মেয়েটি । আবু সাঈদ তুলু 
মেয়েটি  । আবু সাঈদ তুলু 

মেয়েটি মনের দুঃখে জানালার বাইরে তাকালো। দূর নীলিমায় যেন বিষাদের সুর বাজে। হৃদয় তন্ত্রী কেন এমন করে কাঁদে। কিসের কষ্ট আমার। কিবা কিসের সুখ। হাসে না মেয়েটি। শুধু জানালার বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে অজানা এক কষ্টে ভাসে থাকে। দূরে দেখা যায় এক অনাগত লোকের পদধ্বনি। কে যেন হেঁটে যায় দূরে পথের গায়। মেয়েটি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। আর ভাবতে থাকে জীবনটা যদি এমন নীলিমার স্তব্ধ বাতাসের মতো হতো। আর আমি বেঁচে থাকতাম হারানোর বেদনাহীনতায়। ব্যর্থতার গ্লানি শূন্য এক নিরাকপড়া সন্ধ্যার তুমুল বাতাসে।

হঠা ঘরে ভেতর থেকে ডাক আসে মেয়েটি। আচমকা হরিণীর মতো চমকিত বিহ্বল হয়ে উঠে। পিছনে ফিরে তাকায়। কেউ নেই। তবে কোথা থেকে ডাক আসছে? ঘরের ভেতর থেকে। না। তা তো সম্ভব নয়। কারণ বাসায় তো কেউ নেই। শুধু একা সেই আছে বাসায়। তাহলে ডাকল্ োকে?

পিছন ঘরে ঘরের ভেতরে চলে আসে। কিন্তু ঘরের ভেতরে এসেও সে কাউকে দেখতে পায় না। শোনশান শূন্য নিস্তব্ধতা। ঘরে কেউ নেই। তাহলে কে ডাকলো। নাকি নিজেই ভুল শুনেছে। তাহলে এমনটা হলো কেন?

মেয়েটি আবার গিয়ে দাঁড়ায় বারান্দায়। সে বারান্দার গ্রিল ধরে দিগন্তহীন আকাশের পানে তাকিয়ে আবার ভাবতে থাকে। কী এক দুঃখ গ্রাস করে থাকে তাকে। কীসের সে দুঃখ। মেয়েটি সহায় সম্বলহীন। এখন কোনো কারণ খোঁজে পায় না। কিন্তু কী একটা গভীর দুঃখ ভর করে থাকে তাকে। এমন সময় আবার ডাক শুনতে পায়। প্রথমে অবাক হয়। ঘরে কেউ নেই অথচ কে ডাকে। আবার ভাবতে থাকে। কে ডাকে কে ডাকে। এবার চোখটা ভালো করে মুছে নেয়। বাপ মা মরা অনাথ মেয়ে সে। তাকে কত কষ্টই সহ্য করে চলতে হয়। বারান্দা থেকে ঘরের ভেতরে আসে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে। কোনো ভূত টুত নয় তো। হঠা দূরে রান্নাঘরের জানালার পাশে কী একটা ছায়া দেখতে পায়। মেয়েটি এগিয়ে যায় না। বরং গেটদরজার দিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটি তখন বুঝতে পারে। নিশ্চয় তার সাহেব বাড়ি এসেছে। তবে অসময়ে কেন? হয়ত সময় তার স্ত্রী বাড়িতে থাকে না। অফিসে যায় সেজন্যই। মেয়েটি দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যায়। জানালার পাশের গাছের পাতাগুলো অসহায়ের মতো নিয়মের বাতাসে তুলতে থাকে। পাতাগুলোর করার কিছু নেই। সমাজের বাতাসে দোলা পাতাগুলো তো কখনো বৃক্ষ হতে পারে না। আর সমাজের বৃক্ষরা শুধু দাঁড়িয়েই থাকে। মেয়েটি দরজা খোলতেই দখিনা বাতাসের ঝাপটা চোখে মুখে লাগে। সামনে দেখে দিগন্ত বিস্তৃত ঘন ছায়া। নিজের মনের ভেতরের শক্তি খুঁজতে থাকে। খুঁজে কী পায় শক্তি।

 



সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান