ভাস্কর চৌধুরী’র কবিতা
অবিনির্মান
মৈয়েত্রী আমাকে বলেছিল, ফের কবে আসবেন এখানে
রং না মেখেই আপনাকে মানায় বেশ
আবার আসুন, রইলো আমন্ত্রণ।
আমি পেছন ফিরি নি, পেছন ফেরা ঠিক নয়
দেখিনি আরেকবার, বলি একবার দেখা হয়েছিলো
অনেক দিন পর, এক চৈত্রের বিকেলে আবার ফিরলাম
দেখে চিনতে পারি নি , মৈয়ত্রী আমার পড়া বই
কিভাবে গল্প বদলে যায় বহমান সময়ের খাতে
আমি বুঝলাম, যে আমন্ত্রণ দিয়েছিলো সেই দিন
সেই ক্ষণ আর বেঁচে নেই, আজ নতুন বইয়ের মলাট
খুলে পড়তে হবে আমাকেই, আমিই নিমন্ত্রণ এবং
আমিই তার গ্রহীত পুরুষ। গর্হিত কিছু ঘটেনি তেমন
আগের মতোই ফের পড়লাম তাকে
সম্পূর্ন নতুন স্বাদ, গন্ধ ও আলাপ সংলাপ।
এইভাবে ভেবে নিলে আমাদের প্রতিটি মিলন চিরকাল
আলাদা স্বাদের হয়, প্রতি লোকমা ভাত, নতুন স্বাদের হয়।
আরেকটু আগে গেলে চিন্তার জগতে
আগের দেখা গোলাপের চে
সদ্য দেখা গোলাপের রূপ তাজা মনে হয়।
চিন্তাকে আরেকটু এগিয়ে নিলে
প্রতিটি মিলনই মৌলিক মনে হয়।
সংলাপ
বিথী: জলের মতো পদ্য লিখো, জল ছুঁলে না আজো
বিনয়:জলের উপর ভর রেখেছি, সেই কথাটি ভাবো
টের পাও তো , ক্যামন আমি করছি ধীরে জয়
তোমার উপর ভর রেখে আজ পদ্য লিখে যাই।
বিথী: আকাশ বাতাস এক করে দাও, পাহাড় নালা
সব
পাতাল থেকে চাঁদ তুলেছো, আকাশের উপর
সেই আকাশে সূর্য আছে, লক্ষটি জগৎ
তার ভেতরে কবে পেলে অখণ্ড আলোক?
বিনয়: এক কাজটি করার আগে চিন্তার জন্ম হয়
চৈতন্যের ভেতরে চেতনা নবনন্ম লয়
জন্ম থাকলে মৃত্যু আছে, জোস্না পড়ে মরে
আকাশ থেকে কান্না হয়ে শিশিরগুলো ঝরে।
বিথী: মৃত্যু থেকে কিসের জন্ম বলতে পারো কবি?
বিনয়: স্মৃতির জন্ম মৃত্যু থেকে ভেবে আমি লিখি
শিশির পড়ে, শিশির মরে, সবুজ ঘাসের মূলে
শিশির গুলো স্মৃতি বয়ে শুকায় শরীর পাড়ে।
বিথী: তোমার লিখা পদ্য গুলো আমার চোখে ভেজে
অশ্রুদানা কি করবে?
ঝরাও যখন নিজে ?
বিনয়: তোমার চোখের জলের ধারা চেতনার অশ্রু
নইলে বলো , অখণ্ড জল ভাঙতো কি আর মরু?
