁচো, বাইরে গেলে জীবন বাজি 

কে শোনে কার কথা মিছে, বাইরে যেতে রাতে সাজি 

সাধ করে কি বাহির টানে! কোথা দেয়াল, কোথা বাড়ি

আমরা তো এক ক্যাটাগরি, অন্ধকারে ছায়া নারী

 

টিআইসি আর শহীদ মিনার, পার্কে ঘাসে, ইটের আড়াল 

ফল পট্টি টার্মিনালে, ব্যস্ত শহর স্তব্ধ সকাল 

পারমানেন্ট আর খুচরা টাকা হঠাৎ ভয়ে বলে, পালাই

দুচোখ ভরা মৃত্যু ভীতি! পুলিশ নয়, আজও খদ্দের চাই। 

 

সত্ত্বা চাই - বলছি না তো! জীবন দেখি লিপিস্টিকে 

অর্ধশতে আগুন নেভাই সান্ধ্য ঠোঁটে ডুবতে শিখে

কেবল শুনছি ঘরে থাক, দূরত্ব আর সামাজিকে 

অামার তো অপসরাদের ঘরের বুনন অন্ধ ফিকে। 

 

আজও তবু ভীরু মনে শান্ত মানুষ মাজার কাঁপায় 

সেই সুযোগে কাজল চোখে উঁকি মারি খুচরো টাকায় 

মাথায় ঘোরে বাছার কথা, জন্ম যে তার আকাশ নীড়ে 

জানেও না সে কে তার বাবা, খাবে কী লক ডাউন ঘিরে!

নতুন কোনো উহান


মস্তিস্কের প্রতি কোষে নির্ঘুম কনফারেন্স

ভেন্টিলেশন, কীট, পিপিআই, হ্যান্ডসেনিটাইজার আর সার্জিকেল মাস্ক....

প্রাণান্তকর সুরক্ষার নাম আজ আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টাইন, লক ডাউন

মানবতার মানচিত্রে জীবন সঁপে দিতে মিছিলের অগ্রভাগে নীল-সাদায় সারিবদ্ধ যোদ্ধারা...

ভূলন্ঠিত জনপদে দাফন কামনায় একমুঠো মাটির গ্লানিকর সন্ধান

অরণ্যের বিষণ্ন নীরবতায় বৃদ্ধ মায়ের নিথর দেহ

এম্বুলেন্সের গাঢ় নিরবতা

অসংক্রমিত ভয়াল ব্যাধি পরাজিত চিকিৎসাহীন মৃত্যর মিছিলে... 

অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ ইতিহাসপাঠ্য বে কোনো একদিন

মানুষের তিহাস স্মিত হাসিতে আঁকবে যৌথ জয়গান...

সময়ের ঘোর কেটে অামরাও ফিরে যাব যাপনের পুনরাবৃত্তিতে...

নারী শিশু ধর্ষণের নজীরবিহীন রেকর্ড 

ইষ্টার সানডের উপহার শতমানুষের মৃতদেহে

আমাজন বনের দাবানলে

অার চিরশত্রুতাকে হাসির আড়ালে ঢাকা জমকালো হ্যান্ডশেকে...

সাম্প্রদায়িক বিভাজনের জালে নাগরিকত্ব আবার করবে ঘর ছাড়ার আয়োজন...

পালা বদলের চমকে কোরাস গাইব সুদিনের, স্বরলিপি ছাড়া

ফিরে যাব সুরহীন জাতীয়তাবাদের দীক্ষায় সভ্যতার সংকটে...

আবার জন্মাবে নতুন কোন উহান

আত্মকথন চলবে বিরাম 

আবার হাত ধোয়া শিখব মরা, হৃৎপিণ্ডে মে যাবে পচাগলা পুঁজ

অপেক্ষা করব আরেকটি ধাক্কার...


 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান