বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় এর পাঁচটি কবিতা
কবি: বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
অনূদিত জলের নাব্যতা
দিগন্ত খুলে যাচ্ছে
তার চরে আগলে রেখেছে
কেউ নির্জনের চিঠি
হাতে পেলে তৃপ্তি হয় এই আয়োজন
তবু এক মায়াবী রহস্যে
সরে যায় ইপ্সিত দ্রাঘিমা ।
জল তো মেঘের গর্ভে জমে ওঠা বিনম্র আষাঢ়
আমি তার কান্না জানি
বিদ্যুৎবিভায় দেখতে পাই স্পষ্ট রেখাগুলি
বস্তুময় পৃথিবীতে বোধের বিন্যাসে
ভাষান্তর হতে থাকে অশ্রুত শব্দের কোলাহল
অনুদিত জলের নাব্যতা
কখন অক্ষর হয়ে আমাকে ভিজিয়ে দেয়
বাকমুক্তি ঘটে।
আসন্ন অপেক্ষার রঙে
ফাঁকা মাঠে কেউ পাহারা দিচ্ছে জন্মান্তর
আবার ফসল আসবে
শূন্য খেতে পরবের রঙ
ঝলসে দেবে চোখের ইশারা
মাটি শুয়ে আছে ওইখানে
রাত যেন গলে যাচ্ছে বিনিদ্র মুদ্রায়
কেবল কাকতাড়ুয়া তার অক্ষম চোখমুখ
বিপন্ন তাগদ নিয়ে পড়ে আছে ধ্বস্ত অবসাদে।
আসন্ন অপেক্ষার রঙ
কেমন ধারালো হয় কাস্তে জানে
গোপনে পরাগ জমে স্বপ্নের প্রভায়।
বিধিসম্মত নিরস্ত্রীকরণ
হাত থেকে খুলে রাখছি প্রতিবাদ
এবার যেমন বলবে মুখস্ত করব
সরীসৃপ চলার ভঙ্গিমা
এভাবেই একদিন শান্ত হয়ে উঠবে ঝড় দাবদাহ রাগী রাগী অশৃঙ্খল ক্রোধ
আনুগত্য পাঠশালা
আমাকে শেখাও অঙ্ক
হিসেবের কারচুপি ভেঙে
অমেরুদন্ডী হাওয়াগাড়ি তোমার সওয়ারি হওয়া এত কি কঠিনতম কাজ ?
সমস্ত বিধান আজ নখ ভেঙে দেয়
অস্ত্রহীন নম্রতায় ভোঁতা হয় বাঁচার বিন্যাস
ছক ও খাঁচার মধ্যে দাসত্ববিলাস
যাকে তুমি অভিমুখ বলো দ্রুতগতি ইপ্সিত সোপান।
ভয় ও আতঙ্কের গল্প
বিভ্রমের অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে তুলে আনছ সুখী গৃহকোণ
ভয় ও আতঙ্কের গল্পে একান্তে ঈশ্বর এসে আবাসন গড়ে
সামনে দুর্ভেদ্য দিন
সেখানে চিঠির বাক্সে কেউ
লুকিয়ে রাখছে আজ উপদ্রুত আলো
আড়াল বদল করে রিফু হচ্ছে অধিক ধোঁয়াটে সরলতা
বিজ্ঞাপিত সময়ের আচ্ছাদনে
মুখ লুকিয়ে আছে সুসভ্য সন্ত্রাসের বারান্দা ।
দুরারোগ্য অলীক ক্ষতস্থান
রক্ত চুইয়ে পড়ছে
অথচ কোন দাগ নেই
বদগন্ধ খুঁটে খাচ্ছে বিষাক্ত ঘৃণা ও আক্রোশ
ক্ষতস্থান নেই
তবু পুঁজ জমে উঠেছে বিদ্রুপে বেদনায়
উপশম তাড়িত ঘা সারানোর
কবচ ও মুদ্রদোষ দুলে উঠছে
একটি মাংসল রোববারের পাদদেশে ।
দুরারোগ্য অলীক ক্ষতস্থান ভেবে নিরাময় সরিয়ে নিচ্ছে ছদ্মবন্ধুর হাত
ক্রমশ কুয়াশা জমছে চোখে।