নদীও তো কতো নামে একটা নদী হয়
পদ্য লিখি অখণ্ডতার, খণ্ড হয়ে যায়।
দ্বৈত সূত্র
তোমার মাঝে অমর স্নান , তোমার কাছে অমরত্ব পাননিত্যদিন ঘটে না কখনো,
মাঝে মাঝে পাতালে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে
মাঝে মাঝে বিতৃষ্ণা জাগে, তাকালেই ঘৃণা জাগে
মাঘ মাসে অথবা চৈত্র দিনের হাহাকারে পুড়ি
যাচ্ছেতাই জীবনের সাতপাকে বাঁধা
কিছুই লাগে না ভালো
অথচ কোনোদিন চৈত্রের দুপুর বেলায় চন্দ্রায়
গাছের ছায়ায় বসে তোমাকে বড় প্রার্থিত মনে হয়।
এইসব ওলটপালট চিন্তার ভেতর আমি বন্ধন খুঁজি
কোথাও বন্ধন আছে ঠিক
ঘৃণা প্রেম ভয় সন্ত্রাস ও সাহসের সাথে
আবদ্ধ সূত্র রয়েছে
একটির উত্থান হলে আরেকটি চলমান হয়
যেখানে ভয় সেখানে সাহস দাঁড়ায়
যেখানে ঘৃণা সেখানে ভালোবাসা জেগে ওঠে
সন্ত্রাসের পর সব শান্ত হয়ে যায়।
এসব উপলব্ধি অথবা বস্তু জগতের সাথে
ভূ ও নভোমণ্ডলের সম্পর্ক নির্ণয় এভাবে সহজ হতে পারে।
এবং অবশেষে জেনে যাই
যুক্ত ছাড়া বিযুক্তি আসে না কখনো।
শুকনো পাতার মতো/ভাস্কর চৌধুরী
শুকনো পাতার মতো হওয়ায় হওয়ায়
একবার ঝরতেই হয়
একবার তুমি একবার আমি পাশাপাশি পড়ি
কুড়িয়ে পোড়ায় কেউ
শুকনো পাতার মতো চট ও প্লাস্টিক বস্তায়
একদিন আমাদের ঢুকে যেতে হয় জেনে
এ সংসারে আজো ভালবাসাবাসি
মান অভিমান সন্তানের গালে চুমু
নেই তো বিরাম
নিয়মিত স্রাব, ধারণ ও প্রসব
ক্লান্তিহীন বৃক্ষ চাষ, লতানো লাউ জাঙ্গিতে তোলা
মাড় ক্ষয়, বড় চোখ মোহময়
নিয়মিত দেখা হয়
একদিন পেশাব ও হাড়ের অসুখ বাড়ে
শরীর শুকায়
নুয়ে পরে গাছ
পাতা ঝরে যায়।
তন্দ্রা
তন্দ্রাকে কখনো ঘুম ভাবা ঠিক নয়
আমি তন্দ্রার ভেতর সুপ্ত ছিলাম বহুকাল
বহুকাল আমি তন্দ্রার ভেতর জেগে স্বপ্ন দেখেছি
বহুকাল চলে গেছে বিনা স্বপ্নে, হরিত বনের কাছে
বন ছায়ায় হেঁটেছি অনেক কাল কেবল তন্দ্রায়
সুপ্ত বাসনা গুলি খুব বেশি এ সময় জেগে ওঠে
জেগে ওঠে দুধভাত খাবার স্বপ্নটা আমাদের তন্দ্রায়-
তন্দ্রা কোনো এক বায়বীয় খাতে ঘুমের কাছে যায়
অথচ হঠাৎ জেগে উঠে ভাবি, ছিলাম তন্দ্রায়
ঘুম নয়, ঘুমের সুনিবিড় আচ্ছাদন নয়,
তন্দ্রা হচ্ছে ঘুমের বাইরে এক অতিপ্রাকৃত কাল
মৃত্যু নয় , ঘুম নয়, যদি তন্দ্রায় কাটে হাজার বছর
কেটে যেতে পারে, এ রকম অসুখ আছে,
আচ্ছন্নতা বিহ্বলতা, বেভুল কিছুটা ক্ষণ
ক্ষরণ হয় যখন---
হৃদয় থেকে আত্মার মাঝামাঝি হারানো সময়
জলের শব্দ , শিশিরের শব্দের ভেতর খেলা করে
হিম নীরবতা, জেগে ওঠে দেখি, পাশে পড়ে আছে
আস্ত রাখা সিগারেটের পুরো ছাই, পোড়া ছাই
বুঝে উঠি, চলে গেছে এর মাঝে কিছুটা সময়
সময় পুড়ে ছাই হয়ে, পাশে পড়ে আছে,
তাকে আমি এড়াতে পারিনি, জীবনে রাখতে পারিনি
ঘুমের মাঝে সময় গেলে, সেটি জীবনের আয়ুর চে
খুব বেশি হতে পারে না কখনো, তার ভেতরেই বাস
তন্দ্রা থেকে জেগে উঠে ভাবি, এতোকাল কোথায়
ছিলাম?
মৃত্যু নয় , ঘুম নয়, জাগরণের ভেতরে থাকি
মাখি কিছুকাল আচ্ছন্নতা, আচ্ছন্নতা ভালো লাগে
জেগে উঠে ভালো লাগে, ঘুমের অধিক স্বাদু ঘুম
ছিলাম আমি অবচেতন কালের কোলে, পুড়ে গেছে
সিগারেট, সিগারেট পোড়া মানে, কিছুটা সময় পোড়া
ঘুমহীন হাজার বছরের চে
হাজার বছর মনে হয় কেটে গেছে
আমাদের কেবলি সুনিবিড় তন্দ্রায় ।