মানিক বৈরাগীর কবিতা

ফিরে এসো বৃষ্টি
ক
বৃষ্টি তুমি আকাশ ভেঙে ঝমঝমিয়ে নেমে এসো
শামুক যেমন তোমার জন্যে অধীর অপেক্ষায়
আমিও মরুর মতো তৃষিত
তোমার ছোঁয়ায় আমি ঘুমাবো।
গড়গড় শব্দে ফ্যান চলছে, ফ্যানের বাতাস মরুর লু হাওয়া
গায়ে লাগলেই ফোস্কা,
বৃষ্টি তুমি আকাশ ভেঙে
অন্তত এবার নেমে এসো।
সারারাত ব্যালকনিতে বসে
চারদিক সুনশান
কোনো কোনো জানালার পর্দা গলে আলো আসে
সব বিল্ডিং শীতাতপ যন্ত্রের শব্দ বিরক্তি আনে
অথচ উত্তরের পুকুরপাড়ের নারকেল বাগানের
পাতায় কোন বাতাসের আলিঙ্গন নেই স্থির ঝুলে আছে
একদা বৃষ্টির আগে বাতাসি এসে পরশ বুলাতো পশমে
ল্যাম্পপোস্টে আলো এখনও জ্বলছে
বেওয়ারিশ কুকুরগুলো আমার ঘ্রাণ পেয়ে ঘেউঘেউ করছে
আমি তাদের বিস্কুট ছুড়ে দিই, ওরা ঘোঁত ঘোঁত করে আমোদে খায়
আর খুশিতে হাসে
কুকুরগুলো আমাকে বড্ডো ভালোবাসে
প্রকৃতির কী অদ্ভুত নিয়ম
তারা আমার ঘ্রাণ জানে,
সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হলে আমার পেছন পেছন হাঁটে,
ওরা আমার বাসায় ফেরার অপেক্ষায় থাকে
রিকশা থেকে নেমে আমার টলে যাওয়া পায়ের পাশে পাশে হাঁটে,
দিনভর পরিশ্রমক্লান্ত বউ বেঘোরে ঘুমায়,
আমি ব্যালকনিতে বসে গুবাক তরুর বিনুনি গুনি,
হঠাৎ পাশের বাসা থেকে মিহি গোঙানোর শব্দ ভেসে আসে
কোনো কোনো বাসায় জলপড়ার শব্দের সাথে খিলখিলিয়ে হাসির কলরোল শোনা যায়।
বৃষ্টিহীন ছাদের গরমে রাত কাটে ব্যালকনিতে বসে,
বৃষ্টি তুমি তাড়াতাড়ি এসো, আমি ঘুমাবো।
খ
সখি চেয়েছিলাম বৃষ্টির তান্ডব হোক
শিবশিশিতে ঢাকা ছিলো তরল অনল
পাখনা খোলে দেখি মৃত ভিসুভিয়াস
শিল্পকলার রুমঝুম ধ্বনির অনুরনণ ঝড়
দ্রাঘিমা রেখায় বায়ু প্রশ্বাসে কামধেনু স্বরধ্বনি
মধু পুর্ণিমা তিথিতেও রক্তিম জনাবা স্রোত
অপার প্রতিক্ষার স্বাক্ষী থাকুক জ্যোৎস্না -তারা কাল মহাকাল।
গ
নলবনের শাপলা ঝিলের পদ্মাবতী
তোর সাথে সহমর্মিতা অকৃত্রিম সখ্যতা
তোই বুঝিস পাখির ভাষা তোর বুকেতে
অনেক আশা, মৌসুমি ঝড় আসছে খবর
এনেছে পিপিলিকা দল নেতৃত্বে রানিমাতা
আমার এখন শারদ শাদা কেশ উড়ো উড়ো
গুড়িগুড়ি বৃষ্টির শাদা মেঘ ঝরে হাওর হাওয়ায়
দুধঘাসে লিক লিকে চিনাজোক লেপ্টে আছে
পদ্মীনি ঠ্যাঙ্গএ, আলতা রাঙা কোমল কমল রান।
অগো
তোমার হাতে মুক্ত করো রক্তচোষা জলৌকা।
খিল খিলিয়ে হাসছে আশ্বিনের ঝিলের জল
হরিফুলের শোভা দেখ , ঘুরে ঘুরে মধুকর
উড়ছে শুধু কমল রেনুর আশায়
কিসের টানে ঘুরিস ক্যানে পথে ঘাটে
কার সাথে কিসের আশায় ঘুরিস পিছু পিছু
কানু বাউল।